এখন যে ধরনের ফিল্ম হচ্ছে সেখানে আমার গানের প্রয়োজন হচ্ছে না: সাবিনা ইয়াসমিন

এখন যে ধরনের ফিল্ম হচ্ছে সেখানে আমার গানের প্রয়োজন হচ্ছে না: সাবিনা ইয়াসমিন

ফাতেমা কাউসার

বাংলা সংগীত জগতের এক জীবন্ত কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমিন। গত পাঁচ দশক ধরে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা গানের ভান্ডার। অসংখ্য ছবিতে করেছেন প্লেব্যাক। যার সুরেলা কন্ঠ মুগ্ধ করেছে কোটি কোটি শ্রোতা দর্শককে।

১৩বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারসহ তার ঝুলিতে রয়েছে একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পদক। এবারই প্রথম মিউজিক্যাল ফিল্মে কণ্ঠ দিলেন তিনি। যেখানে তার সহশিল্পী মোমিন বিশ্বাস। সম্প্রতি গানটির রেকোর্ডিং এ অংশ নেন এই জীবন্ত কিংবদন্তি।
রের্কোডিং এর ফাঁকেই তিনি আলাপ করেন নিউজ টোয়েন্টিফোরের সাথে। যেই আলাপনে উঠে আসে তাঁর বর্তমান ব্যস্ততা, ফিল্মের গানের বর্তমান অবস্থাসহ সমসাময়িক নানা বিষয়।

১..কতদিন পর গানের রেকর্ডিং এ আসলেন?

সাবিনা ইয়াসমিন: প্রায় দুই মাস পর গানের রেকর্ডিং এ আসলাম। আজকে যে গানটির রেকর্ডিং করলাম সেটি সুর করেছেন মোমিন বিশ্বাস। লিখেছেন শেখ নজরুল। আমার খুব ভালো লাগছে মোমিনের সাথে গান করে। মোমিন এন্ড্রু কিশোরের শিষ্য। এন্ড্রু কিশোর আমাকে ওর কথা অনেকবার বলেছে। গানটি ও খুব সুন্দর করে সুর করেছে।

২..এক সময় আপনি প্রায় প্রতিদিনই গান রেকর্ডিং এ ব্যস্ত থাকতেন। এখন আর সেই ব্যস্ততা নেই। তাহলে কি আপনি সময় দিতে পারছেন না?
 
সাবিনা ইয়াসমিন: এখনতো করোনা তবে সেজন্য আমার ব্যস্ততা কমেছে এটা সত্যি না। অন্তত আমার ক্ষেত্রে। আমার মনে হয় এখন যে ধরনের ফিল্ম হচ্ছে সেখানে আমার গান প্রয়োজন হচ্ছেনা। বা যে গান হচ্ছে সেগুলো হয়তো আমার মতো না,তাই আমাকে কেউ বলছেনা।

৩..এখনকার সিনেমার গানগুলো মানুষের মনে দাগ কাটছেনা এমন অভিযোগ রয়েছে। বলা হয় এখনকার গানে কথা,সুরের দৈন্যতা রয়েছে আপনি কি এটার সাথে একমত?

সাবিনা ইয়াসমিন: কিছু কিছু গান ভালো হচ্ছে এটা সত্যি কথা। তবে আমাদের সময়ে সিনেমার গানগুলো একদম সিকুয়েন্স এর সাথে মিলে যেতো। তখনকার গানগুলো মানুষের মনে দাগ কাটতো এটা সত্যি কথা। আমরাও গান করার সময় অনেক সময় দিতাম। সবাই মিলে আলোচনা করতাম তারপর গাইতাম। এমনও হয়েছে এফডিসিতে একশ বারেরও বেশি গানের টেক দিয়েছি। আর এখন গিয়েই রেকর্ড করে ফেলে। আমারও মনে হয় গানগুলো মানুষের মনে থাকেনা। এখনও কোনো অনুষ্ঠানে গেলে সেই পুরোনো সিনেমার গানগুলোই মানুষ শুনতে চায়।

৪..আপনি তিন প্রজন্মের সাথে গান করেছেন ভাবলে নিশ্চই ভালো লাগে?

সাবিনা ইয়াসমিন: খুবই ভালো লাগে। তিন প্রজন্মের সাথে গান করেছি ভাবলেই রোমান্স অনুভব করি।

৫..আপনি অবসরে কার গান শুনেন?

সাবিনা ইয়াসমিন: এখনতো আর আগের মতো টেপ রেকোর্ডারে গান শোনা হয়না। তবে ইউটিউবে শুনি। দেশে এবং দেশের বাইরে অনেকের গানই শুনি। দু একজনের কথা বলা যাবেনা। অনেকের গানই শুনি।

৬..নিজের গান কি শোনা হয়?

সাবিনা ইয়াসমিন: না নিজের গান শুনিনা। কেমন জানি লাগে। শুনলে মনে হয় ,ধূর আরেকবার যদি গাইতে পারতাম।

৭..নিজের কোন গানটি শোনার পর মনে হয়েছে আরেকবার যদি গাইতে পারতাম?

সাবিনা ইয়াসমিন: অনেক গান। অনেক গানই এখন শুনলে মনে হয় আবার গাইলে ভালো করতাম। যেমন: একি সোনার আলো জীবন ভরিয়ে দিলাম ,কেউ কোনোদিন আমারেতো কথা দিলোনা, সব কটা জানালা এমন অনেক গান শুনলে মনে হয় আবার গাইলে ভালো হতো।

৮..অনেক নায়িকার লিপে আপনার গান সিনেমায় ব্যবহার হয়েছে। আপনার কি মনে হয় কার লিপে আপনার গান বেশি মিলে যায়?

সাবিনা ইয়াসমিন: কবরি, ববিতা, অঞ্জু, অঞ্জনা, শাবানা প্রায় সবার লিপেই আমার গান মিলে যায়। তবে আমি গান করার আগেই জেনে নিতাম কার লিপে কার করছি। চেষ্টা করতাম তার মতো করেই করার। তবে আমার খুব মজা লেগেছে আমি দোয়েলের লিপেও গান করেছি আবার দোয়েলের মেয়ে দিঘির লিপেও গান করেছি।

৯..সাম্প্রতিক সময়ে শিল্পিীদের গানের রয়েলিটি নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। আপনি কি আপনার গানের রয়েলিটি পাচ্ছেন?

সাবিনা ইয়াসমিন: কই পাচ্ছি নাতো!! কপিরাইটের জন্যতো কবে থেকেই যুদ্ধ করে যাচ্ছি। আমাদের হাজার হাজার গান বিভিন্ন জায়গায় বাজতেছে কই কেউতো রয়েলিটি পাচ্ছেনা। আলাউদ্দিন আলীতো চেষ্টা করতে করতে চলেই গেলেন। সবগুলা মোবাইল কোম্পানি, রেডিও, টেলিভিশন, সব জায়গাতেইতো ব্যবহার হয় কই আমরাতো কেউ কিছু পাচ্ছিনা। রয়েলিটি যদি পেতো তাহলে কি আর আমাদের আবদুল আলিমের পরিবার এতো কষ্টে থাকতো।

news24bd.tv আহমেদ