ঠান্ডায় বেড়ে যেতে পারে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ক্ষমতা

ঠান্ডায় বেড়ে যেতে পারে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ক্ষমতা

শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য টুটুল

কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ আসছে। আমরা দেশবাসী কোভিড-১৯ এর সেই দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা কিংবা প্রতিরোধ করতে কতটুকু প্রস্তুত? প্রশ্নটা দেশের বিজ্ঞজনরা তুলেছেন। এমন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। কেননা এক শ্রেণীর মানুষ ধরেই নিয়েছে কোভিড-১৯ ভাইরাসের ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে।

প্রথম দিকে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি আমাদের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক নিয়ে এসেছিল। এখন আর মানুষ এই ভাইরাস নিয়ে ততটা আতঙ্কিত নয়। আতঙ্ক না থাকার কারণ হচ্ছে দেশের দরিদ্র মানুষ বুঝে ফেলেছে আতঙ্ক নিয়ে থাকলে চলবে না। বউ-বাচ্চা অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে, পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

তখন আর ভাইরাসের প্রয়োজন হবে না। কর্মহীন মানুষ যদি রুজি-রোজগার না করে অর্থাৎ কর্মহীন মানুষ যদি দিনের কর্মকান্ড না করে টাকা পয়সা আয় করতে না পারে, তাহলে আর কতদিন চলবে ত্রাণের চাল খেয়ে কিংবা ভিক্ষাবৃত্তি করে। তার মধ্যে সরকারি বেসরকারি ত্রাণের পঁচাত্তর ভাগই চুরি হয়ে যায় বলে অভিযোগ আছে।

বলা হয়ে থাকে ত্রাণের সিংহ ভাগ অংশ সাধারণ মানুষের কাছে যায় না। তাই আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মনের ভয় লালন করার বিলাসী অভিপ্রায় আর নেই। মানুষ কোভিড-১৯ এর ভাইরাস নিয়ে প্রথম দিকে যেমন ভাবে আতঙ্কিত হয়েছিল, এখন আর তেমন আতঙ্কিত হতে চায় না। আতঙ্কিত হতে চায় না এই জন্য যে, পেটের ক্ষুধাকে তো আর অস্বীকার করা যায় না। মানুষ ভাল ভাবেই বুঝে নিয়েছে আতঙ্ক নিয়ে থাকলে আর প্রাণে বাঁচা যাবে না।


আরও পড়ুন:  দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সর্বশেষ খবর


আমাদের সকলেরই একটি কথা জেনে রাখা উচিত, কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে আমরা আতঙ্কিত হই কিংবা না হই, তাতে আমাদের স্বাস্থ্যগত দিকের যে ক্ষতি হওয়ার কথা তা হবেই। কেননা কোভিড-১৯ এর ভাইরাসের প্রাণঘাতী ক্ষমতা ঠিকই রয়েগেছে কিংবা থাকবে। বরং তা দ্বিতীয় বার আরো ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে আসতে পারে। আমরা জানি আমাদের এখানে কোভিড-১৯ এর ভাইরাসটি মার্চের প্রথম দিকে ধরা পড়েছিল। তখন শীত বা ঠান্ডা তেমন ছিল না। যার ফলে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব তেমন ভয়ংকর হয়ে ওঠেনি। এপ্রিলেই গরম পড়ে যায়, যার জন্য কোভিড-১৯ এর ভাইরাসের কারণে ততটা দৃশ্যমান ভয়ংকর মৃত্যুর মিছিল আমরা দেখিনি। অর্থাৎ কোভিড-১৯ এর কারণে মৃত্যুর পরিসংখ্যান খুবই কম। কিন্তু এখন কয়েকদিন পরেই শীত আসছে। ডিসেম্বর জানুয়ারীতে এমনকি ফেব্রুয়ারীতেও শীতের প্রকোপ আমাদের এখানে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন ঠান্ডায় জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠান্ডা জর্নিত রোগের ভয়াবহতা দেখা দেয়। তাই অনেকের ধারণা কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ শীতের মাঝে আমাদের জন্য চরম এক মৃত্যু আতঙ্ক হয়ে দেখা দেবে।  

