জননেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা

জননেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা

তাহজীব আলম সিদ্দিকী

জননেত্রীর জন্ম বাংলাদেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী পরিবারে, যেখানে ঘটেছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ; তার বিকাশ ও প্রসার। পিতা বাংলার মুকুটহীন সম্রাট এবং বাঙালির অধিকার ও দাবি আদায়ের মূল চালিকাশক্তি। তবে নিজ গুণেই স্কুলজীবন থেকে রাজনীতিতে সরব ও সক্রিয়। শৈশব ও কৈশোর জীবন থেকে বাঙালির অধিকার ও দাবিকে আলিঙ্গন করেছিলেন নিজের জীবনের প্রধান ব্রত হিসেবে।

 

কলেজ জীবনে যখন জননেত্রী পা ফেলেন, তখন বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার যেন এক নতুন বাতাবরণ শুরু হয়। তিনিও নিজেকে সম্পূর্ণ উজার করে দেন। হয়ে যান তৎকালীন ঐতিহ্যবাহী ইডেন কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি। পরবর্তীকালে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সূতিকাগার হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল জননেত্রীর সরব ও সতেজ উপস্থিতি।

নিজের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যবোধ অক্ষুণ্ন রেখে ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। পরে জননেত্রীর পিতা বাঙালির স্বাধীনতার স্থপতি স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী জল্লাদের কারাগারে। জননেত্রী হয়ে যান সপরিবারে গৃহবন্দী।

পিতা জল্লাদের কারাগারে; দুই ভাই মুক্তিযুদ্ধে; মা, বোন ও ছোট ভাইকে নিয়ে নিজ গৃহে প্রতিদিন মৃত্যুর প্রহর গোনা মনে হয় ওই সময় জননেত্রীর চরিত্রে ঘটে যায় এক বিশাল বিবর্তন। মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করা, ভয়কে জয় করা এবং সকল প্রতিকূলতায় চারিত্রিক দৃঢ়তা ও ইস্পাতকঠিন মনোবল বহাল রাখা।  

পরবর্তীকালে পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টে ছোট বোন ছাড়া পরিবারের সকলকে তিনি হারান। নিমেষেই ধ্বংস হয়ে যায় পরিবারের সকল বন্ধন, সকল ভালোবাসা। এ ছিল এক নির্মম, নিষ্ঠুর, অবিশ্বাস্য ও হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা। স্বজন হারানোর শোক জননেত্রী কখনোই বিস্মৃত হতে পারবেন না। কিন্তু বাঙালির অধিকার, বাঙালির মুক্তিকে আগেই আলিঙ্গন করে ফেলেছেন তিনি। বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির ভালোবাসাকে আপন করে নিয়েছেন। তাই তো এই অসহনীয় যন্ত্রণাকেও উত্তরণ করে হাতে তুলে নেন স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতীক আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব।

তারপর আন্দোলন-সংগ্রাম, জেল-জুলুম, অত্যাচার - নিগ্রহ - সবকিছুই ছিল চলার সঙ্গী। ১৯৯১ সালে মনে হলো এ সংগ্রাম হয়তোবা একটি গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। কিন্তু কায়েমি স্বার্থ সূক্ষ্ম কারচুপি ও ষড়যন্ত্র দ্বারা ছিনিয়ে নিল কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। তারপরও জননেত্রীর প্রত্যয় ও উজ্জীবনী শক্তির কোনো ঘাটতি ঘটল না। আবার নেমে গেলেন জনগণের অধিকার ও মুক্তির আন্দোলনে। ২১ বছরের প্রতীক্ষার পর দলকে ক্ষমতায় আনলেন। কিন্তু সময়কাল মাত্র পাঁচ বছর। এ সময় থেকে গেল অপূর্ণ অনেক স্বপ্ন ও প্রতিশ্রুতি।


আরও পড়ুন: স্কুল বন্ধ হলেও পড়ালেখা বন্ধ রাখা যাবে না


২০০১ সালে আবার ষড়যন্ত্র। কিন্তু এবার ষড়যন্ত্রেই থেমে থাকল না। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, বারবারই আক্রমণ হয়েছে জননেত্রীর জীবনের ওপরে। কিন্তু সরকার ও রাষ্ট্রের যোগসূত্রে প্রকাশ্য দিবালোকে এত পরিকল্পিতভাবে জননেত্রীকে ও জননেত্রীর দলকে নিশ্চিহ্ন করার এত বড় জঘন্য প্রচেষ্টা ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের আগে হয়নি। অলৌকিকভাবে জননেত্রীকে ঘিরে দলীয় কর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে প্রাণে বাঁচিয়ে দেন। মৃত্যুকে তিনি খুবই কাছ থেকে দেখেছেন, একই সাথে মৃত্যুকে তুচ্ছ করতেও শিখেছেন। মৃত্যুর ভয়কে জয় করতে শিখেছেন।  

২০০৬ সালের আন্দোলন-সংগ্রামের পরে প্রত্যাশিতই ছিল, আবার নিজের দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবেন, বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তন করবেন। আবার ঘটে গেল ষড়যন্ত্র। সেনাশাসিত সরকার ক্ষমতায় চেপে বসে অন্তরীণ করল জননেত্রীকে। মৃত্যুর ভয় দেখাল। দেশত্যাগ করতে চাপ প্রয়োগ করল। কিন্তু তারাও সেদিন বুঝতে পারেনি, বাঙালির মুক্তির জন্য, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে জননেত্রী কোনোভাবেই পিছপা হবেন না। জননেত্রীর চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং জনগণের প্রতি আনুগত্যের কাছে সেনাশাসিত সরকারের পরাজয় হলো। দলকে ফিরিয়ে আনলেন এক অভূতপূর্ব বিজয় উপহার দিয়ে।


আরও পড়ুন: সংবাদ কর্মীদের পেশাদারিত্ব বেশি গুরুত্বপূর্ণ


আজকের দিনেও জননেত্রী সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এই সংগ্রাম ভিন্নমাত্রায়, ভিন্ন আঙ্গিকে—অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির সংগ্রাম। একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রাম। তবে ষড়যন্ত্রকারীরাও বসে নেই। সাম্প্রদায়িক শক্তিরাও বসে নেই। কিন্তু তারা বারবারই পরাজিত হবে এই নির্ভীক, অকুতোভয়, সাহসী, দুর্দমনীয় ও মৃত্যুঞ্জয়ী নেত্রীর কাছে।

শুভ জন্মদিন জাতির জনকের কন্যা, জননেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লেখক: তাহজীব আলম সিদ্দিকী, সংসদ সদস্য, ঝিনাইদহ-২