মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য ছেলেটাকে মেরে ফেলা হলো

মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য ছেলেটাকে মেরে ফেলা হলো

আমিনুল ইসলাম

ছেলেটার দুই মাস বয়েসি একটা মেয়ে আছে। এই মেয়েটার ভবিষ্যৎ কি? এই মেয়েটা বড় হয়ে নিশ্চয় জানতে চাইবে- তার বাবার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে? সিলেটের বন্দরবাজারে রায়হান নামের ছেলেটাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছে। রাস্তায় হাঁটছিল, পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। রাতে বাসায় না ফেরায় তার পরিবার তাকে খুঁজছিল।

 

গভীর রাতে রায়হান ছেলেটা বাসায় তার চাচা'কে ফোন করে বলেছে- ‘টাকা নিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আসো, আমাকে বাঁচাও। ’

তার চাচা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যান। রায়হান কোথায় জানতে চাইলে একজন পুলিশ বলেন- তিনি (রায়হান) ঘুমিয়ে গেছেন।

এর খানিক বাদে পুলিশ জানায় সিলেট শহরের কাস্টঘর এলাকায় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ধরা পড়ে গণপিটুনিতে রায়হান আহত হন।

পরে তিনি মারা যান।  
অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে ওই এলাকায় কোন গণপিটুনি'র ঘটনা ঘটেনি। ওই এলাকার সিসি টিভি'তেও এমন কিছু পাওয়া যায়নি।  


আরও পড়ুন: রায়হানকে নির্যাতনে হত্যা: এসআই আকবর লাপাত্তা


মাত্র ১০ হাজার টাকা! হ্যাঁ, মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য ছেলেটাকে মেরে ফেলা হলো।  

ছেলেটা কাজ করতো একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। তার নিশ্চয় অনেক স্বপ্ন ছিল। মাত্র'ই জন্ম নেয়া দুই মাসের মেয়েটাকে বড় করবে। লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করবে।  

মাত্র ১০ হাজার টাকা'র জন্য সব শেষে হয়ে গেল। না, আমি কোন পুলিশের শাস্তি চাই না।  
কারন আমি জানি এদের শাস্তি কখনো হয় না। বড় জোর প্রত্যাহার করা হয় কিংবা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বদলি করা হয়।  
তাই বিচার চাইতে আসিনি।  

না, আমি বলবো না- রাষ্ট্র'কে দুই মাস বয়েসি এই বাচ্চা মেয়েটার দায়িত্ব নিতে হবে।  
যেই রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মানুষ নিজেরা'ই চাঁদাবাজী করে বেড়ায়। মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য জলজ্যান্ত মানুষকে মেরে ফেলে; তাদের কাছে আর কিইবা চাওার থাকতে পারে।  

আমার এক বন্ধু আজ থেকে ১২ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করছিল আমার সঙ্গে। প্রতিদিন বলত 
-আহা, যদি পুলিশ হতে পারতাম!
দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিল সে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছি 
-শিক্ষকতা ছেড়ে পুলিশে কেন? 
-সবাই ভয় পাবে। মানুষজন টাকা বাসায় এসে দিয়ে যাবে। আত্মীয়-স্বজন কেউ ভয়ে কথা বলবে না।  
আমার এই বন্ধু কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশ'ই হয়েছে।  
এটা তো সে'ই রাষ্ট্র, যেখানে মানুষ যাতে ভয় পায় এই জন্য সবাই পুলিশ হতে চায়। অথচ চাকরি'র ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়ে বলে- দেশ সেবার কথা। দেশ প্রেমের কথা! 
যেই রাষ্ট্র আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছে মিথ্যার উপর; তাদের কাছে কোন চাওয়া থাকতে নেই।  
রায়হান নামের এই ছেলে'কে আপনাদের পুলিশ নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। না; বিচার চাই না।  
আপনাদের কাছে হাত জোর করে মিনতি করছি- অন্তত দুই মাসের এই বাচ্চা মেয়েটাকে রেহাই দেন।  
১০ হাজার টাকার জন্য মানুষটাকে মেরে ফেলেছেন। এখন বলছেন- ছিনতাইয়ের ঘটনায় গণপিটুনি'তে তার মৃত্যু হয়েছে।  
এই মেয়েটা কী বড় হয়ে জানবে- তার বাবা একজন ছিনতাইকারী ছিল? তার বাবাকে গণপিটুনি'তে মেরে ফেলে হয়েছে? 
আপনাদের যত ইচ্ছা হয় পুলিশফাঁড়ি'তে নিয়ে হত্যা করুন।  
তবুও এভাবে নিরাপরাধ মানুষ গুলোকে ছিনতাইকারী বানিয়ে ফেলেন না।  
হত্যা করে বলুন- হার্টের অসুখে মারা গিয়েছে!  তাও মেনে নিবো। দয়া করে নিরাপরাধ মানুষ গুলোকে ইয়াবা ব্যবসায়ি কিংবা ছিনতাইকারী বানিয়ে ফেলেন না।  

এদেরও পরিবার আছে। সন্তান আছে। একজনকে মেরে ফেলছেন, ভালো কথা। কিছু চাওার নেই। দয়া করে পুরো পরিবারকে সামাজিক ভাবে দিনে-রাতে হাজার বার হত্যা করবেন না।  

আমিনুল ইসলাম ,বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক (অস্ট্রিয়া)

news24bd.tv নাজিম