করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে স্লোভেনিয়াতে জোনভিত্তিক পরিকল্পনা!

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে স্লোভেনিয়াতে জোনভিত্তিক পরিকল্পনা!

রাকিব হাসান রাফি

স্লোভেনিয়াতে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে জোনভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয় স্লোভেনিয়ার বর্তমান অর্থমন্ত্রী জিড্রাভকো পোচিভালশেকের পক্ষ থেকে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জোনভিত্তিক এ পরিকল্পনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

অর্থমন্ত্রী জিড্রাভকো পোচিভালশেক ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সমগ্র স্লোভেনিয়াকে রেড জোন এবং অরেঞ্জ জোন এ দুই অংশে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যা আজকের থেকে কার্যকরী হতে চলেছে।

যে সকল অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে সংক্রমণের হার বেশি সেঅঞ্চলকে রেড জোনের অন্তর্ভূক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


অন্যদিকে পশ্চিম স্লোভেনিয়াতে অবস্হিত গোরিস্কা এবং প্রিমোরস্কা ও উত্তর-পূর্ব স্লোভেনিয়ার কিছু অঞ্চলকে অরেঞ্জ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এ সকল অঞ্চলে করোনা সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে অনেকটা নিম্নমূখী। রাজধানী লুবলিয়ানা থেকে শুরু করে বাকি সব অঞ্চল রেড জোনের আওতাভুক্ত।  

রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলোতে আংশিকভাবে লকডাউন চালু থাকবে।

বিশেষ কোনও প্রয়োজন ছাড়া রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলোতে কেউ এক কমিউনিটি থেকে অন্য কমিউনিটিতে যাতায়াত করতে পারবেন না।
উল্লেখ্য, প্রশাসনিক সুবিধার জন্য স্লোভেনিয়াকে অনেকগুলো ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা হয়েছে।

একেকটি ক্ষুদ্র অংশ একেকটি কমিউনিটি হিসেবে পরিচিত। এমনকি কোনও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অরেঞ্জ জোন থেকে কেউ রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত কোনও এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন না।  

তবে অরেঞ্জ জোনভুক্ত অঞ্চলগুলোতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তেমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। পাশাপাশি রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলোতে সকল ধরনের বার, রেস্টুরেন্ট ও কফিশপ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে কোনও রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে কেবলমাত্র পার্সেল খাবার বিক্রি করতে পারবে। এছাড়াও সকল ধরনের স্পোর্টস ইভেন্টের পাশাপাশি কোনও একটি নির্দিষ্ট স্থানে এক সাথে দশ জনের অধিক মানুষের সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।  

রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলোতে বাহিরে বিশেষ করে উন্মুক্ত স্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক।
রেস্টুরেন্ট, বার কিংবা কফিশপগুলোতে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও সেলুন কিংবা পার্লারগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সেলুন কিংবা পার্লারগুলোতে একই সময়ে সেবাদাতা এবং একজন খদ্দের ছাড়া তৃতীয় কোনও ব্যক্তির উপস্থিতিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
অরেঞ্জ জোনের অন্তর্ভুক্ত এলাকাগুলোতে সব কিছু স্বাভাবিক রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বার, রেস্টুরেন্ট ও কফিশপগুলো সেখানে যথারীতি খোলা থাকবে।

তবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বিবেচনায় কেবলমাত্র এ সকল বার, রেস্টুরেন্ট ও কফিশপগুলোর কর্মঘণ্টা সকাল ছয়টা থেকে রাত সাড়ে দশটার মধ্য রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

স্লোভেনিয়ার বাম ও উদারপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো করোনা মোকাবেলায় সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। তাঁরা দ্বিতীয় ধাপে করোনার  বিস্তার রোধ করতে পুরো স্লোভেনিয়াতে কঠোর লকডাউন ও জরুরি অবস্থা আরোপের পক্ষপাতি।
এমনকি এ মুহূর্তে সাময়িকভাবে  প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে স্লোভেনিয়ার সীমান্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে স্লোভেনিয়ার অর্থমন্ত্রী জিড্রাভকো পোচিভালশেক বলেছেন, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কথা বিবেচনা করে এ মুহূর্তে পরিপূর্ণভাবে লকডাউন আরোপ করা হচ্ছে না তবে পরে যদি দেশটিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আরও বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে হয়তো বা নতুন করে কঠোর কিছু পদক্ষেপ তাঁর সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হবে।

ফার্স্ট ওয়েভে গোটা ইউরোপের মধ্যে স্লোভেনিয়া করোনা মোকাবেলায় নিজেদেরকে একটি রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল।
এমনকি গত ১৫ ই মে ইউরোপের প্রথম কোনও দেশ হিসেবে করোনা মহামারির অবসানের ঘোষণা দিয়েছিলো স্লোভেনিয়া। অথচ সেকেন্ড ওয়েভে এসে দেশটির চিত্র পুরোপুরি বদলে গিয়েছে।

গত মার্চ মাসের চার তারিখে স্লোভেনিয়াতে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শনাক্ত হওয়ার পর থেকে শুরু করে মে মাসের এ সময় পর্যন্ত স্লোভেনিয়াতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ছিলো ১৪০০ এর কিছু বেশি।

সেখানে বিগত দুই দিনেই দেশটিতে নতুন করে ১৪০০ জনের শরীরে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় স্লোভেনিয়াতে নতুন করে ৭৪৫ জন প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন।

দৈনিক সংক্রমণ বিবেচনায় এ যাবৎকাল পর্যন্ত যেটি সর্বোচ্চ। এছাড়াও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় স্লোভেনিয়াতে আরও একজনের মৃত্যু ঘটেছে।

স্লোভেনিয়ার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত স্লোভেনিয়াতে করোনা ভাইরাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১০৬৮৩ জন, এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ১৭৬ জন এবং চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৫৬৮৯ জন।


আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে পারিবারিক কলহের জেরে ঘরে আগুন, দগ্ধ ৫


 

দ্বিতীয় ধাপে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ডসহ বেশ কিছু দেশ ইতোমধ্যে স্লোভেনিয়াকে রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত করেছে। এখন থেকে স্লোভেনিয়া থেকে যদি কেউ এ সকল দেশে প্রবেশ করেন তাহলে তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে করোনা টেস্টের নেগেটিভ সনদ বহন করতে হবে।

অন্যথায় তাদেরকে ১০ থেকে ১৪ দিনের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারান্টাইন পালন করতে হবে। প্রতিবেশী দেশ হাঙ্গেরির সাথে বর্তমানে স্লোভেনিয়ার সীমান্ত সংযোগ পুরোপুরিভাবে বন্ধ রয়েছে।

ইতালি এবং অস্ট্রিয়ার ক্ষেত্রে কেবল মাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি চেক পয়েন্ট সকল জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বাকি চেক পয়েন্টগুলো কেবলমাত্র অস্ট্রিয়া কিংবা স্লোভেনিয়া অথবা ইতালির নাগরিকদের ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।

লেখক: রাকিব হাসান রাফি, শিক্ষার্থী

news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর