যে পুরুষ প্রাণ খুলে কাঁদতে পারে সেই “আসল পুরুষ”

যে পুরুষ প্রাণ খুলে কাঁদতে পারে সেই “আসল পুরুষ”

ইশরাত জাহান ঊর্মি

অনেকগুলো দিন। অনেকগুলো দিন আমি এই রসিকতায় অংশ নিয়েছি। "টয়লেট দিবস" এর দিনই কেন পুরুষ দিবস হতে হলো তা নিয়ে করেছি ফাত্রামি। আমি আমার বাতুলতা, বাঁচালতা আর অমানবিক আচরণের জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

আয়াম এক্সট্রিমলি সরি।

আমি এখন মন থেকে বলি, যে পুরুষ কাঁদতে পারে প্রাণ খুলে সেই পুরুষই “আসল পুরুষ” সে ভেঙেছে বেরিয়ার, তাকে আমার প্রণাম। যে পুরুষ দাঁড়িয়েছেন নারীর পাশে- তাকে আমার প্রণাম। আর যে পুরুষ চেপে রেখেছেন হাজারো যন্ত্রণা, ব্রেড আর্নারের বোঝা কাঁধে নিয়ে ন্যুজ্ব হয়েছেন যে পুরুষ, সংসারের জন্য যে পুরুষ জলাঞ্জলি দিয়েছেন সকল সাধ আহ্লাদ-তার জন্য আমার সমবেদনা-বনমালী তুমি জেনো আমি এজনমেই হয়েছি রাধা, আমি তোমার কষ্টকে ছুঁতে পেরেছি।

আজ পুরুষদিবসে এসে এইসব কথা মনে হলো। দিবসটি নিয়ে ঘাঁটতে গিয়ে ইন্টারেস্টিং কি তথ্য পেলাম জানেন? এই দিবসটিকে গুরত্বপূর্ন করে তোলার পেছনে  আছেন একজন নারী। উমা চাল্লা। সেভ ফর দ্যা ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন এর কর্নধর এই সিঙ্গেল মাদার এই রিজিয়নে প্রথম এটা নিয়ে কাজ শুরু করেন।  

পুরুষ বিরোধী আইনী প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করেন তিনি। আইনকে জেন্ডার নিরপেক্ষ করে তোলা ছিল তার লক্ষ্য। পুরুষদিবস হবে কি না এ নিয়ে ৬০ এর দশক থেকে আলোচনা চলে এলেও ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর জেরোম তেলুকসিংক নামে একজন এ্যাকটিভিস্ট প্রথম দিবসটির শুরু করেন। প্রথমে ব্যাপারটাকে ফাদারহুড এর জায়গা থেকে দেখা হচ্ছিল।  
মানে ফাদার্স ডে টাইপ আর কি। কিন্তু নারী মানেই যেমন কেবল মা বা স্ত্রী বা কন্যা না তেমনি পুরুষও তো কেবল বাবা ভাই বা স্বামী নন। সমাজে পুরুষের রোল আসলে কি হওয়া উচিত সেই জায়গা থেকেই জেরোম শুরু করলেন এই দিবস প্রবর্তন।

পুরুষের বেদনা কেন সোসাইটি দেখে না? পুরুষতন্ত্র কি কোরে পুরুষদের স্বতস্ফূর্ততা দমন করে, তাকে করে তোলে এটিএম কার্ড বা টাকা বানানোর মেশিন, কি করে তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয় সকল রকমের দায়-দায়িত্ব এবং ধীরে ধীরে কি করে এই পুরুষ হয়ে ওঠে অমানবিক এক প্রভু-সেসব তো অনেক লিখেছি। যতদিন পর্যন্ত না পুরুষকে এই রোল থেকে মুক্তি দেয়া যাবে ততদিন পর্যন্ত মুক্তি নেই নারীরও। পুরুষের অধিকারও কিন্তু নারীবাদের আলোচ্য।

অন্যপক্ষ অনুষ্ঠানের লিংকের নিচে হাজারও কমেন্টে পুরুষদের গালাগালি থাকে। আমি একসময় এগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করলাম।

নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা, নারীর গোল্ড ডিগিং এর স্বভাব, স্বামীর কথা না শুনে চলা-এই ধরনের কমেন্ট বেশি আসে। শ্রেনী বিভাজনের জায়গা কিন্তু এইভাবে আসে।  


আরও পড়ুন: লিঙ্গ রাজনীতির চোরাগলি পেরিয়ে মানুষ হয়ে উঠুক সকল পুরুষ


মানে ধরেন, যাকে আপনি খাওয়াচ্ছেন পরাচ্ছেন সে যখন আপনার কথা মতো চলবে না, পছন্দমতো চলবে না-তখন আপনার রাগ হবে। আবার সমান আয় করলেই সব রাতারাতি ঠিক হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমনও না। উচ্চ আয়ের নারীকে শাসন ত্রাসনে রাখার উদাহরনও কম নেই। অর্থাৎ পুরো ব্যবস্থাটির মধ্যে যে কাঁকর বালি ঢুকে আছে যেগুলো বেছে ফেলা দরকার। সাম্যতার ধারণার জন্য যে দীর্ঘ প্রাকটিস লাগে তা গড়ে তোলার জন্যই “পুরুষ দিবস উদযাপন” জরুরী।

আপাতত আমরা কি এই চেকলিস্টটা ফলো করতে পারি? দ্যাখেন তো চেষ্টা করে যে এগুলো আমরা বলবো না, ভাববো না,
## আসল পুরুষ কাঁদে না
## পুরুষমানুষের সংসারের ভরণ পোষন এর জন্য জেলজুলুম সব সই
## পুরুষ মানুষের ভয় পাইলে চলে না
## পুরুষ মানুষরে বউ বাগে রাখতে হয়
## কোনও কাজ না পারা মানে সেই পুরুষের উচিত হাতে চুরি পরে বসে থাকা
## গায়ে শক্তি না থাকলে সেইটা আবার কেমন পুরুষ মানুষ

আসেন এইগুলা একটু চর্চার মধ্যে আনি।  

পুরুষদের প্রতি আমার আমার শুভেচ্ছা রইলো এইদিনে।   আমাদের লড়াই এর ময়দানে যারা মানববন্ধন এর হাত হয়ে থেকেছেন, আমাদের বেদনায় যারা বুক পেতে দিয়েছেন, আমাদের নীপিড়নে যারা রুখে দাঁড়িয়েছেন, " মেয়েলী" কাজ করে যারা নিন্দামন্দ শুনে কাজগুলো সমানভাবে করেছেন, সংসারের বোঝা যারা একা টেনেছেন, যারা নীরবে কেঁদেছেন- তাদের সবাইকে ভালোবাসা। মনে রাখবেন বন্ধুরা, যাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ তাদের সবাইকে আমরা ঘৃণা করি না, যাদেরকে আমরা পাহারা দিচ্ছি তাদের সবাইকেই যে আমরা ভালোবাসি তা না।  

তুই কিরকম ভাবে বেঁচে আছিস আমি এসে দেখেছি নিখিলেশ।  ইশরাত জাহান ঊর্মি, সাংবাদিক

news24bd.tv নাজিম