সূরা ইয়াসিন পাঠের ফজিলত

সূরা ইয়াসিন পাঠের ফজিলত

অনলাইন ডেস্ক

পবিত্র কোরআন শরিফের ৩৬তম সূরা হল সূরা ইয়াসিন। এ সূরাকে কুরআনের হৃদয় বলা হয়েছে। এই সূরা নিয়মিত তেলাওয়াত ও আমলে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত। সূরাটিতে আয়াত সংখ্যা ৮৩, পাঁচটি রুকু এবং ৭টি মুবিন রয়েছে।

সূরাটি ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের অনেক বর্ণনা রয়েছে।

সূরাটির মর্যাদা উল্লেখ করতে গিয়ে হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন - রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক বস্তুরই একটা হৃদয় থাকে আর কুরআনের হৃদয় হল সুরা ইয়াসিন। যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন একবার পড়বে, মহান আল্লাহ তাকে দশবার পুরো কুরআন পড়ার সওয়াব দান করবেন। ’ (তিরমিজি)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘সূরা ইয়াসিন কুরআনের রূহ বা হৃৎপিণ্ড।

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের কল্যাণ লাভের জন্য সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে তার জন্য রয়েছে মাগফিরাত বা ক্ষমা।

সূরা ইয়াসিন বুঝে পড়ায় রয়েছে অনেক উপকারিতা। এ সূরায় মানুষকে পরকালের প্রস্তুতির দিকে আহ্বান করে। আর পরকালভীতিই মানুষকে সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করে এবং অবৈধ বাসনা ও হারাম কাজ থেকে বিরত রাখে।

গোনাহ মাফের মাধ্যম সূরা ইয়াসিন

প্রতিদিনের কাজ-কর্মে মানুষ অনেক ভুল-ত্রুটি করে থাকে। আর এসব ভুল-ত্রুটি করা গোনাহের কাজ। গোনাহ মানুষকে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। আর জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হলো আল্লাহর অনুগ্রহ ও নেক আমল করা। হাদিসে এসেছে-

হজরত ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন - রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে আল্লাহ তাআলা তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। ’ (বায়হাকি,আবু দাউদ)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন - রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রাতে সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তার ওই রাতের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন। ’ (দারেমি)


আরও পড়ুন: দরুদ পাঠের ফজিলত


অভাবমুক্ত থাকার আমল সুরা ইয়াসিন

মানুষের নানামুখী অভাব-অনটন থাকে। শুধু পরিশ্রমে কোনো মানুষের অভাব শেষ হয় না। প্রয়োজন হয় আল্লাহর সাহায্য ও অনুগ্রহের। সূরা ইয়াসিনের আমল অভাবি ব্যক্তির জন্য আল্লাহর মহা অনুগ্রহ। এ সূরার আমলে দুনিয়ার প্রয়োজন পূর্ণ হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি অভাব-অনটনের সময় সূরা ইয়াসিন পাঠ করে তাহলে তার অভাব দূর হয়, সংসারে শান্তি আসে এবং রিজিকে বরকত হয় ‘ (মাজহারি)

হজরত আতা বিন আবি রাবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আমি শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, তার সব হাজত (প্রয়োজন) পূর্ণ করা হবে। ’ (দারেমি)

হজরত ইয়াহইয়া ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে। ’ (মাজহারি)


আরও পড়ুন: তওবা কি, কেন করবো ও গুরুত্ব


মৃত্যুর যন্ত্রণা মুক্ত থাকার মাধ্যম সূরা ইয়াসিন

তাফসিরে জালালাইনের হাশিয়ায় এসেছে, ‘যদি কোনো মুসলমানের মৃত্যুর সময় হয়, আর সে সময় তার পাশে কেউ সূরা ইয়াসিন পাঠ করে, তবে বেহেশত থেকে রেদওয়ান ফেরেশতা জান্নাতের সুসংবাদ না দেয়া পর্যন্ত রূহ কবজকারী ফেরেশতা (মালাকুল মাউত) ওই ব্যক্তির রূহ কবজ করেন না। রূহ কবজের সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তি অবস্থান হয় রাইয়্যান নামক জান্নাতে। হাদিসে পাকে এসেছে-
 
হজরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যুশয্যা ব্যক্তির কাছে সূরা ইয়াসিন পাঠ করলে তার মৃত্যু যন্ত্রণা সহজ হয়ে যায়। (মাজহারি)

হযরত ইবনে ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এটা (সূরা ইয়াসিন) তোমাদের মুমূর্ষু (মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে) ব্যক্তিদের কাছে পাঠ কর। ’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ এই সূরাটির নিয়মিত তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন করে সে আলোকে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

news24bd.tv সুরুজ আহমেদ

এই রকম আরও টপিক