শহুরে ফিটবাবু হতে চাইনি কখনো

শহুরে ফিটবাবু হতে চাইনি কখনো

জসিম মল্লিক

গোছানো, কৃত্তিম আর অতি সুশৃঙ্খল শহুরে জীবন আমাকে টানে না, তাই আমি সবসময় আমার ফেলে আসা স্নিগ্ধ গ্রামীণ পটভূমিতে ফিরতে চাই। আমি শহুরে একজন ফিটবাবু হতে চাইনি কখনো।  

অনর্গল বিজাতীয় ভাষায় কথা বলতে হবে এটা আমি মেনে নিতে পারি না। কিন্তু আমার জীবনে সবকিছু অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটেছে।

এসব কোনোকিছুই ঘটার কোনো প্রয়োজন ছিল না, কথাও ছিল না। শহুরে, সুবেশি, শুদ্ধভাষার অতি অধুনিক জীবন সঙ্গীও কখনো প্রত্যাশা করিনি। সত্যি বলতে আমার সবসময় একলা থাকার কথা ছিল। কিন্তু মানুষ যা ভাবে হয় তার উল্টো।
 

আমার নির্জন, নিস্তরঙ্গ, নিঃসঙ্গ কিন্তু আনন্দে ভরপুর বরিশালের জীবন ছেড়ে কুৎসিত প্রতিযোগিতাময় ঢাকা শহরে আসাটাও ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী, সুন্দর নারী, গাড়ি, সফলতার জন্য লড়াই, সাংবাদিকতা বা বই লেখা এসব আমার জগত হওয়ার কথা ছিল না। কসমোপলিটন জীবনের অতি চালাক মানুষদের সাথে আমি একদম পেরে উঠিনা। আসলে আমার পৃথিবীতে আগমনটাই একটা আকস্মিকতার ঘেরাটোপে বন্দী।

আমার আজও ইচ্ছা করে গাছের তলায় শুয়ে থেকে রাত পার করে দিতে। বৃষ্টিতে ভিজে রোদে পুড়ে বাঁচতে। ছোটবেলায় কত এ রকম করেছি। ভুতুরে স্বভাবের ছিলাম। সারা রাত বৃষ্টি হচ্ছে। কী হিংস্র, কী আবেগ আর রিরংসা ছিল বৃষ্টির। সে যেন এক লুটেরা, ধর্ষণকারী, ধর্মহীন বৃষ্টির প্রমাদ। সমস্ত শরীর ভিজা, স্যাঁতানো, সাদা আর পিছল হয়ে যেতো। চুল, মাথা, গা সবকিছু পানিতে ডোবা, কাদামাটিতে মাখামাখি।


আরও পড়ুন: আল্লাহ তাকে রক্ষা করো


মৃতবৎ প্রলম্বিত পাখির ডাক শুনে ঘুম ভাঙত আমার। পাখিরা তখনও বাসা ছাড়েনি। শুধু পরস্পরের ডাক পাঠাচ্ছে, ওঠো, জাগো। একসময় আলো ফোটে, পাখিরা উড়ে যায়। আমার ঊরুর উপর দিয়ে একটি কেঁচো খুব ধীরে ধীরে ঘন্টায় মাত্র কয়েক মিটার গতিবেগে কোথাও চলেছে। আমি তাকে যেতে দেই। আলো আসছে। ক্রমে আরো আলো আসছে। গাছের গুরিতে হেলান দেই। কোলের ওপর রাখা দু’টি করতলের দিকে চেয়ে থাকি। করপুট ভরে উঠে রক্তকমলের মতো সোনালি আলোয়..।

লেখক, সাংবাদিক, কানাডা

সম্পর্কিত খবর