কুমিল্লার দিনগুলি

কুমিল্লার দিনগুলি

প্রবীর বিকাশ সরকার, জাপান থেকে

শৈশব থেকে জাপান প্রবাসী (১৯৮৪) হওয়া পর্যন্ত আমার এই জায়গায় কেটেছে। মেট্রিক পরীক্ষার আগেই ছোটরা কলোনি থেকে ধর্মসাগর দিঘির পশ্চিম পাড়ে স্থানান্তরিত হই।  

ছোটরা মফিজাবাদ কলোনির কাছেই কালেকটোরেট বিল্ডিং যেখানে ডিসি অফিস এবং সংলগ্ন টিনের ছাউনি একটি বড় ঘরে ছিল পুলিশ কোর্ট তাতে বাবা চাকরি করেছে ৪০ বছরের বেশি সময়। বাবার অফিসের আশেপাশেই কেটেছে আমার ২৫টি বসন্ত।

 


আরও পড়ুন: যে কারণে বিলাসবহুল গাড়িটি পুড়িয়ে দিল ইউটিউবার! (ভিডিও)


কালেকটোরেট ভবন থেকে ধর্মসাগর দিঘির পশ্চিম পাড় মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। সেখানেই কেটে আমার কৈশোর থেকে যৌবনের উষাকাল। কত স্মৃতি, কত যে ঘটনা যা কিছু লিপিবদ্ধ করেছি “অতলান্ত পিতৃস্মৃতি” গ্রন্থে। আর কিছু “জীবনস্মৃতির গল্প: সম্পর্ক” গ্রন্থেও।

 

জাপানে আসার পর ১৯৮৮ সালে চার বছর পরে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম প্রথমবার। তখন বেশকিছু ছবি তুলেছিলাম তখনকার কুমিল্লার। আজ এখানে তিনটি দিলাম। নিশ্চয়ই অনেকের কাছে স্মৃতিকাতর মনে হবে। কী খোলামেলা নিরাভরণ ছিল তখন কুমিল্লা শহরটি। বাইরে থেকে কেউ ঘুরতে এলে কুমিল্লায় স্থায়ী হওয়ার চিন্তা করত, এখন কুমিল্লার মানুষই পালিয়ে যেতে চাইছে! 

শরৎ এবং হেমন্তকালে অদ্ভুত একটা সৌন্দর্য কালেকটোরেট ভবন, রাজ্জাক মিয়ার পুকুর, পৌর উদ্যান, নজরুল পরিষদ, ধর্মসাগর দিঘি জুড়ে বিরাজ করত চোখ ও মন মুগ্ধ হয়ে যেত। সারাদিন উষ্ণতা আর বিকেল হলেই সিল্কের মতো একটা মোলায়েম হিমেল বাতাস উত্তর দিক থেকে বইত। প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসত শহরের এপ্রাপ্ত-ওপ্রান্ত থেকে।  

ছেলেবেলায় দলবেঁধে স্কুলে যেতাম ধর্মসাগর দিঘির নিরিবিলি পথ ধরে। বিকেল হলেই দিঘির বড় বড় ঢেউ এসে উত্তর পাড়ে বাড়ি খেত আর তুমুল সাদা ফেনা পাহাড়ের মতো জমা হত। আমরা সেই ফেনা নিয়ে ছোঁড়াছুঁড়ি খেলতাম, ঢেউয়ের জলে অহেতুক ভিজে আনন্দ করতাম। প্রচুর ফুল তখন ফুটত উদ্যানে, পাখির কিচিরিমিচিরে কানপাতা কঠিন হত।  

যখন মেট্রিক দিলাম। তারপর কলেজে উঠলাম। এই পাড়ার বেশ কয়েকজন সমবয়সী বন্ধুবান্ধব হয়ে গেল। আমাদের অধিকাংশ সময়ই কেটেছে ধর্মসাগরের চার পাড়েই। উদ্যানে সারারাত ধরে ঘাসে শুয়ে শুয়ে আড্ডা দিতাম। গানবাজনাডোপ সবই হত। বিকেল থেকে সন্ধে পর্যন্ত পাড়ার মেয়েরাও দল বেঁধে হাঁটাহাঁটি করত, আড্ডা দিত। আমরা নানা বিষয় নিয়ে হাসাহাসি, দুষ্টুমি করতাম। কেউ কেউ বাদাম কিনে দিত।  

মনে পড়ে কত গান যে আমি গাইতাম তখন খালিগলাতেই। ডোপ করলে পরে কণ্ঠের জড়তা খুলে যায়, জোরগলায় গাইতে কোনো বেগ পেতে হয় না। কয়েকটি প্রিয় গান ছিল হেমন্ত আর মান্নাদের। দুটি গান তো হেমন্তকালে প্রায়শ গাইতাম:
একটি হচ্ছে, পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি আরেকটি হচ্ছে, বনতল ফুলে ফুলে ঢাকা দূর নীলিমায় ওঠে চাঁদ বাঁকা.......

সেইসময় ভালো লাগত যে কিশোরীটিকে আজ তার মুখটাই মনে করতে পারি না! তবু তার চলমান ছায়া যেন দেখতে পাই…

লেখক: প্রবীর বিকাশ সরকার, ছড়াকার, উপন্যাসিক, গবেষক ও সম্পাদক।

news24bd.tv কামরুল

এই রকম আরও টপিক