আইসিএসডি নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রকে হারাল বাংলাদেশ

আইসিএসডি নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রকে হারাল বাংলাদেশ

সহসভাপতি পদে তৃতীয় সর্বাধিক ভোট ড. মিঠুন মোস্তাফিজের
অনলাইন ডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে আইসিএসডি’র ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হয়েছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় সন্ধ্যে পৌণে ৭টায় আইসিএসডি’র আন্তর্জাতিক নির্বাচন কমিশন ভোটের ফল প্রকাশ করে।

সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক এই থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল মিডিয়া এডভাইজার এবং নোবেল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-ইউএস’র ভিজিটিং প্রফেসর ড. মিঠুন মোস্তাফিজ ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হয়েছেন।

তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান।

তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক উন্নয়নবিদ, ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ডাকোটার ডিপার্টমেন্ট অব সোস্যালওয়ার্কের প্রফেসর ড. কারেনলি বার্কডুল।

বৈশ্বিক এই সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন অষ্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টুয়ার্ট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব সোস্যালওয়ার্কের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মনোহর পাওয়ার। তিনি পেয়েছেন ৭০ ভোট; তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যাপক ড. ভিজয়ন পিল্লাই পেয়েছেন ৩০ ভোট।

আইসিএসডি’র নির্বাহী বোর্ডের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে ড. মিঠুন মোস্তাফিজ প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন।

এর আগে দেশের কেউ এই আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেননি। ড. মিঠুন মোস্তাফিজ পেয়েছেন তৃতীয় সর্বাধিক ৬৮ ভোট; তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক ড. কারেনলি বার্কডুল পেয়েছেন ৩৬ ভোট।

গেল পহেলা অক্টোবর থেকে শুরু করে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বিশেষায়িত ভোটিং সফটওয়ারের মাধ্যমে দূর নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে চলে ভোট গ্রহণ। আইসিএসডি সদস্যরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভোট প্রদান করেন।

পরিকল্পনা ও সংগঠন মূল্যায়ন এবং বিশেষ প্রকল্পের জন্য সুইডেনের জাভেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কমলাসিং রামবারি এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের ওয়েইন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ওয়াল্টার ম্যাকাবি দুজনেই ৭০ ভোট পেয়ে সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

এছাড়া, ৬৫ ভোট পেয়ে শ্রীলঙ্কার ইউনিভার্সিটি অব পেরাডেনিয়ার ড. সরথ গ্যামলাথ, ৬৪ ভোট পেয়ে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব কর্ণাটকের লক্ষ¥ণা জি, ৬৪ ভোট পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সোস্যালওয়র্কের এমিরিটাস ডিন, প্রফেসর ড. ব্রিজ মোহন, ৭০ ভোট পেয়ে গ্রিসের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট এট্টিকার সহকারী অধ্যাপক ড. এলেনি পাপুলি, আইসিএসডি’র নির্বাহী বোর্ডে মেম্বার এট লার্জ নির্বাচিত হয়েছেন। চূড়ান্ত ভোটার তালিকার ১০১ সদস্যের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১০৫ জন। ভোট প্রদানের হার ৮৭% ভাগ।

আগামী চার বছর সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণা থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব দেবেন নব-নির্বাচিত বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।

গেল ৩ সেপ্টেম্বর আইসিএসডি’র আন্তর্জাতিক নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি- এনটিএনইউ- এর অধ্যাপক ড. রোর সান্ডবাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হন। কমিশনের অন্য দুই সদস্য হলেন- যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ফ্রেড্ডি উইলসন এবং ভারতের উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. পারমিতা রায়।  

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. রোর সান্ডবাই বলেন, আমরা সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে আইসিএসডি নির্বাচন-২০২০ সম্পন্ন করেছি। আমাদের চেষ্টা ছিল ভোটারদের কাছে একটি সহজ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেবার। প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা তা’ করতে পেরে আনন্দিত।

এদিকে, সংস্থাটির নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও অষ্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টুয়ার্ট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব সোস্যালওয়ার্কের চেয়ারম্যান ড. মনোহর পাওয়ার বলেন, ‘এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবী জুড়ে বিদ্যমান সামাজিক অস্থিরতা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে বাঁধা সৃষ্টি করছে। গণহত্যা, ধর্ষণ এবং বর্ণ বৈষম্যের মতো সামাজিক অস্থিরতার শিকার হচ্ছে মানুষ। বৈশ্বিক এই সামাজিক সঙ্কট হতে উত্তোরণে কার্যকরী গবেষণা সম্প্রসারণ, এ সংক্রান্ত জ্ঞান ও শিক্ষার বিকাশ এবং সরকারগুলোকে দক্ষতা সহায়তা দিয়ে সঠিক নীতি কাঠামো প্রণয়নে সহযোগিতা করবে আইসিএসডি। এসকল কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেবে আগামী দিনের নতুন নেতৃত্ব। ’

সংস্থাটির নব-নির্বাচিত ভাইস-প্রেসিডেন্ট ড. মিঠুন মোস্তাফিজ বলেন, “যে কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারার চেয়ে গর্বের আর কিছু নেই। এ সম্মান বাংলাদেশের মানুষের। বৈশ্বিক ফোরামে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিকাশে আমার সীমিত সামর্থের সবটুকু উজার করে দিতে পিছপা হবো না। ’’

১৯৭৮ সালে অষ্ট্রেলিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি। এতে রয়েছেন সোস্যালওয়ার্ক এডুকেটরস, সামাজিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সংশ্লিষ্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয় এর নির্বাহী বোর্ড। অস্ট্রেলিয়ায় সদর দপ্তরসহ আইসিএসডির রয়েছে ইউরোপ ও এশিয়া-প্যাসিফিক ব্রাঞ্চ। কর্মযজ্ঞ রয়েছে উত্তর আমেরিকায়। ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকায় কর্মপরিধি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে আইসিএসডি’র।  

সংস্থাটির প্রাতিষ্ঠানিক সদস্য হিসেবে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। সোস্যালওয়ার্ক এডুকেটর ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. কে. কিন্দুকা এবং ড. আর্থার কাটজ আইসিএসডি প্রতিষ্ঠা করেন।

গত বছর সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আন্তর্জাতিক জোট- আইসিএসডিএপি’র সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে। এ সম্মেলনে সহযোগী আয়োজক ছিল সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড।

news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর