শিশুকে মানুষ বানানোর কারিগর হলো “মা”

শিশুকে মানুষ বানানোর কারিগর হলো “মা”

তাসলিমা পারভেজ

মা হতে পারেন সবাই, কিন্তু সবাই কি শিশুর উপযুক্ত মা হতে পারেন? এটা এখনকার সর্বগ্রাসি ব্যস্ততার সময়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমরা সবাই জানি, শিশু পালনে গর্ভধারিণী মায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।  

তবে শিশুর জন্য উপযুক্ত মা হওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না। একজন মায়ের মাঝে একটি শিশু খুঁজে পায় অন্তরঙ্গ বন্ধুকে।

মা কখনো পরামর্শদাত্রী, কখনো শিক্ষক, কখনোবা জীবন রক্ষাকারী মানুষ। মা তার সাধ্যানুযায়ী শিশুকে শিক্ষা দেন।  

এখন প্রশ্ন হলো ,শিক্ষা কী, কীভাবে মা শিশুকে শেখান? শিক্ষা হলো পরিণত বয়সে ব্যক্তি বিশেষের জীবনে যে শারীরিক ,মানসিক ও আধ্যাত্মিক ক্রমোন্নতি দেখা যায় তারই নির্যাস । তাহলে যে মুহূর্তে শিশু  জন্ম নেয়,  তখন থেকেই তার শারীরিক শিক্ষা শুরু হয়।

দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো শিশু সুনিয়মে ও সুশৃঙ্খলভাবে করতে পারলে সব সময়  ভালো মানসম্মত  জীবন যাপন তাদের আয়ত্বে চলে আসে।  

এই ছোট্ট  চঞ্চল ও প্রফুল্লচিত্ত  শিশুরা সব সময়ই কিছু না কিছু করতে চায়। এ সময় বড়রা কেবল বলতে থাকে, এটা করো না ওটা করো না। সব সময় অকারণে বিধিনিষেধ আরোপ করা কোনো কাজের কথা নয়।   তাদেরকে এমন সব কাজ করতে দিতে হবে, যাতে সে মনের ইচছা বাস্তবায়ন করতে পারে এবং ভালোভাবে অন্যদেরকে  অনুকরণ করতে পারে। এতে তার শারীরিক শক্তি বাড়বে, কল্পনা শক্তির বিকাশ হবে এবং বাস্তব পৃথিবীকে মোকাবিলা করার দক্ষতা তৈরি হবে। শারীরিক শিক্ষার সঙ্গে  মানসিক শিক্ষা জড়িয়ে আছে। একটি থেকে আরেকটিতে বাদ দেওয়া যায় না।


আরও পড়ুন: ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: ১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, গ্রেপ্তার ৪


কারণ মনের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। শিশুর শারীরিক বিকাশ  মনের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করে। সহজ করে বলতে গেলে বলতে হবে, শরীরের ওপর মনের প্রভাব অনেক বেশি। শিশুর মনোজগতের খোরাক মাকেই যোগাতে হয়। শিশু তার মায়ের কথার সুর, মুখের হাসি ও বাক্যের স্বর ভালোবাসে।

এটা আমরা সবাই জানি, শিশু অনুকরণ করে আমোদ পায়। তাই সে যা দেখে তা অনুকরণ করে। কখনো সে শিক্ষককে অনুকরণ করে, কখনো ফেরিওয়ালাকে, কখনো অন্য কাউকে, কখনো সে দোকান দেয়, কখনো গাড়ি চালানোর অভিনয় করে। এসবই তার চারপাশের চরিত্র, যে সব চরিত্রে সে অভিনয় করে। এই সবই কোনো না কোনো কাজ, যা করে তার আশপাশের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে বা জীবন যাপন করে। সেগুলো  একেকটি দক্ষতাও। শিশু সে সব দক্ষতার অভিনয় করে নিজেকে বাস্তব পৃথিবীর জন্য তৈরি করে। যখন সে শিক্ষককে অনুকরণ করে তখন সে শিক্ষা দেওয়ার দক্ষতা আয়ত্ব করার চেষ্টা করে। পরে এসব অনুকরণ তার জীবনকে সুন্দর করে। সে নানা কাজে দক্ষ হয়ে ওঠে।  

ফলে, শিশুর বড় হওয়ার জন্য অনুকরণ করার, অভিনয় করার বিষয়গুলো মোটেও হেলা করার নয়। ফলে, যখনি শিশু অনুকরণ করতে আসে বড়দের উচিত তাকে সহায়তা করা। শিশুর সঙ্গে সবারই শিশু হয়ে মেশা উচিত। শিশুর আধ্যাত্মিক  শিক্ষার বিষয়টিও কম গুরত্বপূর্ণ নয়। শিশুর কাছে মা-ই  তার সবোর্চচ  শক্তি। তার ভালবাসার ও জীবন ধারনের  একমাত্র অবলম্বন।   


আরও পড়ুন: সিলেটে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ, এবারও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ


নবজাত শিশুর আধ্যাত্মিক শিক্ষার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার গৃহের প্রকৃতি বা তার প্রভাব। আমি মনে করি ঘরের সবার আচরণ শিশুর জন্য অনুকরণীয় হওয়া উচিত। ঘরের সবার আচরণ শিশুর জন্য নিরাপদ হওয়া উচিত। এজন্য বড়দের সচেতন হওয়া দরকার।  

যাহোক, মায়ের আরেকটি গুনের কথা না বললেই নয়। মা হলেন শিশুর প্রথম গৃহ শিক্ষক।  

ফলে শিক্ষার ভার কেনোভাবেই  কেবল স্কুলের উপর ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়।   ঘরে বসে চিত্তাকর্ষক ও আনন্দদায়ক বই পাঠের মাধ্যমে শিশুকে লেখা পড়ার প্রতি আকৃষ্ট করার প্রথম কাজটি মাকেই করতে হয়। এ বিষয়ে কর্মজীবী মায়েদের ভূমিকা নিয়ে কিছু বলতেই হয়।
একজন কর্মজীবী মা-কে দিনের অনেকখানি সময় সন্তানের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়। ফলে, শিশুকে বড় করতে গিয়ে কর্মজীবী মাকে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।  

এরিমাঝে নিজের কাজ ও তার প্রস্তুতির পাশাপাশি শিশুর সব চাহিদার দিকে খেয়াল রাখার কাজটি কর্মজীবী মা কে করতে হয়। ফলে, মানুষ হিসাবে কর্মজীবী মায়েদের প্রতি আমার এক ধরনের সহমর্মিতা রয়েছে। যে সব কর্মজীবী মা নিজের সন্তানের দেখভাল করেন, সন্তানকে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি করে দেন, তারা এই বসুন্ধরার শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদেরকে অভিবাদন জানানো আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পরে।  

মা-কে হতে হয় জ্ঞানবতী, মা –কে হতে হয় মমতাময়ী । তাহলে মা-ই পারেন সঠিক নির্দেশনা দিয়ে সন্তানকে পরিচালিত করতে, যারা হয়ে ওঠেন দেশের সম্পদ। মায়ের যত্ন না থাকলে সন্তান ধুকে ধুকে মরে । তাই সব মাকেই ভালো করে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য  ‍বুঝে নিতে হয়।   

তাসলিমা পারভেজ, প্রধান শিক্ষক(অবসরপ্রাপ্ত) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়

news24bd.tv নাজিম

সম্পর্কিত খবর