মনে রাখবেন, সুদিনের পাখিরা উড়াল দেবেই!

মনে রাখবেন, সুদিনের পাখিরা উড়াল দেবেই!

বাণী ইয়াসমিন হাসি

বাংলাদেশ কৃষকলীগ, জাতীয় শ্রমিকলীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ এর কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ফেসবুকের দেয়াল অভিনন্দন বার্তায় সয়লাব।

একটা ব্যাপার খুব চোখে লাগল। যার হাত ধরে সংগঠনে প্রবেশ বা পদ পদবি পাওয়া নতুন পোস্ট পদবি পেয়ে সবার আগে ওই মানুষটাকেই ভুলে যাওয়া!

আওয়ামী লীগে নেতার অভাব নেই।

তারাই নিজের অনুসারী বাড়াতে গিয়ে অনুপ্রবেশের মতো কাজগুলো করেন। আশরাফ ভাই চলে যাওয়ার পর আগাছাদের উপদ্রব শতগুণ বেড়েছে। আমাকে কেউ বলতে পারেন ইউরোপ আমেরিকায় কেন শ্রমিক লীগ কিংবা কৃষক লীগের কমিটি থাকবে? ওখানে তাদের কী কাজ? কেন এসব কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়? এই আওয়ামী লীগ বড্ড অচেনা লাগে। এই সংগঠন বঙ্গবন্ধুর হতে পারে না।
গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের নেত্রী শেখ হাসিনার হতে পারে না।  
আগাছা বেছে ফেলতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিকল্প নেই। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। আরও এগিয়ে যাবে। রাজনৈতিক সততা জাদুঘরে চলে যেতে পারে না।

এ সততাকে ফিরিয়ে আনতেই হবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেকের ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ আর রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা সেই অসাধ্য সাধন করেছেন।

ফিনিক্স পাখির মতন আওয়ামী লীগকে আবার নতুন করে জাগিয়ে তুলেছেন। নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। সেই রাজনীতি গত ১২ বছরে উইপোকা নীরবে খেয়ে ফেলছে।

দলের দুঃসময় এলে এইসব হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী সুযোগসন্ধানীদের যে খুঁজে পাওয়া যাবে না সেটি দলের হাই কমান্ডের উপলব্ধি করার সময় এখন। এইসব বসন্তের কোকিল বা কাউয়াদের এখন দূরে সরানোর সময়। তা না হলে নকলের ভিড়ে আসল হারিয়ে গেলে দলকে চড়া মূল্য দিতে হবে।

মিছিলের সব কর্মী নেতা হতে পারে না, কখনো বা আবার নূন্যতম স্বীকৃতিটুকুও মেলে না। চোখের জলে সংগঠন থেকে বহুদূরে চলে গেছে এমন কর্মীর সংখ্য লক্ষ হাজার।

সোনা ফেলে চকচকে পিতলের মোহ কাটানোটা সত্যিই খুব জরুরি।
আজ সকালে ঘুম ভেঙে ফোন হাতে নিয়ে প্রথমে একটা ভিডিও পেলাম। এর কয়েক মিনিট পরে ৫ টা ছবি পেলাম। বেশ কয়েকবার ভিডিও টা দেখলাম। ছবিগুলোও খুঁটিয়ে খু্ঁটিয়ে দেখলাম।

গতকাল মাঝরাতে নেতাকর্মীদের দেউলিয়াত্বপনা নিয়ে বেশ বিরক্ত ছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিল আমাদের নেতারা আদর্শিক কর্মী তৈরিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

তাই পদ পদবী বদলের সাথে সাথে ভাইও বদল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আজকের এই ভিডিও এবং ছবিগুলো আমাকে ‌অন্য একটা বার্তা দিল। পদ-পদবী না থাকলেও কর্মীর মনে স্থায়ীভাবে থাকা যায়। ভালোবাসার প্রতিদান শুধু ভালোবাসা দিয়েই হয়।
ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট জেল থেকে কবে ছাড়া পাবেন বা আদৌ জামিন পাবেন কিনা সেটা কেউ জানে না। উনি এখন সেই অর্থে কোনো কর্মীর কাজে আসবেন না।

বরং ওনার পক্ষ নিলে উল্টো হয়রানির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও আজ সকালে আদালত প্রাঙ্গনে নেতাকর্মীর ঢল নেমেছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতেই মুহূর্মুহূ শ্লোগানে তারা গোটা এলাকা কাঁপিয়ে তুলেছিল।  
মনে পড়ে ৫ মে এর সেই ভয়াল দিনের কথা। সেদিন ঢাকার বুকে আঁকা হয়েছিলো ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ক্ষত চিহ্ন। ২০১৩ সালের এই দিনে রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থান নিয়ে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-হেফাজতে ইসলাম।


আরও পড়ুন: ওবায়দুল কাদেরের উপন্যাসে সিনেমার শুটিং ফের শুরু


 

ধর্মের নামে এমন জঘন্য তাণ্ডব, মানুষ খুন, বাঙালি জাতি আর কখনো দেখেনি! তারা বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ভেতরে আগুন দিলো, মুসলিমদের হাজার হাজার পবিত্র গ্রন্থ কোরআন পুড়িয়ে দিলো।

মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে উঠলো রণক্ষেত্র। আর বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্নে এতদিন যারা বিভোর ছিল, তারা সেদিন আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলো !

সেদিন সকাল থেকে জাগরণ যোদ্ধারা শাহবাগে জড় হতে থাকে। যদিও অনেক চেনা মুখ সেদিন ভয়ে এইদিকে আসতে সাহস পায় নি। অনেকের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছিল একটি খবর পেয়ে যে, হেফাজত-জামায়াত শাহবাগে আক্রমণ করবে। প্রতিরোধ করার মতো কোনো প্রস্তুতি নেই।

কিছু গজারি ও বাঁশের লাঠি যোগাড় করা হয়েছিল কিন্তু এই ভয়ানক উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীকে তা দিয়ে মোকাবেলা করা মুশকিল। বিকেল গড়াতে শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের দিকে তারা রওনা হলো বিশাল এক জমায়েত নিয়ে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ২৬ মার্চের পর থেকে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি না আসলেও ওই দিন সবার আগে তারাই প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ মৎস্য ভবনের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুললে জামায়াত-হেফাজত এর উগ্র জঙ্গিরা শাহবাগে আক্রমণ করতে পারেনি।


ওয়ান ইলেভেন, হেফাজতী তাণ্ডবের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে ভীষণ দরকার ছিল। আজ দলের সুদিন তাই হয়তো সম্রাটদের আর দরকার নেই।

শুধু মানবিক কারণে কত দাগী আসামির জামিন মিলেছে, সাজা মওকুফ হয়েছে। খালেদা জিয়ার পেছনে ছাতা ধরা লোকমান জামিন পেয়েছে কিন্তু দূর্দিনের পরীক্ষিত কর্মী অসুস্থ সম্রাটের বেলায় কোনো মানবিকতা কাজ করে না।

প্রকান্তরে তাকে তিলে তিলে মৃত্যূর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে! মনে রাখবেন, সুদিনের পাখিরা উড়াল দেবেই !

লেখক: সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট

news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর