ছিঃ ছিঃ পাপ; নিজে করলে ঠিক আছে

ছিঃ ছিঃ পাপ; নিজে করলে ঠিক আছে

আমিনুল ইসলাম

এক ছেলের সাথে কথা বলছিলাম। সে নিজ থেকে'ই বলছে -আমার সার্টিফিকেটের বয়স ২৩ কিন্তু আমার আসল বয়স আসলে ২৭/২৮! 

আমি আসলে অবাক'ই হয়েছি, ছেলেটার বয়েস ২৩ শুনে! দেখে অন্তত বিশ্বাস করার উপায় নেই ওর বয়েস ২৩! দেখে মনে হবে ৩০/৩২! 

যা হোক, দেখে তো আর সবার বয়েস বুঝা যায় না। আমাদের দেশে বয়েস কমানোর একটা প্রচলন আছে। মানুষজন দুই-এক বছর বয়েস লুকায়; এমনটা জানা ছিল।

এখন তো দেখছি ৫/৬ বছরও লুকাচ্ছে! 

তবে ব্যাপারটা আমাদের দেশে প্রচলিত। এই নিয়ে আমার আপত্তি থাকার কথা নয়।  
তো, কথা প্রসঙ্গে ব্যাংকে টাকা রাখার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই ছেলে এইবার বলছে 
- আমার বাবা- মা ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ নেয়ার বিপক্ষে।

আমরা এই জন্য ব্যাংকে টাকা জমাই না।  
আমি জিজ্ঞেস করলাম -কেন? -সুদ নেয়া হারাম। আমার বাবা-মা, এটা একদম পছন্দ করে না।


 আরও পড়ুন: ভক্তদের জন্য পরীমনির তিনটি ছবি


আমার কাছে যুক্তি'টা পছন্দ হয়েছে। আমি বিশ্বাসী মানুষ। রোজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ছাড়া খুব একটা ধর্ম-কর্ম হয়ত আমি পালন করি না। তাই নিজেকে কোন দিন ধার্মিক কিংবা ধর্মভীরু বলতে যাবো না।  

তবে কেউ যদি ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে চলে, এতে আমার আপত্তি থাকার কথা নয়। আমার বরং ভালো'ই লাগে। আমি ছেলেটাকে বললাম 
-বাহ, বেশ তো। তোমার বাবা-মা নিশ্চয় বেশ ধার্মিক মানুষ।  

খানিক বাদে মাথায় একটা প্রশ্ন আসলো। তাই তাকে জিজ্ঞেস করলাম 
-আচ্ছা, এই যে তোমার বাবা-মা তোমার পাঁচ'টা বছর বয়েস লুকিয়েছে, তোমার জন্মের সাথে সাথে; এটা কি অন্যায় হয়নি? এটা কি পাপ হয়নি? 

ছেলেটার আসল বয়েস হচ্ছে ২৮, অথচ তার সার্টিফিকেটের বয়েস ২৩! খুব স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসতে'ই পারে-তার বাবা-মা স্কুলে ভর্তি করানোর সময় এমন একটা মিথ্যাকে কি করে প্রশ্রয় দিয়েছে! 

আমি জানি, বাংলাদেশে এটা খুব'ই প্রচলিত। আমি স্রেফ জিজ্ঞেস করেছি, হঠাৎ মাথায় প্রশ্ন'টা আসার কারনে।  

যেই বাবা-মা এতো'টা ধার্মিক। যারা কিনা ব্যাংকে টাকা পর্যন্ত জমায় না সুদ খাবার ভয়ে। তারা নিজের সন্তানের জন্ম নিয়ে এমন মিথ্যার আশ্রয় কেন নিল? 

আমার প্রশ্ন শুনে মনে হলো ছেলেটা আকাশ থেকে পড়েছে! ভাবখানা এমন- প্রশ্ন করে আমি অন্যায় করে ফেলেছি।  

ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে এক বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট মালিকের সাথে কথা বলছিলাম।  
ভদ্রলোক তিনটা কথা বললে, এর দুই'টা কথাই বলছেন ব্রিটিশ বিরোধী! 

-এরা দুনিয়ার খারাপ! সারা দিন মদ-জুয়া এইসবে পড়ে থাকে! এই জাতি'র ধ্বংস অনিবার্য! আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম -আপনি কি ড্রিঙ্ক করেন? 

তিনি মনে হলো আকাশ থেকে পড়লেন। রীতিমত রেগে মেগে বললেন 
-ছিঃ ছিঃ। আমি বাংলাদেশি। আমি কি করে মদ খাই। এইসব হারাম! 

ভালো কথা তিনি মদ খান না। এটা হারাম। আমার তো এতে আপত্তি থাকার কথা নয়। আমি বরং খুশি'ই হয়েছি শুনে। খানিক বাদে দেখি তিনি তার রেস্টুরেন্টে'র এক কাস্টমারকে মদ সার্ভ করছেন! শুধু সেটা'ই না। গিয়ে ৩২ দাঁত হেসে বলছেনে 
-এনজয় ইট! 

বাহ, কি চমৎকার বিষয়। এতক্ষণ ব্রিটিশদের ১৪ গোষ্ঠী উদ্ধার করলেন, আর এখন দেখি মনের আনন্দে মদ সার্ভ করে বেড়াচ্ছেন! 

তো, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম -আপনি রেস্টুরেন্টে মদ বেচেন কেন? 
- আরে, মদ ছাড়া রেস্টুরেন্ট চলবে নাকি! ধর্মভীরু হওয়া, ধার্মিক হওয়া আমার চোখে বেশ ভালো কাজ এবং ভালো চর্চা।  

ঠিক তেমনি কেউ যদি কারো বয়েস কমিয়ে রাখে কিংবা রেস্টুরেন্টে মদ বিক্রি করে, এই নিয়েও আমার আপত্তি নেই। যে যার দর্শন নিয়ে চলুক। আমার এতে একদম আপত্তি নেই।  
আমার আপত্তি'র জায়গা'টা হচ্ছে দ্বিচারিতায়।  

তুমি বলছ তোমার বাবা-মা সুদ খায় না। এই জন্য ব্যাংকে টাকা রাখে না! অথচ তোমার সেই বাবা-মা'ই আস্ত একটা মিথ্যার উপর তোমার জন্মের দিন-তারিখ দিয়ে রেখেছে! এই নিয়ে অবশ্য তোমার কোন আপত্তি নেই! 

আপনি বলছেন- মদ খাওয়া খারাপ! ব্রিটিশ'রা মদ-জুয়ায় বুঁদ হয়ে থাকে! আবার এই আপনি নিজেই মদ বিক্রি করছেন আর বলছেন- এনজয় ইট! অর্থাৎ নিজের স্বার্থে সব কিছু'ই ঠিক। কোন সমস্যা নেই। এমন দ্বিচারিতার তো কোন মানে নেই।  

গত পরশু আমি নোয়াখালীর ধর্ষকের সাথে পুলিশের হাসিমাখা একটা ছবি আপলোড করে লিখেছিলাম- দেখুন কি চমৎকার ছবি। মনে হচ্ছে পুলিশ হিরো'র সাথে ছবি তুলেছে! 

তো, সেখানে একজন এসে মন্তব্য করেছে- দোয়া করি একদিন এদের মা-বোন'রাও যাতে এভাবে ধর্ষিত হয়।  

কি অবাক কাণ্ড! এই পুলিশের মা-বোন কী অপরাধ করেছে? আর যদি অপরাধ করেও থাকতো, তাই বলে আপনি কি করে চাইছেন তারা ধর্ষিত হোক? তাহলে ধর্ষক আর আপনার মাঝে পার্থক্য থাকলো কি করে? 

এর চাইতেও অবাক ব্যাপার হচ্ছে- এই মন্তব্য করেছেন একজন নারী। আমি তাকে উল্টো এই নিয়ে প্রশ্ন করার পরও তিনি নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন! তো, এই হচ্ছে আমাদের চরিত্র! 

আমরা একটা আস্ত জাতি দাঁড়িয়ে'ই আছি ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের উপর। এতেও আমার কোন আপত্তি নেই। আমরা সবাই ভুল করি। অনেকে হয়ত বুঝতে পারি না- আমাদের চিন্তা-ধারা কিংবা কাজ গুলো আসলে দ্বিচারিতায় ভরা। আপনি তাদের ভুল'টা ধরিয়ে দিবেন? 

তাহলে'ই সেরেছে! উল্টো আপনাকে'ই তারা বিচ্যুত মানুষ হিসেবে ঘোষণা করবে! 
সমস্যা সমাধানের চাইতে সমস্যা তুলে ধরা এবং এইসব চিন্তাধারা যে "সমস্যা"; সেটা তো সবাইকে স্বীকার করতে হবে। এরপরই না সমাধানের প্রশ্ন।  

যেই সমাজে ৮০ ভাগ মানুষ এইসব চিন্তাধারাকে সমস্যা'ই মনে করে না। সেই সমাজ অন্তত আর যাই হোক সঠিক পথে নেই।

আমিনুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অস্ট্রিয়া। (ফেসবুক থেকে)

news24bd.tv নাজিম