নোয়াখালীর ঘটনা পশুদেরও লজ্জা দেবে

নোয়াখালীর ঘটনা পশুদেরও লজ্জা দেবে

আনোয়ার সাদী

জঙ্গলেও পশুরা কিছু নিয়ম মেনে চলে। ক্ষুধা না পেলে বাঘেরাও অযথা শিকার করে না। প্রাণ কেড়ে নেয় না। নোয়াখালীর ঘটনা মানুষের লোকালয়কে জঙ্গলের চেয়েও খারাপ প্রমাণ করে দিলো।

প্রথমেই বলে রাখি, নোয়াখালীর সব মানুষ খারাপ নয়। সাবাই আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলে না। অনেক বরেণ্য মানুষ ওই জেলা থেকে এসে দেশ পরিচালনা করেছেন এবং বাংলাদেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করেছেন। ফলে, অনেকে বেশি মানুষের বিরুদ্ধে কিছু বলছি না, তা প্রথমেই পরিষ্কার করে নেই।

নারীকে অপমাণিত করার ঘটনাটি একটি ঘরে ঘটলেও এর প্রভাব অনেক বেশি। বিশেষ করে এখন যে কেনো খবর চট করে বিশ্বের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে যায়। ফলে, নারীকে বিবস্ত্র করে অসভ্য আচরণ করার ঘটনাটি আমাদের মাথা নিচু করে দিয়েছে। এদেশের মানুষকে বিশ্বের অনেক মানুষ এখন বর্বর হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। তাতে আমাদের দুঃখ বাড়বে।

আক্রান্ত না হওয়ার অধিকার বাংলাদেশের যে কোনো মানুষের আছে। দেশের আইন এই অধিকার দিয়েছে। এসব আইন দেখিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষকে আমরা বলতে পারি, দেখো আমরা উন্নত, সভ্য, অগ্রসর মানুষ। কিন্তু নারীকে অবমাননা করার ঘটনা প্রমাণ করে দিলো সুন্দর আইন থাকলেই হয় না, আইন না মানলে, কিংবা কেউ গায়ের জোরে, খুঁটির জোরে, গডফাদারের জোরে আইন অমান্য করলে, সভ্য থাকার দাবি বড়ো বিবর্ণ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: ভিডিও দেখে রাতে আমার ঘুম হবে না

নোয়াখালীতে নারীটি আগের স্বামীর সঙ্গে আপোষে যাবেন কী না, আবারো সংসার শুরু করবেন কী না, এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই বিষয়ে যুবকরা জিজ্ঞাসাবাদ করার অধিকার রাখেন না। নারীকে বিবস্ত্র করা, অপমান করা, আঘাত করা, বিনা অনুমতিতে ভিডিও করা, সেই ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে সমাজিকভাবে হেয় করা, সবই আইনের ধারাবাহিক লঙ্ঘন।  
যে সব যুবকরা নারীর ওপর খবরদারি করতে গেল, মারধর করল, এসব করার অধিকার আইন তাদেরকে দেয়নি। সমাজ তাদেরকে দেয়নি। যে কাজগুলো তারা করতে পারে না, এই বিষয়টি তাদের মাথায় নেই কেন?

নেই, কারণ তারা মনে করছে, তাদের আচরণের জন্য কেউ তাদেরকে কিছু করতে পারবে না। তারা নিজেদেরকে অনেক বেশি ক্ষমতাশালী মনে করেছে। তাদের দম্ভ সমাজের ভীত কে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এমন দম্ভের পরিমাণ বাড়লে মানুষের সমাজ আর জঙ্গলের মাঝে আর কোনো পার্থক্য থাকে না।

আরও পড়ুন: ৮৫ বছরের বৃদ্ধকে হাতেনাতে ধরল জনতা, অভিযোগ ধর্ষণের

তারা সমাজের নিয়ম, রাষ্ট্রের আইন মানেনি। এখন সমাজ যদি মনে করে, সামাজিক নিয়মনীতি বজায় রাখা দরকার, রাষ্ট্র যদি মনে করে আইন বজায় রাখা দরকার, তাহলে এখন আইন টিকিয়ে রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। লাঞ্ছিত করার আলোচিত ঘটনায় মামলা করেছেন ওই নারী।

অভিযোগে তিনি বলেছেন, খরাপ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়, ভিডিও ফাঁস করেছে দুর্বৃত্তরা। এর মাঝে পেরিয়েছে এক মাস সময়। এই এক মাস নরকবাস করতে হয়েছে সেই নারীকে। ভাবা যায়, মানুষ কী মানুষের সঙ্গে এতো ভয়াবহ, অমানবিক আচরণ করতে পারে!

আরও পড়ুন: শিশুদের মধ্যে ঝগড়া, অবিভাবক প্রতিশোধ নিল ধর্ষণ করে

এই ঘটনার জন্য দায়ীদের ছবি সহজলভ্য, নাম ঠিকানা সহজলভ্য। তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে, যেন অন্য কেউ এমন অপরাধ করতে সাহস না পায়।

আনোয়ার সাদী, সিনিয়র নিউজ এডিটর, নিউজটোয়েন্টিফোর।

news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর