পোশাককর্মী আরিফুল ইসলামের সাথে অপর পোশাককর্মী পাপিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এই সম্পর্ক পাপিয়ার ভাই সাইফুল মেনে নিতে পারেনি যে নাকি তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তরিত হয়ে শাম্মি নাম ধারণ করেছে। শাম্মিও চাইতো আরিফুল তার সাথে প্রেমের মাধ্যমে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলুক। এই দ্বন্দের জেরে ত্রিভুজ প্রেমের বলি হয় পাপিয়া যার মরহেদ অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে আড়াই হাজার থানা পুলিশ।
গত বুধবার পিবিআই প্রেমিক আরিফকে গ্রেপ্তার করলে পাপিয়া হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় পুলিশ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, আড়াইহাজারের শিমুলতলায় পাওয়া অজ্ঞাতনামা যুবতীর লাশের আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে ৬ মাস পর গার্মেন্টকর্মী পাপিয়ার বেগম পরিচয় উদঘাটন করা হয়েছে। তিনি জানান, মূলত ত্রিভুজ প্রেমের বলি হয়েছে পাপিয়া। আর এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল পাপিয়ার ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম যে নাকি তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তরিত হয়ে শাম্মি নাম ধারণ করেছিল।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, পাপিয়ার সাথে আরিফের প্রেমের কথা জানতে পারলে শাম্মির সাথে ঝগড়া হয়। গত ২৭মে প্রেমিক আরিফুল, পাপিয়া এবং তার ভাই সাইফুল পরে নামকরণ শাম্মি সবাই পাপিয়ার বাসায় ছিল। পাপিয়া ও শাম্মির ঝগড়ার কারণে আরিফুল বাড়ী থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে বৃষ্টির কারণে যেতে না পারায় তার পরিচিত একই বিল্ডিংয়ের ২য় তলায় জনৈক সামিয়ার বাড়ীতে অবস্থান করে। কিছুক্ষণ পরে পুনঃরায় আরিফুল পাপিয়ার ঘরে এসে পাপিয়ার লাশ ঘরের বিছানার উপর দেখতে পায়।
এসময় ভিকটিমের গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল এবং শাম্মি ঘর থেকে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু আরিফুল ঘরের ভিতরে চলে আসায় শাম্মি আরিফুলকে বলে যে, পাপয়িা বেঁচে আছে। পরে তারা একজন স্থানীয় ডাক্তারকে ডেকে এনে জানতে পারে পাপিয়া মারা গেছে। শাম্মির মাধ্যমে তার বাবা জয়নাল, পাপিয়ার মৃত্যুর খবর জানতে পেরে ঘটনাস্থলে আসে। পরে পাপিয়ার বাবা জয়নালের পরিকল্পনামতে আসামী মো. আরিফুল ইসলাম, জয়নালের ছেলে মামুন এবং শাম্মি মিলে মৃত পাপিয়ার লাশ ভৈরব ব্রীজ থেকে নদীতে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনামতে তারা সবাই মিলে একটি এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মৃত পাপিয়াকে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে রওয়ানা হয়। কিন্তু পথিমধ্যে পুলিশের চেক পোষ্ট থাকায় তারা আড়াইহাজার থানাধীন শিমুলতলা নামকস্থানে রাস্তার পাশে জঙ্গলের ভিতরে পাপিয়ার লাশ ফেলে দিয়ে চলে যায়।
আরও পড়ুন: বার্সেলোনায় দুই দিন ব্যাপী দূতাবাস সেবা প্রদান
তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, শনিবার আসামী আরিফুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে বলেছে, নিহত পাপিয়ার ভাই শাম্মি পাপিয়াকে হত্যা করেছে। এছাড়াও পূর্বে গ্রেপ্তারকৃত আসামী পাপিয়ার বাবা জয়নাল মিয়াকে ২ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানায়, তার পরিকল্পনামতেই সে সহ তার সহযোগী আসামীরা পাপিয়ার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে আড়াইহাজার থানাধীন শিমুলতলা নামক স্থানে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে গেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মে আড়াইহাজারের শিমুলতলায় একজন অজ্ঞাতনামা যুবতীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় ২৯ মে একটি মামলা করে। প্রথমে মামলাটি পুলিশের কাছে তদন্তাধীন থাকার পর ২৩ জুলাই পিবিআই এর কাছে মামলাটি হস্তান্তর করা হয়।
news24bd.tv আহমেদ
