পরিবার হোক সমাধানের জায়গা

পরিবার হোক সমাধানের জায়গা

তাসলিমা পারভেজ

ধর্ষণ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের অসভ্য ঘটনা কিংবা নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে দেশে জনমত আছে। ধর্ষণের সাজা বাড়ানোর দাবির প্রেক্ষাপটে সরকার সাজা যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ডে উন্নীত করেছে। তারপরও এসব অপরাধ ঠেকাতে পরিবার কীভাবে সহায়তা করতে পারে, তা আলোচনা করতেই আজকের লেখা।

আমাদের সব কিছুর একক হলো পরিবার।

শহুরে সোসাইটি, গ্রামীণ পাড়া, ইউনিয়ন, নগরের একক ইউনিট পরিবার। কাজেই  বিচ্ছিন্নভাবে পরিবারগুলোতে অস্থিরতা থাকলে সামগ্রিকভাবে তার ছায়া পড়ে দেশের সবকিছুতে। তাই এখন আমার মনে হয়, কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের পরিবারভিত্তিক পরিকল্পনা নেওয়ার দরকার আছে।

এই যেমন ধরুন, পরিবারে যদি মেয়ে শিশু ও ছেলে  শিশূকে সমান চোখে দেখা হয়, দুজনের জন্যই সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হয়, তাহলে একটা সময়ে বহুত্তর অর্থে দেশে নারী ও পুরুষের মাঝে তেমন কোনো ব্যবধান থাকবে না।

তবে সেই লক্ষ্য অর্জন করা একটু কঠিন। কারণ দেশের সব পরিবার সমান অর্থ-বিত্ত কিংবা বুঝতে পারার ক্ষমতা রাখে না। ফলে, সমাজে শিক্ষা ও গঠনমূলক তথ্যের প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। দেখতে হবে সব পরিবার যেন সমানভাবে শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে।   

বাংলাদেশে দুই ধরনের পরিবার আছে। একক পরিবার ও যৌথ পরিবার। গ্রামে যৌথ পরিবার বেশি, শহরে একক পরিবার বেশি। পরিবার ভালবাসার ও নির্ভরতার প্রতীক হলেও একক পরিবারে সময়ের বড়ো টানাটানি থাকে । বিশেষ করে যদি পরিবারের দুজনই চাকরিজীবী হয় তাহলে সংকট ঘণীভূত হয়।

ফলে, মানবিক গুণ নিয়ে বড় হওয়ার জন্যে শিশুকে যতোটা সময় দিতে হয় ততোটা দেওয়া হচ্ছে কী না, তা দেখা জরুরি। কারণ ভবিষ্যতে এসবের প্রভাব মানুষের জীবনে থেকে যায়।

যৌথ পরিবার এক নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ। সুখ-দুঃখ, জরা-ব্যাধি ও বিভিন্ন প্রতিকূলতা তাদেরকে দাবিয়ে রাখতে পারে না। যৌথ  পরিবারের মাধ্যমে সহযোগিতা ও সহানুভূতির মনোভাব গড়ে ওঠে। একে অপরে ভ্রাতৃত্বের  বন্ধনে আবদ্ধ হয়। শিষ্টাচার, ভদ্রতা, নম্রতা ও মানবিকতা শেখানোর জন্যে সেখানে অনেক মানুষ থাকে। যৌথ পরিবারের সদস্যরা সহজেই পথভ্রষ্ট হয় না। কারণ তা পরিচালনা করার জন্যে অনেক মানুষ থাকে। তবে যৌথ পরিবারের সদস্যদের মানবিক গুণ সম্পর্কে জানতে হবে। কেউ যদি মানবিকতার বিষয়গুলো সম্পর্কে না-ই জানে , তাহলে সে শেখাবে কী ?

ফলে এখন সময় এসেছে নিজের পরিবারকে শিক্ষিত ও মানবিক করার দায়িত্ব নিজেদেরই নেওয়ার। আমার কথা স্বার্থপরের মতো শুনাতে পারে, নিজেরাই সবকিছু করব, তাহলে সরকার কী করবে ? তাই না ?

আরও পড়ুন: হৃদরোগে আক্রান্ত রিজভী, ‌‘অবস্থা ক্রিটিক্যাল’

আসলে দেশ মানে তো অনেক অনেক পরিবার নিয়ে গড়ে উঠা বড় একটি পরিবার। সরকার সেই পরিবার পরিচালনা করে। ফলে, সরকার তার দায়িত্ব পালন করবে, আমরাও পরিবার হিসেবে সমাজের দুষ্টক্ষতগুলো ঠিক করার কাজ করে যাব। ভালো সমাজ গড়ার এটা একটা উপায় হতে পারে।

তাসলিমা পারভেজ , অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর