এমন কোনো অনিয়ম নেই যা করেননি বিএনপি নেতা তৈমুর

এমন কোনো অনিয়ম নেই যা করেননি বিএনপি নেতা তৈমুর

অনলাইন ডেস্ক

প্রতারণা, দুর্নীতি, অন্ধ ও বধির সংস্থার অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার সহ এমন কোনো অনিয়ম নেই যা করেননি নিজ থেকে খেতাব নেওয়া জমলুম নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার।

বাণিজ্য করেছেন নিজ ভাইয়ের হত্যা মমলা নিয়েও। বিভিন্ন সময়ে অনিয়মের মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এক সময়ের বিএনপি র দাপুটে নেতা তৈমুর আলম এখন ব্যস্ত রয়েছেন রিট বাণিজ্য নিয়ে।

তার কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি হয়েছে কোণঠাসা। জেলা বিএনপি'র কমিটি বিলুপ্তির পর পথ বাগাতে আবারও সরব হয়েছেন দুর্নীতির এ বরপুত্র।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন বিগত ২০০১ সাল থেকে পাঁচ সাল অবধি বিআরটিসি'র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় মূলত অথর্ব প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই পরিবহন সংস্থাটি।

তিনি টাকার বিনিময় সরকারের কেনা কোটি কোটি টাকার বাসগাড়ি পছন্দের মহাজনদের লিজ প্রদানের মাধ্যমে বিআরটিসিকে করে ফেলেন সম্পদ শুন্য। এছাড়া সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিআরটিসিতে ৫৩৭ জন অদক্ষ লোক নিয়োগের মাধ্যমে সে সময় দেশব্যাপী শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে আলোচনায় আসেন তৈমুর।

শোনা যায়, অবৈধ এই নিয়োগের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য করেছেন তৈমুর আলম খন্দকার। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি অবধি জাতীয় অন্ধ ও বধির সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তৈমুর আলম খন্দকার। দায়িত্ব পালনকালে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী জোসনে আরা চৌধুরীকে অন্ধ ও বধির সংস্থা ১১টি দোকান বরাদ্দ দেন।

বধির সংস্থার তহবিল তছরুপ করে অন্যাদের সহায়তায় প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পৃথক ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। অন্ধ ও বধির সংস্থার অর্থ আত্মসাৎ করায় বধিররা রাস্তায় নেমে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন।

চলতি জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বধির সংস্থার নির্বাচনে বিপুল ভরাডুবি ঘটে তৈমুরের। অভিযোগ আছে দলের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালনকালেও জেলা-উপজেলা বিভিন্ন নেতাকর্মীকে পদ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই মজলুম নেতা। তার ভাই প্রয়াত সাব্বির আলম খন্দকারের হত্যা মামলা নিয়েও আসামিদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ আদায় করেছেন।

বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তৈমুর আলম খন্দকার। তার নিজ জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে রয়েছে অঢেল জমিজমা। নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর ও রাজধানীর লালমাটিয়ায় নিজ নামে ১৭ শতাংশ জমিতে ছয় তলা বাড়ি এবং রাজউকের কাছ থেকে পাওয়া পাঁচ কাঠার একটি প্লট।

তার স্ত্রী হালিমা ফারজানার নামে রয়েছে ঢাকার তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজা ও সেগুনবাগিচায় তিনটি ফ্ল্যাট ও ফতুল্লার বিসিক এলাকায় প্লট। রয়েছে স্টেডিয়াম মার্কেট, জোয়ারসাহারা সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে দোকান পাট।  এসব কারণে বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে ১১টি দুর্নীতির মামলা হয়েছে।

এছাড়া হত্যা, বিস্ফোরণ, রাহাজানি, দস্যুতার অসংখ্য মামলা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায়। মেয়ে ব্যারিস্টার মারিয়াম খন্দকার আর চতুর আইনজীবী তৈমুর মামলাগুলো সুকৌশলে ঢেকে রেখেছেন। বর্তমানে নয়টি মামলা থাকলেও এর মধ্যে তিনটির নিম্ন আদালতে তার সাজা হয়। যা হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত আছে। বাকি ছয়টি মামলার কার্যক্রমের ওপরও উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি পদে থাকাকালীন তৈমুর আলম স্বজনপ্রীতি, অযোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন, পদ থেকে অর্থ আদায় সহ নানা কারণে ছিলেন সমালোচিত। এ কারণে পরবর্তী কমিটিতে স্থান হয়নি তার। জেলা বিএনপি তখন থেকেই কাজী মনিরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট সাখওয়াত হোসেন, গিয়াসউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

একেবারেই কর্মীশূন্য তৈমুর বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় পদ বাগাতে আবারো দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে তাকে নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন জেলা বিএনপির বর্তমান কান্ডারীরা‌।

তাদের ধারণা বিএনপি সর্বদা কাজের মূল্যায়ন করে থাকে। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতিকে কোণঠাসা করায় তৈমুর কখনোই আর স্বপদে ফিরতে পারবেন না।

জানতে চাইলে তৈমুর আলম খন্দকার দাবি করেন, ‘এক-এগারোর পর তারেক রহমানের মামলার আইনজীবী ছিলাম আমি। এ কারণেই এই সময়ের সরকার গ্রেপ্তার করে আমার বিরুদ্ধে এসব মামলা দিয়েছে। এসব মামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন। ’

news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর