রাজধানীতে অভিনব প্রতারণা

রাজধানীতে অভিনব প্রতারণা

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীতে অভিনব প্রতারণার শিকার হয়েছেন সাহিত্য ও নন্দনের ওয়েব পত্রিকা 'শিল্পচিন্তা'র সম্পাদক কবি মনিরুল মোমেন। তাঁর ছেলেকে অপহরণ করার নাটক সাজিয়ে প্রতারকরা হাতিয়ে নিয়েছেন ৩০০০০ টাকা।  

ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করে তিনি তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন। এখানে লেখাটা হুবহু তুলে ধরা হলো:

সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখ।

সকাল ১০:৪৫ মিনিট। একটি  অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন এলো, 'আপনার ছেলেকে তুলে  আনা হয়েছে। সে এখন আমাদের কাছে। জীবিত নিতে চাইলে ৩০ মিনিটের মধ্যে ৬০ হাজার টাকা পাঠান।
আমরা লাইনে আছি। বিষয়টা কারো সাথে শেয়ার করলে কিংবা ফোন কেটে দিলে ছেলেকে আর জীবিত পাবেন না। ' 

এইটুকু বলে ওরা আমাকে ছেলের কান্নাভেজা কণ্ঠ শোনালো। আমি তখন মোহাম্মদপুরে, একটি ডিজিটাল ট্রেনিংএ। সকালে আমি যখন বের হই, তারও আগে আমার ছেলে বের হয়েছিলো বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলতে।

আমার সমস্ত শরীর হিম হয়ে গেলো। মাথায় কিছু কাজ করছিলো না। মনে হচ্ছিলো পড়ে যাবো। তবু মানসিক শক্তি নিয়ে ওদের সঙ্গে দেনদরবার করতে থাকলাম একা। আশেপাশে তখন অর্ধ-শতাধিক সহকর্মী। কাউকে কিছু বলতে পারছিলাম না। কারণ, অপহরণকারীরা তখন অনকলে। আমার স্ত্রীকে বিষয়টা জানাইনি এই ভেবে যে, সে শুনলে হয়তো স্বাভাবিক থাকবে না। ভাবলাম, ছেলে উদ্ধার হবার পর তাকে জানাবো। তাছাড়া, সে জেনেইবা কী করতে পারবে!

উদভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করছিলাম। মিনিট বিশেকের মধ্যে ৩০০০০ টাকা পাঠালাম ওদের দেয়া রকেট নম্বরে। ওরা আমাকে জানালো, ছেলেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কিছুটা স্বস্তি পেলাম। স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম, ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলে বাসায় ফিরেছে সকাল পৌনে দশটায়। আমি আবার ফ্রিজ হয়ে গেলাম।  

প্রশ্ন করতে পারেন, ছেলের কণ্ঠস্বর আপনি চিনলেন না? না। ওরা প্রথমে যেসব কথা বললো, তা শুনে মুহূর্তের মধ্যেই আমার বিচার-বিবেচনা লোপ পেয়ে গিয়েছিলো। যে কোনো পিতার ক্ষেত্রে এমনটাই হবে। তাই, ওই কান্নাভেজা কণ্ঠকে আমার ছেলের কণ্ঠের মতোই মনে হয়েছিলো।  

প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হবার পর দ্রুত ডাচ-বাংলা ব্যাংকের হেল্প লাইনে ফোন দিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রকেট একাউন্টটি ফ্রিজ করতে বললাম। ওরা জানালো, কোনো ব্যক্তির কথায় কারো একাউন্ট ফ্রিজ করা হয় না। এটা নাকি ব্যাংকিং আইনের পরিপন্থি। সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিলাম বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত একজন অনুজ কবিকে । তিনি অল্প সময়ের মধ্যে রকেট একাউন্টটি ফ্রিজ করার ব্যবস্থা করলেন। প্রতারকরা টাকা তোলার আগেই রকেট একাউন্টটি ফ্রিজ হলো। কথা বললাম আরেকজন অগ্রজের সাথে।  


আরও পড়ুন: মেইন ফোর্স থেকে ছিটকে পড়েছে গণমাধ্যম!


তিনি বাংলাদেশের ব্যাংকিং জগতের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একজন ব্যক্তি। তিনি তৎক্ষণাৎ ডাচ-বাংলা ব্যাংকের হাই কমান্ডকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবহিত করলেন এবং ব্যবস্থা নিতে বললেন। দুজনই টাকা ফেরত পাবার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিলেন।  

টাকা ফেরত পাবার চেয়ে প্রতারকদের আটক করাটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো। কারণ, এদের দ্বারা দেশের আরো অনেকে প্রতারিত হতে পারেন। তাই, সন্ধ্যায় ভাটারা থানায় জিডি করে কপি পাঠালাম আমার প্রিয়ভাজন একজন এডিশনাল এসপিকে। পাশাপাশি কথা বললাম আরেকজন প্রিয়ভাজন গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি সঙ্গে। দুজনকেই জিডির কপি পাঠালাম এবং দুজনই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতারকদের ট্রেস করার ব্যাপারে আস্বস্ত করলেন।

পরদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং শাখার মহাব্যবস্থাপকদ্বয়ের কাছে জিডির কপিসহ আলাদা দুটি আবেদন করলাম হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত পাবার জন্য। টাকা ফেত পাবার নিশ্চয়তা পেলাম। দুই ব্যাংকের দায়িত্বশীলতা ও তৎপরতায় আমি মুগ্ধ।  

এই ঘটনাটি ফেসবুকে প্রকাশ করার উদ্দেশ্য, আমার বন্ধু, স্বজন ও শুভার্থীদের সচেতন করা। এমন ঘটনা যে কারোর বেলায় ঘটতে পারে। আমি টাকাটা রিকভার করতে পারছি। সবার পক্ষে হয়তো তা সম্ভব নয়। তাই, এসব ডিজিটাল প্রতারণার বিষয়ে সবাই সচেতন থাকুন। সুস্থ, সুন্দর, নিরাপদে থাকুন সকলে।

news24bd.tv নাজিম

এই রকম আরও টপিক