মানিকগঞ্জে দুর্গাপূজার একাল সেকাল

মানিকগঞ্জে দুর্গাপূজার একাল সেকাল

সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু

মানিকগঞ্জে দুর্গাপূজার ঐতিহ্য শত শত বছরের পুরোন। মানিকগঞ্জে একসময় হিন্দুধর্মাবলম্বীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন। কালপ্রবাহে দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক,ধর্মীয় কারণে দীর্ঘসময় ধরে দেশান্তরের যে ঘটনা ঘটেছে তাতে মানিকগঞ্জে হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষেরা এখন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন।

কিন্তু শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন আড়ম্বরের কোন ব্যত্যয় কখনও,কোনদিনই ঘটেনি।

রাজনৈতিক ইন্ধনের দুএকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া মানিকগঞ্জের মানুষের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অটুটবন্ধন শত বছরেও একটুও ম্লান হয়নি।  

এবারও মানিকগঞ্জ জেলায় সার্বজনীন এবং পারিবারিক মিলিয়ে পূজামণ্ডপের সংখ্যা ৪৬৪ টি। গত দুই যুগ ধরে সংখ্যাটা এমনই আছে। কোন বছর সামান্য বাড়ে কোন বছর হয়তো দু একটি কমেছে।

news24bd.tv

আমার স্পষ্ট মনে আছে,শহরটা তখন ছিল গ্রামের মত। বড় বড় দালান কোঠা ছিল না। শরত রাতের নির্জনতা ডিঙিয়ে দূর,অনেকদূর থেকে ভেসে আসতো ঢাকঢোল কাশরঘণ্টার  মুগ্ধকরা ধ্বনিতরঙ্গ।

পূজার কটা দিন অসংখ্য মানুষের পদচারণায় মুখর থাকতো আমাদের শহরটা। শহরের বাইরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কালী বাড়ি,লক্ষ্মী মন্ডপের বিশাল আয়োজনে যোগ দিতে, প্রতিমা দর্শনে তাঁরা আসতেন। সবার পড়নে থাকতো নতুন জামা,জুতো,শাড়ী,পোশাক। মিষ্টির দোকানে চলতো লাড্ডুসহ নানা মিষ্টান্ন বিকিকিনির ঢেউ।

আমাদের ছোট বেলায় শহরের মাঝদিয়ে বয়ে যাওয়া খালে নৌকায় করে দুর্গাপ্রতিমার শোভাযাত্রা হত। সেসময়ের মহকুমা শহর এবং তার আশপাশের এলাকা থেকে প্রতীমার নৌকা আসতো।


আরও পড়ুন: মহানবীর (দ:) ব্যঙ্গচিত্র ও বাক-স্বাধীনতা


ঢাক,ঢোল,কাসরঘন্টায় মুখরিত হয়ে উঠতো সন্ধ্যা অথবা রাতের শহর। শোভাযাত্রা শেষে কালীগংগা নদী অথবা নিজেদের পছন্দের জায়গায় চলতো প্রতিমাবিসর্জনের পর্ব। খালের দুপাড়ে দাঁড়িয়ে ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে হাজারও মানুষ এই শোভাযাত্রা দেখতেন। নদীর সাথে খাল মরে যাওয়ায় সেই শোভাযাত্রার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য হারিয়ে গেছে।

news24bd.tv

দুর্গাপূজার শোভাযাত্রা না হলেও এখন রিক্সাভ্যানে করে, আলোকমালায় সাজিয়ে সরস্বতী প্রতিমার শোভাযাত্রা আমাদের শহরে হয়। যা দেশের অন্যকোথাও হয় কিনা আমার জানা নেই।

আরেকটি কথা না বললেই নয়,মানিকগঞ্জের প্রতিমা শিল্পীদের নান্দনিক শিল্পকর্ম নিয়ে আমি বরাবরই বড়াই করি। বলি আমাদের জেলার প্রতিমার রূপ-রঙ দেশের অন্যসব জেলার প্রতিমার চেয়ে অনন্য। বলবেন,মশাই আপনি কি এই সময় দেশঘুরে সব প্রতিমা দেখেছেন নাকি? আমি বলবো "না "।  

তারপরও কেন বলছি সেটা বলে নেই। টিভিতে টিভিতে,পত্রিকার পাতায়,ফেসবুকতো দেখি। এ দেখাই আমার বড়াই করার উৎস,বিশ্বাস না হলে নিজেরাও মিলিয়ে নিতে পারেন।

বিজয়া দশমীতে কামনা করি আমাদের দেশ,সমাজ, ব্যক্তিজীবনকে নরককুণ্ড বানিয়ে রাখা অসুরদের বিনাশ হোক,বিনাশ হোক আমাদের সবার অন্তরে বসতি গড়া অসুরদের।

news24bd.tv নাজিম