৮০ শতাংশ গার্মেন্টস কর্মীর চাকরি কেড়ে নেবে রোবট!

৮০ শতাংশ গার্মেন্টস কর্মীর চাকরি কেড়ে নেবে রোবট!

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

পৃথিবীতে দৈনিক ছয় কোটি মানুষ গার্মেন্টস খাতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদের আয়ের পথ সুগম হয়েছে। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাণিজ্যভিত্তিক পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ‘মুভিং আপস্ট্রিম’ নামে একটি ভিডিও সিরিজ তৈরি করেছে। যার একটি পর্বে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অটোমেশন প্রক্রিয়া কী ধরনের প্রভাব রাখতে পারে তা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটির হিসাবে, বাংলাদেশে ৩৫ লাখ মানুষ গার্মেন্টস শিল্পে কাজ করে। অধিকাংশই ৬৪ মার্কিন ডলার মাসিক বেতনে কাজ করে; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৩০০ টাকা। ভিডিও এপিসোডে বলা হয়েছে, প্রায়ই বড় ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয় শত শত শ্রমিকের, কাজ করতে গিয়ে পুড়ে লাশ হয়ে যায়। কারও কারও আবার সন্ধ্যান মেলেনা।

বেতন স্বল্পতা কিংবা অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করা এসব বিপদের মাঝে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে এসেছে নতুন সমস্যা।

সেটা হচ্ছে অটোমেটিক মেশিনের মাধ্যমে কাপড় উৎপাদন। অনেকগুলো গার্মেন্টস এরই মধ্যে এই জার্মান রোবটের ব্যবহার শুরু হয়েছে, যারা সোয়েটার সেলাই করতে সক্ষম। এই সোয়েটারগুলো বিশ্বখ্যাত পোশাক ব্র্যান্ড এইচএন্ডএম এবং জারার। এতদিন এই কাজগুলো করতো সাধারণ শ্রমিকরা।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক জন ইমন্ট চলতি বছরের গোড়াতে বাংলাদেশ সফরে আসেন। তিনি জানান, ‘আমি ঢাকার কয়েকটি গার্মেন্টসে ঘুরে দেখেছি। সাধারণ শ্রমিকরা যেখানে সোয়েটার হাতে বানাচ্ছে, সেখানে অটোমেটেড মেশিন একই কাজ অনেক দ্রুততার সঙ্গে করছে। এর ফলে এটা অনেকটাই নিশ্চিত যে অদূর ভবিষ্যতে শ্রমিকদের জায়গা নেবে এই রোবটগুলোই। ’

তার সঙ্গে আলাপকালে গার্মেন্টস শ্রমিকরা এই আশঙ্কা ব্যক্ত করেন যে, তাদের চাকরি থাকবে না। সে কারণে তারা চিন্তিত।
এতদিন পর্যন্ত অটোমেটেড মেশিনের এই বহুমুখী প্রতিভা ও দক্ষতা ছিল না। কিন্তু মেশিন লার্নিং ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজ্যান্স প্রযুক্তির কল্যাণে এখন মানুষ হাতে যেরকম কাজ করতে পারে, তার প্রায় কাছাকাছি কাজ করতে সক্ষম মেশিন।

এটা সত্যিকার অর্থেই গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য হতাশার খবর। অদূর ভবিষ্যতে নতুন ধরনের আরও অটোমেটেড মেশিন আসতে যাচ্ছে, যেগুলো আরও জটিল ও সূক্ষ্ম কাজ করতে সক্ষম হবে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অটোমেটেড মেশিনের প্রচলন চালু হলে বেকার সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের সমস্যা আরও প্রকট হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে ২০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা উচিত। কিন্তু গার্মেন্টস খাতে কর্মসংস্থানের সংখ্যা প্রতি বছর ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আগামী বিশ বছরে প্রতি মাসে প্রায় ১০ লাখ জনবল কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে। অন্য একটি পরিসংখ্যানে জানা গেছে, যদি রোবটগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে সমর্থ হয়, তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো কোনো দেশের গার্মেন্টস খাতের ৮০ শতাংশের বেশি শ্রমিক চাকরি হারাতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্যারি নর্থল্যান্ড বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে কাজ করা নারীদের অধিকাংশই তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। আর এই অটোমেটেড মেশিনের ফলে নিম্ন দক্ষতার চাকরিগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) অধ্যাপক এরিক বার্নিওলফসন বলেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র সমাধান শিক্ষার বিস্তার।

তিনি বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষার বিস্তারের মাধ্যমে তাদেরকে ইউরোপ, আমেরিকা এবং প্রাচ্যের জাপানসহ উন্নত দেশগুলোর কাতারে উঠে আসতে হবে। উন্নতির এ পথটি সহজ নয়। তবে এটা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

তবে আশার কথা হল, অটোমেটেড মেশিন সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়তে অন্তত আরো ১০ বছর সময় লাগবে। আর রোবটগুলো ব্যয়বহুল হওয়ায়  উন্নয়নশীল দেশে এর প্রচলন কম হবে বলেও মনে করছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক। এবার দেখার পালা কী ঘটে অদূর ভবিষ্যতে।

সম্পর্কিত খবর