ফেসবুকে লেখালেখি ক্লিশে লাগে

ফেসবুকে লেখালেখি ক্লিশে লাগে

কাবেরী গায়েন

ফেসবুকে লেখালেখি ক্লিশে লাগে। ফেসবুকে বিপ্লব আরো বেশি ক্লিশে। যেখানেই যাই, কিছু উদ্ধার করতে চাওয়ার ভাবভঙ্গি, কী ক্লিশে, কী ক্লিশে! বেশ বুঝি ফেসবুক বিপ্লবে ঘটনার ঘাট পাল্টায় না।  

পথে না নেমে কি-বোর্ড টিপে বিপ্লব করেছি ভাবতে ভাবতে যারা বয়স পার করেছেন পঞ্চাশ-ষাট, অন্য প্রায় সকল বস্তুগত-অবস্তুগত বিষয় ও চেতনাকে গালি দিয়ে, তাদের দেখে কিছুদিন আগেও আনন্দ হত।

এখন কেমন 'আহা' বলতে ইচ্ছে করে। এই 'আহা' আমি অবশ্যই নিজেকেও বলি।
 
আনন্দ দেবার মত, চিন্তায় রং লাগানোর মত লেখা পেতে সেই বইয়ের আশ্রয়েই যেতে হয়। অথচ অপ্রয়োজনীয় কাজ দেখা এবং পড়ার অবিরাম স্রোতে পড়ার অবকাশ হয়ে ওঠে না।
অনেকটা হুমায়ুন আহমেদ-এর বই পড়ার মত। তাঁর বই পড়া মানে যে আসলে কোন পড়া নয়, বরং পড়ার সময় থেকে সময় ফেলে দেয়া, এটা সারাজীবনেও বুঝে ওঠা হয় না অনেকের।


আরও পড়ুন: চাঁদে ফোর-জি চালু করতে চায় নাসা


অকাজের যত কাজের ভিড়ে অনেক বছর যে পড়ার সময় পাচ্ছি না, এটা সম্যকভাবে বুঝে ওঠার পরে খানিকটা হতাশ লাগছে। আর মাত্র আট মাস। এরপর অকাজের কাজ থেকে খানিক মুক্তি মিলবে। ফেসবুকে এখন অবশ্য খুবই অনিয়মিত।   একটু বিশুদ্ধ ঘুম এবং ছোট কোন প্রিয় বাক্য বা কবিতা বা গদ্য পড়া বা আওড়ানো বা কোন স্মৃতির মূহুর্ত আওড়ানো কিংবা কিছু না করার বোধে মূহুর্ত কাটানো যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, সেই কথা বুঝতে বুঝতে বড় দেরি হয়ে গেল। আফসোস! 

আমি কাজের মানুষের ভেক ছেড়ে অকাজের, আলস্যের অবকাশ পাবার প্রতীক্ষায় ক্ষণ গুনছি। একই সাথে ফেসবুক নামের অলস, পরোক্ষ ও পাঠবিমুখ মানুষ তৈরির কারখানা থেকে নিজেকে মুক্ত করারও। বরং করোনা শেষ হলে, দু/একজন কাছের মানুষ যারা আছেন তাদের সাথে কালেভদ্রে মুখোমুখি ঘন্টা দুই/তিনেকের মোবাইল্মুক্ত পরিসরে কথা বলার অপেক্ষায় আছি।   

মুখস্ত প্রতিবাদ এবং ছদ্ম কাজ থেকে অলস-কর্মহীন জীবনের জন্য সত্যিই মুখিয়ে আছি। সবচেয়ে ভালো হত যদি কেজো মানুষদের ভুল স্বর্গ থেকে অকেজো মানুষদের কোন জগতে ঝুপ করে নেমে ঘুমিয়ে থাকতে পারতাম! এবং মাঝে মাঝে জেগে পড়তে পারতাম, ''সেখানে সবাই বলে, সময় মূল্যবান, কেউ বলে না সময় অমূল্য'' ধরণের অকেজো কথা!

কাবেরী গায়েন, শিক্ষক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। (ফেসবুক থেকে)

news24bd.tv নাজিম