সময় এখন নারীর এগিয়ে যাওয়ার
নারী দিবসের গোলটেবিলে বক্তারা

সময় এখন নারীর এগিয়ে যাওয়ার

অনলাইন প্রতিবেদক

কেউ বললেন, 'সময় সব সময়ই নারীর ছিলো। কিন্তু নারী তার সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। ' কেউ বললেন, 'সমাজে এখনো নানাক্ষেত্রে বঞ্চিত নারী। তার চলার পথ কাঁটা বিছানো।

' কারো কথায়- 'অনেক পরিবারেই এখনো শিশু ও নারী নিরাপদ নয়। নিজ ঘরেই তাকে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ' আবার কেউ বললেন, 'আমি নারীবাদ-পুরুষবাদে বিশ্বাসী নই। বাস্তবতা হল নারী ছাড়া যেমন পুরুষ চলতে পারে না তেমনি পুরুষ ছাড়াও নারী চলতে পারে না।
নারী-পুরুষ সমানতালে এগিয়ে গেলেই এ সমাজ এগিয়ে যাবে। ' তবে একটা বিষয়ে সবার কথা ছিল একই-  এই সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে নারী-পুরুষ উভয়কেই দরকার। আর সবাই মিলে চেষ্টা করলেই পিছিয়ে থাকা নারীগোষ্ঠীকে এগিয়ে আনা সম্ভব।  এজন্য নারী-পুরুষ উভয়কেই সচেতন হতে হবে। যার যার ক্ষেত্র থেকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে একদিন হয়ত আর নারী দিবস পালন করতে হবে না। তখন মানুষ দিবস পালন হবে।
 
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে 'সময় এখন নারীর' শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এভাবেই আলোচনায় মেতে ওঠেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল নারীরা। ছিলেন শিক্ষক থেকে শুরু করে আলোকচিত্রী, গণমাধ্যমকর্মী, ডাক্তার, ফুটবলার, ক্রিকেটার, ছিলেন নারী রাজনীতিবিদও। 'সময়টা এখন নারীর, নাকি নারীর নয়' বিষয়টি নিয়ে নিজস্ব প্রেক্ষাপট থেকে তারা বক্তব্য দিয়েছেন। বুধবার সকালে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স কক্ষে ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে সঞ্চালনা করেন লেখক ও সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নী। ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টোয়েন্টিফোর ওই বৈঠকের আয়োজন করে।

এতে কবি শামীম আজাদ বলেন, সময় সব সময়ই নারীর ছিলো। কিন্তু নারী তার সদ্ব্যবহার করতে পারে নাই। প্রচলিত একটা কথা আছে- 'তোর বাপেরও সাধ্য নাই। ' কিন্তু নারীর সাধ্য আছে। মায়ের সাধ্য আছে। যে মা আমাকে কোলে নিয়েছে, সে আমার ভাইকেও কোলে নিয়েছে। মানুষের ভেতরের প্রতিটি কণায় তার মাকে দেখা যায়। একজন পুত্রও যখন তার আয়নায় চোখ মেলে তখন তার মাকেই দেখে। এই যে মায়ের এই স্থান তা কৌশলগত কারণে একসময় বেহাত হয়ে যায়। আমরা তার পুনরুদ্ধার করতে চাইছি না। কারণ সমাজ বিবর্তনের সাথে সাথে সেই বেশি উত্তম মানুষ যে পরিবর্তনকে স্বীকার করে এগিয়ে যায়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস এলে আমরা বুঝি আমরা নারী। আমাদের শনাক্ত করা হয় আমাদের গুণে। আমি আমার জীবনে কোন শূন্যস্থান রাখিনি। সেটা ন্যায়ের ভিত্তিতে।  হায়রে মানুষ, হায়রে মানুষের বীজ, তুমি কেন মানুষ হলে না। এই মন্ত্র প্রতিটি মাকে দিয়ে দিতে হবে।

সংসদ সদস্য নূরজাহান বেগম মুক্তা বলেন, আগে একটা প্রবাদ ছিল ভাগ্যবানের বউ মরে, অভাগার মরে গরু। উপমহাদেশে এটিই ছিল নারীদের অবস্থা। আগে অনেকের স্ত্রী মারা গেলে ওই বাড়িতে একটা নীরব আনন্দ বয়ে যেত। যে আবার বিয়ে করে যৌতুক নিবে, বাড়তি অর্থ সমাগম হবে। সেই জায়গায় পরিবর্তন এসেছে। নারী নির্যাতন আইন হয়েছে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে। এখন পুরুষ নির্যাতন আইনের কথা অনেককেই বলতে শুনি। আমি গবেষণা করে দেখেছি যে, একজন বাবা তার মেয়েকে বিয়ে দিবেন অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থাতে। তখন মা বাধা দিচ্ছে যে এখন মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যাবে না। এটাতে ওই পুরুষ মনে করছেন তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। গণমাধ্যমকেও নারীদের এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে। নারীরা রাজনীতিতে এগিয়ে আসছে। কিন্তু নারীরা কি এলাকায় গিয়ে স্বাধীনভাবে গণসংযোগ মিটিং, মিছিল করতে পারে। সে যেমনটা চায় সেভাবে এগোতে পারে? তাদের এগিয়ে যেতে বাধার সৃষ্টি করা হয়। কারণ সে নারী। পুরুষরা ভাবে আমরা থাকতে নারীকে কেন মিছিলে নেতৃত্ব দিতে হবে। নারীরা কীভাবে কাজ করছে এলাকায়, সংসদে তাদের পারফরম্যান্স জরিপ করতে হবে। নারীরা কতটুকু কাজ করতে পারছে সেটা যাচাই-বাছাই করতে হবে।  বর্তমানে সংসদে ৭২ জন নারী আছেন। সংরক্ষিত আসনে ৫০, আর ২২ জন সরাসরি আসনে। প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, বিরোধী দলীয় নেত্রী, সংসদ উপনেতাও নারী। সময় আগেও নারীর ছিল কিন্তু সেই সময়ের স্রোতে নারীরা ভাসতে পারেনি। কিন্তু তাতে এখন পরিবর্তন এসেছে। নারীর ক্ষমতায়নকে মানুষ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে। তবে গণমাধ্যম কতটা নারীবান্ধব সেটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। রাজনীতিবিদ হিসেবে মিছিল-মিটিং করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। সেটি গণমাধ্যমে আসে না।

সাবেক এমপি নিলুফার চৌধুরী মণি বলেন, বাবার অনুপ্রেরণা না থাকলে আপনাদের সামনে আসতে পারতাম না। একজন নারী হওয়ার জন্যই অনেক সময় প্রতিযোগিতায় নামতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। দলের মধ্যে ধাক্কা খেয়েছি। স্থানীয় সরকার প্রশাসনে নারীরা এখনো পিছিয়ে। একজন পুরুষ একটি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু একজন নারী এক সঙ্গে তিনটি আসনে জয়লাভ করে। অথচ সেই নারীকে আবার একটি আসনে পাস করা ব্যক্তি কিছু দিলেই কেবল তা দিয়ে জনগণের সেবা করতে পারেন। ফলে পরবর্তীতে ওই নারীর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন ভোটাররা। অথচ ওই নারী জনপ্রতিনিধির তো কোনো অপরাধ ছিল না। রাজনৈতিক জীবনের নানা চড়াই উতরাইয়ের উদাহরণ তুলে ধরে বিএনপির সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, শিক্ষা জীবনের রাজনীতিতে আমার এমনও মনে হয়েছে, যদি আমি সংগঠনের কোনো পদের জন্য নির্বাচন করি, তাহলে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুও আমাকে ভোট দেবে না। আর তার কারণ আমি একজন নারী। এজন্য সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নারীদের নিয়ে আরও বেশি করে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিনাত হুদা বলেন, যে নারীকে আপনি সফল বলছেন তার সাফল্যের পিছনেই অনেক কাঁটা-নুড়ি বিছানো। এর মধ্যে দিয়েই নারী এগিয়েছে। সমাজে যেসব নারী এগিয়ে গিয়েছেন তাদের লক্ষ্য করে পুরুষরা অনেক বক্র কথা বলে। আমি নারী-পুরুষের বিভাজনে বিশ্বাসী নই। আমার মতো অনেকেই আছেন। কিন্তু এটাই বাস্তব চিত্র নয়। একটি কন্যা শিশুর মা হয়ে আমি গর্বিত। কিন্তু অনেক জায়গাতেই আছে যে ভ্রুনটা নারীর হলে তাকে জন্মই দেওয়া হচ্ছে না।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সামিয়া রহমান বলেন, আমি নারীবাদ-পুরুষবাদে বিশ্বাসী নই। মানুষের অধিকারে বিশ্বাসী। এগিয়ে থাকা গোষ্ঠীই কেবল বলতে পারে সময়টা এখন নারীর। কিন্তু বাকিরা এখনো পিছিয়ে। অনেকেই বিশ্বাস করেন নারী পুরুষের গুণাবলী আলাদা। নারী গর্ভধারণ করতে পারে। আর নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা কেবল পুরুষের। কিন্তু বাস্তবতা হল নারী ছাড়া যেমন পুরুষ চলতে পারে না তেমনি পুরুষ ছাড়াও নারী চলতে পারে না। নারী-পুরুষ সমানতালে এগিয়ে গেলেই এ সমাজ এগিয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক রূপা চক্রবর্তী বলেন, সফল নারীদের পিঠে চাবুকের দাগ আছে। তাকে প্রতিটি অগ্রযাত্রায় একবার করে মেরেছে। এই নারীরা যদি একবার মুখ খুলে বলে তাদের কারা ঠঁকিয়েছিলো, তারা নারী যতো তার চেয়ে বেশি পুরুষ। এই দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। জনগোষ্ঠীর প্রতিটি নারী যদি মাথা তুলে দঁড়াতে পারে তাহলে সময় হবে নারীর। আমাদের সমাজে আমরা নারীদের অতটা সাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারিনি। নারীরাও হয়তো অনেক সময় জানে না সে শুধু নারী নয়, সে মানুষ। পুরুষতন্ত্র বাল্যকালে তার মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেয় সে বালিকা। তার কাজ তার ভায়ের মতো নয়, তার কাজ, চিন্তা, কাজের পরিধি আলাদা। আলাদা করে তাকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারও যে সব কিছুতে অধিকার আছে এটা বোঝে না বলে সে বড় হয় বৈষম্যের মধ্য দিয়ে। কৃতি নারীরা তাদের যোগ্যতায়, তাদের স্পৃহায়, তাদের অন্তর্গত চেষ্টায় নিজেদের এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। বলিষ্ঠভাবে তার হাতটি ধরে আছে তাদের, পিতা, স্বামী,ভাই। এই কথা স্বীকার করতে হবে। একা নারী এসে এই জায়গায় দাঁড়ায়নি। নারীরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তার সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ির অন্য কেউ। তবুও নারীরা এগোচ্ছে। কিন্তু নারীর সংখ্যা খুব কম। সমান সমান যতক্ষণ না হচ্ছে ততক্ষণ বলা যাচ্ছে না সময় এখন নারীর। নারী ভুলে গেছে যে সে মানুষ।  

ঢাকা উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহিমা আক্তার লাকি বলেন, সময় শুরু হয়ে গেছে, নারীর লড়াই শুরু হয়ে গেছে। নারীকে এখনও প্রমাণ দিয়ে কাজ করতে হয়। কারণ ছেলেদের ক্ষেত্রে আগেই ভাবা হয়, সে ছেলে, সে পারবে। মেয়েদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।  

জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক সহ-অধিনায়ক সাথিরা জাকির জেসি বলেন, ছোটবেলা থেকে মেয়েদের হাতে পুতুল ধরিয়ে দেওয়া হয়। এটা মায়েরা দেয়, আমরাই দেই। আমার এক বছর বয়সী মেয়ের হাতে আমি বল দেই। পুতুল দেই না। কেউ পুতুল উপহার দিলে আমি সেগুলো অন্য জায়গায় গুছিয়ে রাখি। ওর যদি বড় হয়ে পুতুল খেলতে ইচ্ছা হয় তখন সে তাকে দেব। সে মেয়ে বলে বল খেলতে পারবে না এ ধরণের  চিন্তা যেন ওর মাথায় না ঢোকে সেভাবেই তাকে আমি বড় করছি। আমরা কীভাবে তৈরি হবো সে সিদ্ধন্ত পরিবার নিয়ে থাকে। তাই মা-বাবাকেও ভাবতে হবে। আমার বাবা-মা যদি সমর্থন না দিতো তাহলে আমি কখনো এত দূর আসতে পারতাম না। আমার এই উঠে আসার পেছনে আমার বাবা-মায়ের অনেক ভূমিকা রয়েছে। আমি আমার সন্তানকে মেয়ে নয়, মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ২০০৭ সালে আমি যখন খেলা শুরু করি তখন খুব কম মেয়েরা খেলতো। একটা সময় বলতো এ কেমন মেয়ে সারাদিন ছেলেদের সাথে খেলে। যখন জাতীয় দলে খেলে দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছি তখন তারা বাহবা দিয়েছে। তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের জনপ্রিয়তা কম। কারণ আমরা শুরু করেছি অনেক পরে। তাই সময়ের ধারাবাহিকতায় নারীরাও এগিয়ে যাবে।  

ফুটবলার পিংকী সানোয়ার বলেন, আমি যে প্রেরণা পেয়েছি তার পেছনে ছিলেন বাবা। বাবাই আমাকে জোর করে ফুটবল মাঠে নিয়ে গিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয় হলো সেই খেলাটা আমাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। যার পেছনে মূল কারণ ফুটবল কর্তৃপক্ষের অবহেলা। ২০১০ সালে ফুটবল ছেড়ে দিয়েছি। নারীদের ক্রিকেটটা যেভাবে এগিয়েছে সেভাবে ফুটবলটা এগিয়ে যায়নি। খেলোয়াড়দের কাছে কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু নারী ফুটবলারদের তারা ঠিকমতো প্রশিক্ষণ দেয় না। যেটুকু হয় তা লোক দেখানো।

সাবেক ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন কামরুন নাহার ডানা বলেন, প্রথমেই পরিবার থেকে আসতে হবে। ছেলে -মেয়ে উভয়কেই মানুষ হিসেবে বড় করতে হবে। তাদের শেখাতে হবে ছেলে-মেয়ে এক। সম্পত্তির বণ্টনটাও যেন সমান হয়। এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।  

ইউনাইটেড হাসপাতালের ডিরেক্টর ও চিফ অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডা. সাগুফা আনোয়ার বলেন, নারী স্বাস্থ্য সচেতন নয়, নিজের ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচেতন নয়, কিন্তু স্বামী- সন্তান ও পরিবারের অন্য সবার ব্যপারে স্বাস্থ্য সচেতন। আসলে সে স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হওয়ার সময়ই পায় না। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের তালিকায় সবার নিচে স্থান হয় নারীর। তাই পরিবারের সহযোগিতা দরকার। নারীর প্রতি বৈষম্য, ব্যক্তির বৈষম্য। মা-বাবার নয়, পরিবারের নয়। এটা ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন রকম হয়।

সংসদ ভবনের জনসংযোগ কর্মকর্তা লাবণ্য আহমেদ বলেন, প্রতিবন্ধকতা থাকে। সমাজে এগিয়ে যেতে হলে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে হবে। তাহলে সাফল্য এসে ধরা দেবে। তবেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখছি সেটি বাস্তব হয়ে ধরা দেবে।  

আলোকচিত্রী কাকলী প্রধান বলেন, একদিন হয়তো মানুষ দিবস হবে। পুরুষ দিবস হবে। সময়টা এখনো নারীর নয়। তাহলে এত নির্যাতিতা নারীর ছবি তুলতে আমাদের বার্ন ইউনিটে দৌড়াতে হতো না।  

প্রখ্যাত লেখক ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, 'সময় এখন নারীর'- এ কথার সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত নই। বিশ্বজুড়ে নারীর প্রতি মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। মানুষের সভ্যতা সাইকেলের মতো। এই সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে নারী-পুরুষ উভয়কেই দরকার। প্রত্যন্ত গ্রাম ও নিম্নবর্গের নারীদের অবস্থা শোচনীয়। নারী ও শিশুরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবারের কাছেই নিরাপদ নয়। সমাজকে বদল করতে হবে। এ বদলের দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষক-রাজনীতিবিদসহ সবাইকে। তৃণমূল থেকেই পরিবর্তনের শুরুটা করতে হবে। এজন্য আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। তবে পুরুষের সমান জায়গায় নারীকে আসতে আরও কতটা সময় পাড়ি দিতে হবে সেটিই এখন ভাববার বিষয়। তবে আশার দিক হচ্ছে অনেক মা আছে যারা সন্তানের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। একজন মা তার একার চেষ্টাতেই অনেক কিছু করছেন। আমরা আসলে অন্ধকার জগতে বাস করছি। নারী এ-ই করতে পারবে, পুরুষ তা করতে পারবে। এই অসম চিন্তা দূর করতে হবে। অন্ধকারে কিছু আলো আছে সেটি আরও বাড়বে। তবেই নারী পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সময় এখন নারীর এগিয়ে যাওয়ার। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাজনীতি, অর্থনীতি ও নেতৃত্বে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা নারী ক্ষমতায়নের কথা বলি। কিন্তু , এখনো নারীকে অর্থের অভাবে রাস্তায় সন্তান প্রসব করতে হয়। সময়ের অনেক পরিবর্তন আসলেও এখনো গ্রামের মেয়েটি জানে না তার বয়ঃসন্ধিতে তার করণীয় কী। সে তার সমস্যা কার সঙ্গে শেয়ার করবে? তার মার শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সচেতনতা না থাকায় তার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত কী হবে তা সে জানে না। আমরা নারী দিবসের রঙ নিয়ে চিন্তা করি। রঙ বা দিবস তো দূরের কথা এখনো প্রত্যন্ত এলাকার নারী তার নূন্যতম অধিকারের কথাও জানে না। আমরা ২০ বছর আগের জায়গা থেকে হিসাব করলে দেখবো এখন হয়তো অনেক এগিয়েছি। কিন্তু নারীদের এগিয়ে নিতে আমাদের পদক্ষেপ আরো জোরালো হতে হবে। নারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। নারীদের এগিয়ে নিতে গণমাধ্যমেরও কাজ করতে হবে। নিজেদের অবস্থান থেকে নারীদের এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের নারী ক্রিকেটাররা, ফুটবলাররা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, অন্য দেশের খেলোয়াড়দের পরাস্থ করছে। তখন আমরা আশার আলো দেখি। প্রতিটি পেশায় এখন দুর্দান্ত দাপটে অবস্থান করছেন নারীরা। এখনো যেসব সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করলে নারীর অগ্রযাত্রা আরো বেগবান হবে।  

সম্পর্কিত খবর