যেভাবে নিজের ব্যক্তিত্ব ধরে রাখবেন

যেভাবে নিজের ব্যক্তিত্ব ধরে রাখবেন

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

ব্যক্তিত্ব গঠনে মানুষকে কিছু চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন করতে হয়ে। সেগুলো অর্জনে অক্ষম হলে মানুষ ব্যক্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। তাই ব্যক্তিত্ব গঠনে আমাদের উচিত সেই চারিত্রিক গুণাবলিগুলো অর্জন করা। নিম্নে কোরআন হাদিসের আলোকে এমন কিছু চারিত্রিক গুণ তুলে ধরা হলো—

আত্মসম্মান

আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ মুমিনের ভূষণ।

মুমিন যেকোনো কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারে না। যেকোনো কাজকে সমর্থন করতে পারে না। কারণ আত্মসম্মানবোধ তাদের সব কাজ করতে দেয় না। তবে এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে যে আত্মসম্মানবোধ আর আত্ম-অহমিকা এক জিনিস নয়।
মহান আল্লাহ আত্মসম্মানবোধ আছে এমন মানুষকে পছন্দ করেন। কিন্তু যাদের মধ্যে আত্ম-অহমিকা আছে তাদের ঘৃণা করেন। আবার যারা তথাকথিত স্মার্টনেসের নামে নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেন, তাদেরও মহান আল্লাহ ঘৃণা করেন।   মুগিরা (রা.) বলেন, সাদ ইবনে উবাদাহ (রা.) বলেছেন, যদি আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে কোনো পরপুরুষকে দেখি তবে আমি তাকে তরবারির ধারালো দিক দিয়ে আঘাত করব। তাঁর এ উক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পৌঁছল। তখন তিনি বলেন, তোমরা কি সাদের আত্মমর্যাদাবোধে আশ্চর্য হচ্ছ? আমি ওর থেকে অধিক আত্মসম্মানী। আর আল্লাহ আমার থেকেও অধিক আত্মসম্মানের অধিকারী। (বুখারি, হাদিস : ৬৮৪৬)

বর্তমান সময়ে এই হাদিসের বার্তা প্রতিটি মানুষকে পৌঁছে দেওয়া উচিত। কারণ বর্তমান সমাজ রাসুল (সা.)-এর এই নির্দেশনাটি ভুলে যেতে বসেছে। যেগুলো একজন মুমিনের লজ্জাকর বিষয় ছিল, সেগুলো নিয়ে মানুষ গর্ব করতে শুরু করেছে। হেদায়েতের পথ ভুলে গিয়ে মানুষ ইবলিশ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে।

আরও পড়ুন: 


সূরা আল-কাউসারের ফজিলত


আত্মজ্ঞান

মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের জ্ঞানার্জনের প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। মুমিনের আলোর মিনার পবিত্র কোরআনের প্রথম বার্তা ছিল, ‘ইকরা’। পড়ো! শুধু তা-ই নয়, পবিত্র কোরআনে তিনি জ্ঞানীদের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। আর ফেরেশতারা এবং জ্ঞানীরাও, আল্লাহ ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই, (তিনি) পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই কেবল তাকে ভয় করে। ’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৮)

আল্লাহর শক্তিমত্তা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিজ্ঞানময়তা, ক্রোধ, পরাক্রম, সার্বভৌম কর্তৃত্ব-ক্ষমতা ও অন্যান্য গুণাবলি সম্পর্কে যে ব্যক্তি যত বেশি জানবে সে তত বেশি তাঁর নাফরমানি করতে ভয় পাবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির ব্যাপারে যত বেশি অজ্ঞ হবে সে তাঁর ব্যাপারে তত বেশি নির্ভীক হবে। এ কারণেই হয়তো আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বিনের জ্ঞান দান করেন। ’ (বুখারি,  হাদিস : ৭১)

তাই আদর্শ ব্যক্তিত্ব গঠনে জ্ঞানার্জন অপরিহার্য। যে জ্ঞান মানুষকে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন ও তাকওয়া অবলম্বনে সহযোগিতা করে, যে জ্ঞান মানুষকে কুফর শিরিকের ঘোর অন্ধকার থেকে ঈমানের আলোর পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: 


সূরা মূলক পাঠের ফজিলত


 

রাগ নিয়ন্ত্রণ

আমাদের সমাজে একটি প্রবাদ বাক্য আছে, ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। ’ রাগের কারণে মানুষকে বহু জায়গায় অপমান-অপদস্থ হতে হয়, অনেক কিছু হারাতে হয়। রাগ সংবরণে ব্যর্থ হলে শুধু দুনিয়াতেই নয়, আখিরাতেও অনেক কিছু হারাতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার রাগ প্রয়োগের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সংযত থাকে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সকল সৃষ্টিকুলের মধ্য থেকে ডেকে নেবেন এবং তাকে হুরদের মধ্য হতে তার পছন্দমতো যেকোনো একজনকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দেবেন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭৭)

এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, যারা দুনিয়ায় রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, তারা এই মহা নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হবে। ক্রোধের আগুনে অন্যকে জ্বালিয়ে দেওয়াই বীরত্ব নয়। এতে মানুষের সম্মান বাড়ে না। বরং ক্রোধ ও প্রতিশোধপরায়ণতা মানুষকে হালকা করে দেয়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, বরং প্রকৃত বীর হলো সেই ব্যক্তি যে রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭৯)

রাগ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কী করতে হবে, তাও শিখিয়ে দিয়েছেন প্রিয় নবী (সা.)। তিনি বলেছেন, তোমাদের কারো যদি দাঁড়ানো অবস্থায় রাগের উদ্রেক হয় তাহলে সে যেন বসে পড়ে। এতে যদি তার রাগ দূর হয় তো ভালো, অন্যথায় সে যেন শুয়ে পড়ে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৮২)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে উপরোক্ত গুণগুলো অর্জনের তাওফিক দান করুন।

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল