ওই নারীর মুখ ও বুকের বিভিন্ন স্থানে কামড় দেয় এক ‌‘বখাটে’

ওই নারীর মুখ ও বুকের বিভিন্ন স্থানে কামড় দেয় এক ‌‘বখাটে’

অনলাইন ডেস্ক

নোয়াখালীতে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে মুখমণ্ডলে লাথিমারাসহ মারধরের ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করায় ঘটনায় জড়িত বখাটেদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশের ৫টি ইউনিট। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের নির্দেশে মাঠে কাজ করছে এসব টিম।

এ অভিযান পুলিশ সুপার নিজেই তদারকি করছেন বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

নির্যাতিতার প্রাথমিক বক্তব্য এবং গ্রেফতার হওয়া এক বখাটের প্রাথমিক স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ছিল কমপক্ষে পাঁচজন।

এরা হচ্ছে দেলোয়ার, বাদল, কালাম, আব্দুর রহিমসহ আরও একজন। এদের মধ্যে আব্দুর রহিম (২২)কে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ সুপারের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, এ ঘটনায় যারাই অভিযুক্ত থাকবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ চৌধুরী বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আবদুর রহিমকে আটক করা হয়েছে।

এছাড়া, বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তবে এ ঘটনায় মামলা হওয়ার বিষয়ে কোনও তথ্য এখনও জানা যায়নি।

গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার আরেক অভিযুক্ত কালাম।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, নির্যাতনকারীদের মধ্যে এক যুবক নারীর পরনে থাকা জামা কাপড় টেনে-হিঁচড়ে সম্পূর্ণ খুলে ফেলে। এ সময় ওই নারী বিছানার ছাদর, তোষক, খাটের ওপর থাকা বিভিন্ন কাপড় দিয়ে নিজের দেহ ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

কিন্তু নির্যাতনকারীদের মধ্যে কয়েকজন চারদিক থেকে কাপড়গুলো টেনে সরিয়ে দেয়। এক যুবক নারীর মুখে বারবার লাথি মারে। একজন তার মুখ ও বুকের বিভিন্ন স্থানে কামড় দেয়। এক যুবক নারীর গোপনাঙ্গে বারবার হাত দেয় ও আঘাত করে। আরেক যুবক তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। নির্যাতনকারীদের বারবার বাবা ডেকেও রক্ষা পাননি ওই নারী।

নাম প্রকাশ না করে আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ এক ব্যক্তি ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে বলেন, গৃহবধূর ওপর হামলার এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ছাড়াও শারীরিক আঘাত এবং সম্মানহানির কারণে ফৌজদারি আইনে এবং ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের উপাদান রয়েছে। ফলে ঘটনাটি অত্যন্ত জঘন্যতম বর্বরতা এবং আসামিদের অপরাধ কোনোভাবেই হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। এমনকি ওই গৃহবধূ কোনও ঘটনার সঙ্গে আগে সম্পৃক্ত থাকলেও তার গায়ে এভাবে হাত তোলা ও তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করার অধিকার বাংলাদেশের কোনও আইনেই অভিযুক্তদের দেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে অপরাধ করার অভিযোগও উঠতে পারে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, নির্যাতনকারীদের বাবা ডেকেও হয়নি কাজ

এদিকে, এ ঘটনার ভিডিও প্রকাশ এবং গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরপরই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা একযোগে আওয়াজ তুলছেন। অনেকে আবেগের বশবর্তী হয়ে অপরাধীদের  গ্রেফতার করে ফায়ারিং স্কোয়াডে বিচার করা, ‘ক্রস ফায়ারে’ দেওয়াসহ নানা ধরনের শাস্তির দাবি তুলছেন।

গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার আরেক অভিযুক্ত বাদল।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার একটি সূত্র জানায়, পুলিশ রবিবার নির্যাতিতাকে তার বাবার বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যায়। এসময় তিনি পুলিশকে জানান, এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২০/২৫ দিন আগে। সেসময় এ ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। তবে তিনি হামলাকারীদের ভয়ে এতদিন থানায় এসে অভিযোগ করার সাহস পাননি।

আরও পড়ুন: মুখে কাপড় বেঁধে মা-মেয়েকে ধর্ষণ

তিনি জানান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বড়খাল এর পাশে নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে এই হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। সেখানে ঘটনার নেতৃত্ব দেয় দেলোয়ার বাহিনী প্রধান দেলোয়ার। আর ঘটনার জড়িত ছিল বাদল, কালাম, আব্দুর রহিমসহ আরও একজন। এই ভিডিও ওরা প্রকাশ করে দেবে তিনি এই ভয়ে ছিলেন এতদিন।  

ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ওই গৃহবধূ নিজের সম্ভ্রম রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। কিন্তু নির্যাতনকারী কয়েকজন বখাটে তার পোশাক কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু একটা বলতে থাকে। তিনি প্রাণপণে সম্ভ্রম রক্ষার চেষ্টা করেন এবং হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন, তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু, তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করেনি। বরং দেলোয়ার একের পর এক তার মুখমণ্ডলে লাথি মারে ও পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দেয়। এরপর তার শরীরে একটা লাঠি দিয়ে মাঝে মাঝেই আঘাত করতে থাকে। এসময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেসবুক’ ‘ফেসবুক’ বলে চেঁচায় আরেকজন।

আরও পড়ুন: বড় বোন বাহির থেকে এসে দেখেন ছোট বোন ‌‘আপত্তিকর অবস্থায়’

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এই ঘটনায় অভিযুক্তরা সরকারদলীয় কয়েকজন নেতার প্রশ্রয়ে এলাকায় মাস্তানি করে বেড়ায়। এরমধ্যে দেলোয়ার হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি। তারা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর