বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ সংলগ্ন লোকালয় ধানসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর গ্রামে বাঘ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের (বাঘ) পায়ের তাজা অসংখ্য ছাপ দেখতে পেয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
দুই ধরনের পায়ের ছাপ দেখে এলাবাসী ধারণা করছে বুধবার রাতে দুটি বাঘ সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকেছে।
তবে, সুন্দরবন বিভাগ জানিয়েছে, বুধবার রাতে দুটি নয় একটি বাঘ লোকালয়ে ঢুকে ভোর রাতে আবারও সুন্দরবনে ফিরে গেছে।
গ্রামবাসীকে সতর্ক থাকতে মাইকিং করা হয়েছে। পুনরায় বাঘ যাতে না আসতে পারে সেজন্য সুন্দরবন বিভাগ, ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি) ও কমিউিনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ (সিপিজি) সদস্যদের গ্রামে পাহারা দিতে বলা হয়েছে। সুন্দরবন ছেড়ে লোকারয়ে বাঘ আসার খবর পেয়ে শরণখোলা থানার ওসি মো. সাইদুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এলাকাবাসী জানায়, শরণখোলা উপজেলার আওতাধীন বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ফরেস্ট স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন বন থেকে ভোল নদী সাঁতরে ওয়াপদার রাস্তা পার হয়ে বাঘ গ্রামে ঢোকে।
তবে, গ্রামের কারো কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় গ্রামবাসীকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি শিশুরা যাতে বাইরে না যায় সেজন্য অভিভাবকদের নির্দেশনা দিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ।
শরণখোলার সাইথখালী ইউপি সদস্য তালুকদার হুমায়ুন করিম সুমন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে এমাদুল হাওলাদার (৩৮) নামে এক কৃষক প্রথমে তার বাড়ির সামনে বাঘের পায়ের তাজা ছাপ দেখতে পান। তার মাধ্যমে জানতে পেরে আশপাশ এলাকায় খোঁজ নিয়ে এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দুই ধরনের বাঘের পায়ের অসংখ্য ছাপ দেখতে পায় স্থানীয়রা। টগরাবাড়ী গ্রামের শামছু হাওলদারের বাড়ি, আলকাজ হাওলাদারের বাড়ি ও রিয়ার হাওলাদারের বাড়ি বাঘের পাড়ার ছাপ রয়েছে।
এছাড়া, এলাকার ধান ক্ষেতেও বাঘের পাড়ার অসংখ দেখতে দেখা গেছে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. এনামুল হক বলেন, সংশ্লিষ্ট বন অফিসের বনরক্ষী, ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের মাধ্যমে বাঘের পায়ের ছাপের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া বাঘের বিচরণ এলাকার বাঘের পাড়ার ছাপ অনুসরণ করে দেখা যায় দুটি নয়, মাত্র একটি বাঘই সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে এসে বাঘটি আবার বনে ফিরে গেছে। মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। গ্রামবাসীর সমন্বয়ে বনরক্ষী, ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যরা গ্রাম পাহারায় রয়েছে।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান বলেন, ওই গ্রামের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বাঘের পায়ের অসংখ্য তাজা ছাপ চোখে পড়েছে। এলাবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৫ টুকরো করে হত্যা: বুকের অংশ ও পা দুটি উদ্ধার
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে বাঘ ঢুকে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বাঘ যাতে লোকালয়ে না ঢুকতে পারে সেজন্য সুন্দরবন বিভাগের ‘টাইগার কনজারভেশন প্রকল্পের’ মাধ্যমে ভারতের আদলে বনের পাশ দিয়ে প্লাষ্টিকের নেটের বেড়া দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
news24bd.tv তৌহিদ
