জিন্নাহ হাউজকে জিন্নাহ মিউজিয়াম বানানো হোক

জিন্নাহ হাউজকে জিন্নাহ মিউজিয়াম বানানো হোক

তসলিমা নাসরিন

জিন্নাহ বিয়ে করেছিলেন একজন অমুসলিমকে। জিন্নাহর একমাত্র সন্তান দিনাও বিয়ে করেছিলেন এক অমুসলিমকে। দিনা তো ভারত ছেড়ে  পাকিস্তানেই যাননি। জিন্নাহর নাতি নাতনি কেউই মুসলমান নয়, নাতি নাতনিদের বংশধরও কেউ মুসলমান নয়।

জিন্নাহ নামাজ রোজা করতেন না, সম্ভবত নাস্তিক ছিলেন, অথচ ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করেছিলেন এত বড় দেশটাকে।

অবশ্য একা তো ভাগ করা যায় না, নেহরুর ষোলো আনা না হলেও এগারো আনা সম্মতি ছিল। জিন্নাহ যদি দেখতে পেতেন কী হাল হয়েছে তাঁর বানানো দেশটার, নিশ্চয়ই গভীর অনুশোচনা করতেন।  

দেশ ভাগের পর তো ঠিকই বুঝেছিলেন দ্বিজাতিতত্ত্ব  ভুল তত্ত্ব,  তাই এর বিপক্ষে জনতাকে দাঁড়াতে বলেছিলেন।

পাকিস্তানের হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাইকে এক জাতি হিসেবে  এক দেশে  শান্তি,  সম্প্রীতি,  সৌহার্দ বজায় রেখে    বাস করার আহবান জানিয়েছিলেন।  

আরও পড়ুন:


ধর্ম নিয়ে যা বললেন তসলিমা নাসরিন


জিন্নাহ যদি দেখতে পেতেন, কী দেখতেন  আজ?দেশ ফের ভাগ হয়েছে দেখতেন। ধর্মবাদ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদে ছেয়ে গেছে দেশের দুটো অংশ দেখতেন। অনুশোচনা  তো করতেনই।  

বোম্বের মালাবার হিলে তাঁর  কী  সুন্দর বাড়িটিই না তিনি ছেড়ে গিয়েছিলেন!  বাড়িটি  তো তাঁর একমাত্র উত্তরাধিকারী দিনাও নেননি। 'জিন্নাহ হাউজ'কে 'জিন্নাহ মিউজিয়াম' বানানো  যায় না? 

 যে মিউজিয়ামে থাকবে দেশভাগের ভুল সিদ্ধান্তের নথিপত্র, ধর্মান্ধতা থেকে বাঁচাবার বদলে দূরদৃষ্টিহীন রাজনীতিকরা উপমহাদেশকে ধর্মান্ধতার নরককুণ্ড বানাবার যে  নীল নকশা এঁকেছিলেন সেই নীল নকশা, হিন্দু মুসলমান পরস্পরকে যেন চিরকালীন শত্রু ভাবতে পারে সেই বন্দোবস্তটি  যে  মস্তিস্ক থেকে এসেছিল সেই মস্তিস্কটি।  

ভুক্তভোগীরা দেখতে যাব সেসব! শুনেছিলাম ইতিহাস থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়। শিক্ষা কি আদৌ নেয়? নাকি একই ভুল বারবার করে!

সম্পর্কিত খবর