আজ সূর্যগ্রহণ: বিশ্বাস ও বিজ্ঞানের যুদ্ধ

আজ সূর্যগ্রহণ: বিশ্বাস ও বিজ্ঞানের যুদ্ধ

নিউজ ২৪ ডেস্ক

আজ সূর্যগ্রহণ। ৩৮ বছর পর পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেখা যাবে না বাংলাদেশ থেকে। আজ মধ্য দুপুরে সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসবে যুক্তরাষ্ট্রে।

আশপাশের অঞ্চল থেকেও দেখা যাবে আংশিক গ্রহণ। তবে বাংলাদেশে তখন সময় থাকবে রাত নয়টা।  

চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ নিয়ে মানুষের মাঝে প্রচলিত রয়েছে নানা বিশ্বাস। আধুনিক বিজ্ঞান মনে করে এগুলো কুসংস্কার।

কী কারণে এই গ্রহণ হয় তা না জানার কারণেই এ বিশ্বাসগুলো হাজার বছর ধরে মানুষের মধ্যে গড়ে উঠেছে। মূলত, পৃথিবী আর সূর্যের মাঝখানে চাঁদ এসে পড়লেই সূর্যগ্রহণ ঘটে। পূর্ণ সূর্যগ্রহণে চাঁদের ব্যাস সূর্যের ব্যাসের তুলনায় বড় দেখায়। এতে প্রথিবীর একটি অংশ থেকে সূর্যকে দেখা যায় না। চাঁদের কারণে পৃথিবীর ওই অংশে পড়ে না সরাসরি সূর্যের আলো। তখনই হয় সূর্যগ্রহণ। ঠিক তেমনি সূর্য আর চাঁদের মাঝখানে পৃথিবী এসে পড়লে হয় চন্দ্রগ্রহণ। পৃথিবীর ছায়া অন্ধকার করে দেয় চাঁদকে।  

আজকের সূর্যগ্রহণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বেশ শোরগোল চলছে কিছুদিন ধরে। কারণও আছে। ৩৮ বছর পর সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে ১৯৭৯ সালের পর আর কোনো সূর্যগ্রহণ দেখা যায়নি। আর সর্বশেষ পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল ১৯১৮ সালে।

সূর্যগ্রহণ প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও এ নিয়ে অনেকের মাঝে রয়েছে নানা বিশ্বাস। দেশে দেশে সে বিশ্বাসের মধ্যে রয়েছে পার্থক্য, আছে মিলও। আসুন জেনে নিই এমন কিছু বিশ্বাস সম্পর্কে যা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কুসংস্কার-

১. সূর্য ও চন্দ্রের যুদ্ধ
পশ্চিম আফ্রিকার বেনিন ও টোগো উপজাতির মানুষরা বিশ্বাস করে যে ‘গ্রহণ’ মানে সূর্য ও চন্দ্রের মধ্যে ক্রমাগত যুদ্ধ। তাঁদের আরও ধারণা যে একমাত্র পৃথিবীই এই যুদ্ধ মেটাতে সক্ষম। যার বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই।

২. ‘সূর্যকে গিলে ফেলা’-র তত্ত্ব
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার মানুষ বহু আদিম সময় থেকেই মনে করে যে সূর্যকে কেউ বা কারা যেন গ্রাস করছে। আর সে কারণেই ‘গ্রহণ’-এর মতো মহাজাগতিক ঘটনা ঘটে। ভিয়েতনামে মনে করা হয়, কোনও ব্যাঙ এসে গিলে ফেলছে সূর্যকে। ইওরোপের ভাইকিংসরা মনে করেন যে কোনও নেকড়ে এসে খেয়ে ফেলছে সূর্যকে। হিন্দু শাস্ত্রে মনে করা হয় যে রাহু গ্রাসে যাওয়ার ফলে সূর্যের গ্রহণ হয়।  যার বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই।

৩. চুরি হয়েছে সূর্য
কোরিয়ানরা মনে করেন যে সূর্যকে চুরি করে নিয়ে যায় কোনও রাক্ষুসে কুকুর। কোরিয়ান লোক সঙ্গীতে এই নিয়ে বহু সুরও বাঁধা হয়েছে।  এটারও নেই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি।

৪. শাঁখ বাজানো
হিন্দুশাস্ত্র মতে মনে করা হয় যে, যেহেতু রাহু নামের রাক্ষস সূর্যকে গ্রাস করে ফেলে, তাই সেই সময়টিতে শাঁখ বাজিয়ে রাহুকে ভয় দেখানো হয়। বিজ্ঞান এটা স্বীকার করে না।

৫. গ্রিকদের বিশ্বাস
প্রাচীন গ্রিসের পৌরানিক কাহিনিতে মনে করা হত সূর্যগ্রহণের ঘটনা মানেই কোন না কোন দেবদেবী রুষ্ট হয়েছেন। যার ফলে কোনও দুর্যোগের আশঙ্কা করা হত। মূলত এই মহাজগতিক ঘটনাকে নেতিবাচক চোখে দেখা হত এখানে।

৬. খাবার না খাওয়া
উপমহাদেশের বিভিন্ন অংশে সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়া-দাওয়া বন্ধ রাখা হয়। এ সময় খাবার খেলে স্থায়ী পেটের অসুখ হবে বলে মনে করা হয়।  এ ব্যাপারেও বৈজ্ঞানিক কোন যুক্তি পাওয়া যায়নি।

৭. সূর্যকে গিলে খাচ্ছে ড্রাগন
চৈনিক সভ্যতাসহ বেশ কিছু আমেরিকান ও ইউরোপীয় সভ্যতায় সূর্যগ্রহণের কারণ হিসেবে ড্রাগনের উল্লেখ আছে। মনে করা হয় এদিন সূর্যকে গিলে খায় ড্রাগন। ‘গেম অব থ্রোনসে’র কল্যাণে পুরাকথার এই কল্পিত ড্রাগন স্থান করে নিয়েছে মানুষের কল্পনাতেও। এটা শুধুই কল্পনা।

৮. প্রসূতি মায়েদের ভয়
সূর্যগ্রহণের সময় জন্ম নেওয়া শিশুদের ব্যাপারে দুই ধরনের গপ্প শুনতে পাওয়া যায়। এক. শিশুটি অসুস্থ হবে এবং দুই. শিশুটি চালাক হবে। তবে এ দুটি ধারণার কোনোটার ক্ষেত্রেই বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না।  

৯. ম্যাক্সিকান সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হয়, সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের এক টুকরো খেয়ে ফেলা হয়। প্রসূতি মা সূর্যগ্রহণ দেখলে তার অনাগত সন্তানের এক টুকরো খেয়ে নেবে দেবতারা!  যার বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই।

১০. হিন্দু উপকথায় গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করে রাহু নামে এক অসুরের কর্তিত মুণ্ডু, যিনি সূর্য আর চাঁদ গিলে খেয়েছিলেন।

১১. উপমহাদেশের অনেক স্থানেই চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময় মাছ কাটা নিষেধ। বিশেষ করে গর্ভবতীরা এ সময় মাছ কাটলে তার অনাগত সন্তানের অঙ্গহানি ঘটতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়। তবে এ বিশ্বাসেরও গ্রহণযোগ্য কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।  

১২. কাত হয়ে শুতে বারণ
সেন্ট লুইসে অবস্থিত মার্সি হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্ট শাফিয়া ভুট্টোর মতে, সূর্যগ্রহণের সময় পাকিস্তানে মায়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চিত করে শোয়ানো হতো। নইলে নাকি গর্ভের শিশু বিকলাঙ্গ হয়! বাংলাদেশেও এ ধারণার অস্তিত্ব রয়েছে।

যে সংস্কারটি মানবেন
সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের দিকে সরাসরি তাকানো নিষেধ। এই সংস্কার অবশ্যই মানা উচিত। কারণ, এটা শুধু গ্রহণ বলে নয়, কখনোই খালি চোখে সূর্যের দিকে তাকানো উচিত নয়। সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি চোখের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিজ্ঞান সেটাই বলে। সূর্যগ্রহণ দেখতে চাইলে অব্যবহৃত এক্স-রে প্লেট দিয়ে দেখা যেতে পারে। এছাড়া বাজারে এখন সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য বিশেষ রোদচশমাও পাওয়া যাচ্ছে।

সূত্র: ইউএসএ টুডে, কেএসএল ডট কম, ওয়ান ইন্ডিয়া।

সম্পর্কিত খবর