মার্কিন রাজনীতিতে ইতিহাস গড়তে পারেন কমলা হ্যারিস

মার্কিন রাজনীতিতে ইতিহাস গড়তে পারেন কমলা হ্যারিস

আসমা তুলি

৭ অক্টোরব অনুষ্ঠিত হয়ে গেল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক দুই দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মাইক পেন্স ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে নির্বাচনী বিতর্ক। আর এই বিতর্কে কে জয়ী হয়েছেন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবার কোন দলে ভিড়বে  যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এশিয়  ভোটাররা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটিতে বসবাসরত এশিয়দের ভোট বরাবরই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তা  রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট উভয় দলের জন্যই।

ভারতীয়-মার্কিন ভোট ব্যাঙ্কে এবার নরেন্দ্র মোদীও গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসরত ভারতীয়দের ভোট টানতে করোনার প্রদুর্ভাবের আগে সফরে ভারতে এসেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখানেই শেষ নয়, গুজরাটে ’নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে ভারতীয় মার্কিনীদের কাছে অনেকটা খোলাসাভাবে ট্রাম্পের হয়ে ভোটও চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে মূলত দুই ধরনের ভারতীয়-মার্কির্নির বসবাস।

একদল প্রগতিশীল, বামপন্থী, লিবার্যা ল- যারা ডেমোক্র্যাটপন্থী। তারা সাধারণত ভারতে অবিজেপি শক্তির পক্ষে সোচ্চার। আরেক দল রক্ষণশীল। ব্যবসায়ী শ্রেণির এই অংশটি রিপাবলিকানপন্থী। তাঁদের অধিকাংশ শিল্পপতি থেকে প্রেসিডেন্ট বনা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক। নরেন্দ্র মোদীর আবেদনে এই অংশটি সাড়া দিয়েছিল ট্রাম্পকে ভোট প্রদানে।

তাঁদের ভাবনা, ট্রাম্প এবং মোদী বন্ধু। যারা দুই দেশের উন্নয়নে এক অপরের হয়ে কাজ করবে।

কিন্তু সে হিসেবটা অনেকটাই জটিল করে ফেলেছেন এবারের ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনীত ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। কারণ জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলাকে মনোনীত করায় অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকান এবং ভারতীয় অ্যামেরিকানরা দ্বিধায় পড়ে গেছেন। কারণ ডেমোক্রেট এই নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস আফ্রিকান আর মা শ্যামলা গোপালান হ্যারিস একজন ভারতীয়। শুরুতে  চেন্নায়ের বিজ্ঞানী মা গোপালান যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণার কাজে গেলেও সেখানেই স্থায়ী হন। বিয়ে করেন আফ্রিকান মার্কিনি ডোনাল্ড হ্যারিসকে। আর সেই দম্পতিরই সন্তান কমলা হ্যারিস। তবে মাত্র সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন কমলা। একই সঙ্গে দেখেছেন, এশিয়ান এবং আফ্রিকানদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গ মার্কিনিদের বৈরী আচরণ।

কমলা নিজেই বলেছেন, গায়ের রং কালো হওয়ায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখেছেন নানান বৈষম্য।

তাইতো ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করা কমলা রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রী নিয়েও পরবর্তীতে আইন নিয়ে পড়েন কমলা। এক পর্যায়ে আল্যামেডা কাউন্টি জেলা অ্যাটর্নি অফিসে কর্মজীবন শুরু করেন। পাশাপাশি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে চালিয়ে যান লড়াই। তবে তার লড়াইয়ের ইতিহাস কলেজ জীবন থেকেই। আর এভাবে সময়ের পরিবর্তন ও নানা উত্থানপতনের  মধ্য দিয়ে কমলা হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর নির্বাচিত হন। হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। এমনকি  ২০২০ এ ডেমোক্র্যাট দলের হয়ে জো বাইডেনের সঙ্গে তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্যও লড়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক দলের  চূড়ান্ত  মনোনয়ন যায় ৭৭ বছর বয়সী বাইডেনের ঝুলিতেই।

তাই বলে ডেমোক্র্যাটিক দলের ঝানু রাজনীতিক জো বাইডেন কিন্তু কমলাকে চিনতে ভুল করেননি। ভুল করেননি দলীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়ন দিতে। পাশাপাশি দলের নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রেও  বাইডেন তার ওপর অস্থা রাখছেন বেশ। এজন্য প্রতিনিয়ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া সমালোচনার মুখেও পড়তে হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনকে।

এতো কিছুর পর  আসছে ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে যদি বাইডেন- কমলা হ্যারিস জুটির ওপর আস্থা রাখেন মার্কিন ভোটাররা,  চূড়ান্ত জয় পায় ডেমোক্র্যাটিক দল, তবে  যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের  সূচনা হবে। কারণ এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো কোনও  নারী এবং এশীয় অ্যামেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করবেন।

news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর