এবার দেশের ভেতরই চ্যালেঞ্জের মুখে সু চি

এবার দেশের ভেতরই চ্যালেঞ্জের মুখে সু চি

অনলাইন ডেস্ক

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। দেশটির পুনর্জাগরণের নেতা তিনি। সেনাবাহিনী যখন তাঁকে গৃহবন্দি করে, তাঁর মুক্তির দাবিতে জেল খাটেন অনেকে। শুধু জেল খাটাই নয় অনেকে তার জন্য প্রাণও দিয়েছেন।

পেয়েছিলেন নোবেল পুরস্কারও।  

কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার ভূমিকা বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে। আর তাইতো অং সান সু চি এখন এক বিতর্কিত নাম।  

রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার ভূমিকায় বিশ্ব নেতাদের অনেকেই কড়া সমালোচনা করেছেন।

  নরওয়ের নোবেল কমিটির কাছে অনেকেই দাবি করেন তার নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার। এসব এখন পুরনো ঘটনা। নতুন খবর হচ্ছে এবার তিনি দেশের ভেতরেই পড়তে যাচ্ছেন চ্যালেঞ্জের মুখে।

অবশ্য তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে যিনি আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনিও একজন নারী। স্বাধীনচেতা, স্পষ্টবাদিতার তকমায় ইতোমধ্যে তিনিও ‘লেডি’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। থেট থেট খিন- মিয়ানমার রাজনীতির দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেত্রী সু চি’র একমাত্র চক্ষুশূল। দেশটির নির্বাচনী ইতিহাসেও সু চি’র বিরুদ্ধে প্রথম কোনও নারী প্রার্থী তিনি।

news24bd.tv


আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে ৯০টি তিমির মৃত্যু


এক সময় সু চি’র দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনএলডি’র এমপি ছিলেন খিন। ৫৩ বছর বয়সী এ নারীকে গত বছর দল থেকে বরখাস্ত করেন সু চি। সেই থেকেই ক্ষোভ। তারপরই এনএলডির বিরুদ্ধে লড়তে পিপলস পাইওনিয়ার পার্টি (পিপিপি) গড়ে তোলেন তিনি। মাত্র এক বছরেই বেশ শক্তপোক্তভাবেই জেঁকে বসেছে তার দল। নবনির্মিত এই দল নিয়েই নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে সু চি’র মতো লৌহমানবীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামছেন থেট থেট খিন। প্রথমবারেই ২৪৮ আসনে প্রার্থী দিচ্ছে পিপিপি।

সু চি’র দলকে ‘নৈরাজ্যকর ও স্বৈরাচারী’ বলে তুলোধুনা করা খিন অবশ্য সু চির বিরুদ্ধে কঠোর হলেও মিয়ানমারের প্রতাপশালী সেনাবাহিনীর বিষয়ে নরম। তার দাবি- গণহত্যায় অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়, তাদের সঙ্গেই কাজ করে যেতে হবে।

৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মিয়ানমারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রায় অর্ধশতাব্দীর সামরিক শাসনের পর গণতন্ত্রে ফেরা মিয়ানমারে এটি দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচন। এতে সু চি’র দল এনএলডিকেই জনগণ আবার ক্ষমতায় আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।  

তবে সু চির দল থেকে বহিষ্কৃত খিন আশা করছেন তার দল ভালো কিছু করে দেখাতে পারবে। থেট থেট খিনের অনেক পরিচয় আছে। সু চির দলের পক্ষে ২০১৫ সালে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগে তিনি ছাত্র অধিকারকর্মী ছিলেন। তার পরে তিনি ডাক্তার হন এবং ব্যবসায় মনোযোগ দেন। এমনকি জুয়েলারি ব্যবসায় ভালো করায় জুয়েলারি ম্যাগনেট হিসেবে তার পরিচিতি তৈরি হয়। জাত ব্যবসায়ী হিসেবে সুখ্যাত খিনের রাজনৈতিক বিচক্ষণতাও চমক সৃষ্টি করছে মিয়ানমারে। মিয়ানমারের মতো কট্টর বৌদ্ধ দেশে প্রথম প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়া সমকামী প্রার্থী করছে পিপিপি। সু চি যেখানে মুসলিম নেতাদের প্রার্থী করতে দ্বিধায়, সেখানে মাঠে নেমেই একজন মুসলিমকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন খিন। এসব তার বৈচিত্র্যের প্রমাণ বলে প্রচার করা হচ্ছে।

খিনের সব কিছুই ভালোভাবে চলছিল। কিন্তু হঠাৎ তিনি সু চি’র সুনজর থেকে ছিটকে পড়েন এবং তারপরই এনএলডির বিরোধিতার পথ বেছে নেন। তার মতে, দেশের সমস্যার কোনও সমাধান আর এনএলডির হাতে নেই। দলটিকে স্বৈরাচারী তকমা দিয়ে খিন বলেন ‘সেখানে এক ব্যক্তি সব কিছুর সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। ’


আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে ৪ মাত্রার সতর্কতা, বার-রেস্তোরাঁ বন্ধ রাত ১০টায়


মজার বিষয় হচ্ছে, এনএলডির কিছু করার নেই বললেও দেশের সমস্যার সমাধানে সেনাবাহিনীর অনেক কিছু করার আছে বলে মনে করেন খিন। রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীকে সমস্যা সমাধানের একটি অংশ বলে মনে করেন তিনি।  

সেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি বাবা ও মা লড়াই করেন তবে সন্তান জানে না তার কী করা উচিত।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে মোট সংসদীয় আসনের এক-চতুর্থাংশ ও তিন প্রধান মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। ফলে সু চি’সহ কেউই দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার সাহস পায় না। এর ব্যতিক্রম নয় খিনের পিপিপিও।

থেট থেট খিন দাবি করেন যে তার দল মধ্যপন্থী। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায় তিনি এবং তার দলও চরম কট্টরপন্থী। কট্টরপন্থী বৌদ্ধ মঙ্ক বা ধর্ম প্রচারকদের সঙ্গে দলটির যোগসাজশ রয়েছে। রোহিঙ্গা জাতিগত নিধন ইস্যুতে জাতিসংঘে গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিচারের মুখোমুখি হওয়াকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেন খিন। তার মতে, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা ইস্যুতে কেবল ‘মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ দেখিয়েছে। কিন্তু সেখানে ‘জাতিগত নিধন বা গণহত্যার’ মতো ঘটনা ঘটেনি। সূত্র: নিউ স্ট্রেইট টাইমস, মালয় টাইমস, ব্যাংকক পোস্ট।

news24bd.tv নাজিম

এই রকম আরও টপিক