তিস্তা ও ধরলার পানি বিপদসীমার উপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

তিস্তা ও ধরলার পানি বিপদসীমার উপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

রেজাউল করিম মানিক, রংপুর

ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলার কুলাঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  

তিস্তা ও ধরলার পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের নদী অববাহিকার নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নদী অববাহিকার অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন।

গত ২৪ ঘন্টায় জেলার আদিতমারী, হাতিবান্ধা ও সদরের ৮টি ইউনিয়নের ৪৭টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে জেলার বেশ কয়েকটি স্থাপনা।  

পানি বাড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিস্তা ধরলা নদীর মাঝখানে জেগে উঠা ৬৩ চরের মানুষ। বন্যার পানিতে  চতুর্থ বারের মতো তলিয়ে গেছে রোপন করা আমনের ক্ষেত।

ডুবে গেছে  শীতকালীন আগাম শাকসবজির ক্ষেতও।  

লালমনিরহাট কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরের প্রায় ১২'শ একর জমির রোপা আমন ক্ষেত ও ৪'শ একর জমির বিভিন্ন সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

সদরের কুলাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী জানান, ধরলার পানি ব্যাপকহারে বাড়তে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। গত ২৪ ঘন্টায় ধরলার ভাঙ্গনে ২৩টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করায় নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়,  গত ৭ দিন থেকে তিস্তার পানি উঠানামা করছে। আজ সকালে পানি বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা- ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ধরলা বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ও তিস্তা ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় পানি আরো বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশংকায় তিস্তা ধরলা অববাহিকা এলাকার সবাইকে সর্তক রাখা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তিস্তায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন পাউবোর এই কর্মকর্তা।


আরও পড়ুন: হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজত নেতা মাঈনুদ্দিন রুহীকে গণপিটুনি


তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা ধরলার ৬৩ চরে আবারও বন্যা আতঙ্কে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। গত ২ মাস আগে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ঘরে ফিরে ছিলো চরের মানুষজন। কিন্তু পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চরের মানুষজন চরম বিপাকে পড়েছে।


আরও পড়ুন: সৌদি আরব যেতে বাংলাদেশিদের যেসব শর্ত মানতে হবে


তিস্তা বিধৌত রাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন জানান, তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে, পানি বাড়ার সাথে সাথে তিস্তায় শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। বৃহস্পতিবার নতুন করে তার ইউনিয়নের ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে আমন ক্ষেতসহ শাক সবজি ক্ষেত। চরম বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, সকাল থেকে ধরলা ও তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর প্রবাহিত দিয়ে হচ্ছে।   ভারত গজলডোবা ব্যারেজের সব গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তায় পানি বাড়ছে। আর সে জন্যই ধরলা তিস্তা অববাহিকার চরবেষ্টিত চেয়ারম্যানদের সর্তক থাকতে বলা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

নিউজ টোয়েন্টিফোর / সুরুজ আহমেদ