সূরা বনি ইসরাঈলের তাৎপর্য ও ফজিলত

সূরা বনি ইসরাঈলের তাৎপর্য ও ফজিলত

অনলাইন ডেস্ক

পবিত্র সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি, যাতে আমি তাকে আমার (কুদরতের) কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। [সূরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১ (প্রথম পর্ব)]

তাফসির: এটি সূরা বনি ইসরাঈলের প্রথম আয়াত। এ সূরায় মোট ১১১ আয়াত ও ১২টি রুকু রয়েছে।

সূরাটি মহানবী (সা.)-এর মক্কার জীবনের একেবারে শেষের দিকে অবতীর্ণ হয়েছে। সূরাটি মহান আল্লাহর তাসবিহ তথা পবিত্রতা বর্ণনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে এবং আল্লাহর হামদ তথা প্রশংসার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে। ইমাম বুখারি (রহ.) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে সূরা বনি ইসরাঈল, সূরা কাহাফ, সূরা মারিয়াম, সূরা ত্ব-হা ও সূরা আম্বিয়া প্রথম দিকে অবতীর্ণ সূরা।

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অভ্যাস ছিল, প্রতি রাতে তিনি সূরা বনি ইসরাঈল ও সূরা জুমার পাঠ করতেন।

’ (আহমাদ, তিরমিজি ও নাসাঈ)

এ সূরার দুটি নাম রয়েছে। উপমহাদেশে এটি সূরা বনি ইসরাঈল নামে পরিচিত, তবে আরব বিশ্বে সূরাটি ‘আল ইসরা’ নামে সমধিক প্রসিদ্ধ। এ সূরার চার নম্বর আয়াতের অংশবিশেষ থেকে ‘বনি ইসরাঈল’ নামটি গৃৃহীত হয়েছে। বনি ইসরাঈল অর্থ ইসরাঈলের বংশধর। হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর অন্য নাম ইসরাঈল। বনি ইসরাঈল এ সূরার আলোচ্য বিষয় নয়, বরং এ নামটিও কোরআনের বেশির ভাগ সূরার মতো অংশবিশেষের দিকে তাকিয়ে রাখা হয়েছে। এ সূরার চার নম্বর আয়াতে বনি ইসরাঈল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর বনি ইসরাঈল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। তাই এ সূরার নাম সূরা বনি ইসরাঈল রাখা হয়েছে।

এ সূরার আরেকটি নাম হলো ‘আল ইসরা’। এর অর্থ নৈশ ভ্রমণ। যেহেতু এ সূরার সূচনায়ই মহানবী (সা.)-এর ঐতিহাসিক রাত্রিকালীন ঊর্ধ্ব জগৎ ভ্রমণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, তাই এ সূরা ‘আল ইসরা’ নামেও পরিচিতি লাভ করেছে।

হাদিস ও সিরাতের বেশির ভাগ কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী হিজরতের এক বছর আগে মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল। মিরাজ থেকে ফিরে আসার পরই এ সূরা অবতীর্ণ হয়। ড. আল্লামা ওহবা জুহাইলি (রহ.) লিখেছেন, কয়েকটি দিক থেকে এ সূরার সঙ্গে আগের সূরার সংযোগ আছে।


আরও পড়ুন: দোয়া ইউনুস পড়ার ফজিলত ও হজরত ইউনুস (আ:)


প্রথমত, আগের সূরার নাম ছিল সূরা নাহল। সূরা নাহলের শেষের দিকে জুমাবার নিয়ে বনি ইসরাঈলের মতবিরোধের কথা বর্ণনা করা হয়েছিল আর আলোচ্য সূরা বনি ইসরাঈলে বনি ইসরাঈলের শরিয়তের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সূরা নাহলের শেষের কয়েকটি আয়াতে অবিশ্বাসীদের পক্ষ থেকে নির্যাতিত হওয়ার বিপরীতে মহানবী (সা.)-কে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল আর সূরা বনি ইসরাঈলে মহানবী (সা.)-এর বিশেষ মর্যাদা ও অনন্য বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। এর মাধ্যমে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে অবিশ্বাসীরা মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারেনি; কিন্তু আল্লাহর কাছে তিনি অনন্য মর্যাদার অধিকারী। তৃতীয়ত, সূরা নাহলে বলা হয়েছে যে কোরআন আল্লাহর প্রেরিত গ্রন্থ আর সুরা বনি ইসরাঈলে কোরআনময় সমাজ গঠনের রূপরেখা বর্ণনা করা হয়েছে। এভাবেই উভয় সূরার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে।

news24bd.tv আহমেদ