তাই প্রশ্নটা এসেছে যে আমরা দেশবাসী কোভিড-১৯ ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ কিভাবে মোকাবেলা করব কিংবা আমরা কি এই ভাইরাসটির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। ঠান্ডায় বেড়ে যেতে পারে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা। তাই শীতে যদি ভাইরাসটির সংক্রমণ ক্ষমতা বেড়ে যায়, তাহলে আমাদের মত দেশের মানুষের জন্য তা হবে চরম প্রাণঘাতীর আশংকার ব্যাপার।

কোভিড-১৯ ভাইরাসটি ভয়াবহ হবে এই জন্য যে, আমাদের দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ ধরে নিয়েছে কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রাণঘাতী ক্ষমতা এখন আর নেই। তাই দেশের মানুষের বৃহত্তর অংশকে দেখা যায়না কোন ধরণের প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। যার জন্য কোভিড-১৯ ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ যখন সুনামির রূপ নিয়ে আমাদের এই শ্যামল বাংলায় আসবে, তখন কোন ধরণের প্রস্তুতি না থাকার কারণে দেশের মানুষকে তার নেতিবাচক ফল অবশ্যই ভোগ করতে হবে।  

কোভিড-১৯ ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার ব্যাপারে দেশের মানুষের কোন ধরণের প্রস্তুতি না থাকার কারণে যে দুর্ভোগ দেশের অসহায় মানুষ ভোগ করবে তা অবশ্যই সুখকর হবে না। তা হবে খুবই ভয়াবহ এবং তাতে অনেক লোকক্ষয় যে হবে না কিংবা কোভিড-১৯ ভাইরাসে যে অনেক মানুষ আক্রান্ত হবে না, তার নিশ্চয়তা কে দিতে পারবে? আপনি আমি কিংবা কোন যথাযথ কর্তৃপক্ষও নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না।  

দেশের মানুষ বলতে গেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার রীতি ছেড়ে দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন প্রয়োজন নেই। দেশে কোভিড-১৯ ভাইরাসের তান্ডব লীলা থেমে গেছে। দেশের অনেক মানুষই মনে করেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন প্রয়োজন নেই। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলা মানুষের মধ্যে শুধু যে মাত্র লেখাপড়া না জানা লোকজনই আছেন, তা নয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার মধ্যে যেমন শিক্ষিত লেখাপড়া জানা লোকজনরা আছেন, তেমনি করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা মানুষের মধ্যে লেখাপড়া না জানা লোকরাও আছেন।  

বলা হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার করার কারণে কোভিড-১৯  ভাইরাসটি আমাদের তেমন ক্ষতি করতে পারেনা। এমন কথাও বলা হচ্ছে ভ্যাকসিন থেকেও মাস্ক পরিধান করা আমাদের জন্য খুবই জরুরী। কেননা মাস্কই একমাত্র কোভিড-১ কে সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে প্রতিরোধ করতে পারে।

ইউরোপের কোন কোন দেশে যেমন ইতালী, জার্মানীসহ কয়েকটিদেশে ইতিমধ্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এমন খবরও আছে সেখানে নাকি কারফিউ জারী করা হয়েছে কিংবা কারফিউ জারী করার চিন্তা ভাবনা আছে। আমাদের দেশে ব্রিফিংয়ে যদিও বলা হচ্ছে সরকারের লকডাউন ঘোষণা করার চিন্তা ভাবনা নেই। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়। যদি আসছে শীতে দেশে কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, তখন আমরা কি করব? তখনতো আমাদেরকে বাধ্য হতে হবে কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ ধারণ করার আগেই লকডাউন ঘোষণা করার।

এছাড়াতো আমাদের কোন উপায় নেই। এমনও হতে পারে দেশের যে সব অঞ্চলে কোভিড-১৯ ভাইরাসের ভয়াবহ রূপ দেখা যাবে সেখানে হয়তো আমাদেরকে বাধ্য হতে হবে লকডাউন ঘোষণা করার। সারা দেশে হয়তোবা লকডাউন ঘোষণা করার প্রয়োজন পড়বেনা। কিন্তু আসছে শীতে যদি দেশের কোন অঞ্চলে কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তাহলে অঞ্চল ভিত্তিক লক ডাউন ঘোষণা করার প্রয়োজন পড়তে পারে। তখন আমাদেরকেতো বাঁচতে হবে। কথায় বলে না, নিজে বাঁচলে বাপের নাম থাকে।

র্কোট কাচারীতে মানুষকে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। যখন কোন পক্ষকে কাঠগড়ায় উঠতে হয় (মামলা ডাকার পর) তখন মাস্ক পর উঠতে হয়। তাই দেখা যায় কোন দু’টি পক্ষের মধ্যে মামলার কার্যক্রম চলাকালীন সময় পর্যন্ত লোকজন র্কোটের কাঠগড়ায় মাস্ক পরিধান করে উঠে। তারপর মামলার কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ার পর মাস্ক নামক কাপড়ের টুকরোটি পকেটে রেখে দেয় কিংবা ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কেননা মানুষ মনে করে যে, মামলরা কার্যক্রমের এটাও একটা অনুষঙ্গ। মানুষের ধারনা মাস্ক ছাড়া মাননীয় আদালত পক্ষভুক্ত লোকজনকে মামলার কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করতে দেন না।

দেখা যাচ্ছে ভাইরাসের ভয়ে নয়, কোর্ট কাচারীর ভয়ে মানুষ মাস্ক ব্যাবহার করে থাকে। এই যখন দেশের মানুষের কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে মনোজগতের অবস্থা, তখন ধরে নিতে হবে আমরা যদি কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে সর্তক না হই, তাহলে কোভিড-১৯ ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবের কুফল আমাদেরকেই ভোগ করতে হবে। তাই আমাদের সকলকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবের কুফল হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখনই সর্তক হতে হবে। যে যাই বলুন না কেন।

সরকারি পর্যায়ে থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান থেকে বারবার দেশের মানুষকে সর্তক করে দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার জন্য দেশের মানুষকে আহবান জানানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে একটা পরিসংখ্যান করি তাহলে দেখা যাবে অনেক ক্ষেত্রে ৮০-৯০% লোকজন তেমন করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না এবং মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানতেই চাইছেন না।  

যারা নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন কিংবা সকল সময় মুখে মাস্ক পরিধান করে চলেন কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মত সাবান-জল দিয়ে হাত ধুঁয়ে থাকেন, তাদেরকে নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ টিটকারী-মশকরা করে থাকেন। এমন কথাও নাকি বলে থাকেন কোভিড-১৯ ভাইরাসকে মাস্ক পরিধান করে নাক-মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করা বন্ধ করলেন, কিন্তু কান দিয়েতো ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে, কানেও কাপড়ের টুকরা বাঁধেন। এসব টিটকারী মশকরা যারা করেন, তারা একবারও ভাবেন না তাদেরই টিটকারী মশকরা একদিন তাদের ওপরই বুমেরাং হয়ে আসতে পারে।

তাই বলছিলাম, দেশের মানুষসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষকে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে মোকাবেলা কিংবা প্রতিরোধ করার জন্য আরো সচেতন হতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে যদি কঠোর হতে হয়, তাহলে আরো কঠোর হতে হবে এবং সরকারি ত্রাণ যাতে অপচয় কিংবা চুরি না হয় সে ব্যাপারে আইনগত দিক নিয়ে সচেতন ভাবে কঠোর মনোবৃত্তি নিয়ে এগোতে হবে। আবারও বলছি, কোভিড-১৯ ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগেই আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাই সাবধান।    

লেখক: শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য টুটুল আইনজীবি, কবি ও গল্পকার, হবিগঞ্জ।    

news24bd.tv কামরুল