ফ্রান্সের মানুষরা কেন অভিযোগ প্রিয়?

ফ্রান্সের মানুষরা কেন অভিযোগ প্রিয়?

অনলাইন ডেস্ক

ফরাসিরা নানা বিষয়, নানান ইস্যুতে অভিযোগ করতে বেশ পছন্দ ও স্বাচ্ছন্দবোধ করে। তাদের কাছে অভিযোগ করা মানে নতুন সম্পর্কের সূচনা। অভিযোগ মানে কোনো বিষয়কে আরও সুন্দর ও নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করা। অন্যান্য দেশে যেখানে অভিযোগ করার অর্থ কথার সমাপ্তি বা দ্বন্দ্বের আভাস, সেখানে ফ্রান্সে কথা শুরু হয় অভিযোগ দিয়ে।

 

ইউরোপের এই দেশটিতে একে অন্যের মধ্যে কথোপকথনে সকাল শুরু হয় খানিকটা এভাবে: মন্দ আবহাওয়া ,আঙুর বা আপেলের ফলন খারাপ, রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ ও অযোগ্য এ ধরনের অভিযোগের সুরে।  সেখানেও প্রায় এ রকমই গল্প। এমনকি অচেনা কেউ হলেও তাদের সঙ্গে কথা শুরু হয় কিছুটা অভিযোগ মিশিয়ে। অন্য দেশে এ রকম বিষয় নেতিবাচতভাবে দেখা হলেও ফ্রান্সে অভিযোগের সুরে কথা বলা খুব ইতিবাচক এবং স্বাভাবিক  বিষয়।

news24bd.tv

কেউ হয়তো একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে গেছেন সেখানে বসেই খাবারের দুর্বল বিষয়গুলো এবং কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলা শুরু করে দিল অথবা কারও নতুন বাসার জানালাগুলো হয়তো পশ্চিমমুখী, তখন তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো নতুন পর্দাগুলো বেশ পুরনো। এ রকম ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ফরাসিদের অভিযোগের অন্ত নেই।  

মার্কিনিদের কাছে নেগেটিভ কোনো কথা বলেন এর অর্থ হচ্ছে আপনি আর কথা বলতে চাচ্ছেন না। বা কোনো দ্বন্দ্বে জড়াতে চাচ্ছেন। আর ফ্রান্সে এমন হওয়ার মানে আপনি অন্য ব্যক্তিকে কথার পৃষ্ঠে কথা বলার জন্য অনুমতি দিচ্ছেন বা তার প্রতি আরো কৌতুহলী হচ্ছেন।

news24bd.tv

ফরাসিরা যেমনভাবে অভিযোগ বিষয়টির সঙ্গে অভ্যস্ত, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষ তেমন নয়। তারা আসলে রগচটা। বেশির ভাগ সময়েই কিছুটা গণ্ডগোল, সংঘাত ভালবাসে। কথার শুরুতে যেটিকে দ্বন্দ্ব বা অভিযোগ বলে মনে হয়, সেটি আসলে সহজভাবে বলা কোনো কথা নয়। সাধারণত অন্য দেশের মানুষ এভাবে কথা অভ্যস্ত নয়।  মূলত অভিযোগের সুরে কথা বলাটা ফরাসিদের চিন্তা প্রকাশের ধরণ বা কথা কৌশল বলা যায়।  

তবে ফরাসি জাতির  অভিযোগের অভ্যাসের শুরু ফরাসি বিপ্লবের সময় থেকেই। যখন থেকে দেশটিতে খাবার সংকট দেখা দেয়, বাড়তে থাকে ট্যাক্স, সামন্ততান্ত্রিক কিছু সামাজিক সংগঠন সোচ্চার দাবিতে রাস্তায় নামে মূলত তখন থেকেই শুরু হয় ফরাসিদের একে অপরের প্রতি নানান বিষয়ে অভিযোগ করা।

ফরাসিদের বিক্ষোভের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। ফ্রান্সে অভিযোগ যেকোনো বিষয় নিয়েই শুরু হতে পারে। যেকোনো পলিসি, ট্যাক্স, শিল্প সব বিষয় নিয়ে ফরাসিরা নিজেদের কন্ঠে সোচ্চার আওয়াজ তুলতে পারে। এমনকি করোনায় ইউরোপের এই দেশটিতে স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি করায় বা সরকারের দেয়া লকডাউনের বিরুদ্ধেও রয়েছে তাদের নানান অভিযোগ। অভিযোগ আর অভিযোগ।

এটাকে যদিও সহজ ভাষায় অভিযোগ বলা হয়, তবু নেতিবাচক কথার কারণে প্রতিটি বিষয়ের ভিন্ন ভিন্ন বিষয় সামনে আসে। যার সমাধান করা গেলে চমৎকার একটা ফলাফল আসতে পারে।

news24bd.tv

এখানেই শেষ নয়, এ ধরনের অভিযোগের মানসিকতা সংস্কৃতিচর্চায় উৎসাহিত হতে পারে বলে বিশ্বাস ফরাসিদের। আবার রাজনীতি, শিক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ে আওয়াজ তুলেও যে তার পরিবর্তন করা সম্ভব, এ বিষয় নিয়েও তারা বেশ সচেতন। বলা যায় এ বিষয়ে অনেকটা কট্টর মনোভাব ফরাসিদের। তবে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, শিক্ষার্থী, গীতিকার, অভিবাসী, কৃষ্ণাঙ্গদের কাছ থেকে যখন অভিযোগ আসে, তখন সেগুলোকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। কারণ তারা জানে, অভিযোগগুলো গুরুত্ব দিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি নিয়মনীতিতেই  আসবে পরিবর্তন। সূচনা হবে নতুন কিছুর।

news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর