পরিচিত অনেকে মরে যাচ্ছে

পরিচিত অনেকে মরে যাচ্ছে

আনোয়ার সাদী

দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুনীরুজ্জামান আর নেই। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতাল থেকে তিনি আর বাড়ি ফিরে যাননি। তিনি হয়ে গেছেন মাটি ও মহাকালের অংশ।

 

একজন সম্পাদক হিসাবে মুনীর ভাই বেশ কয়েকবার নিউজটোয়েন্টিফোরের অফিসে এসেছেন। প্রতিবারই এসেছেন টক শো করতে। ঋজু ও টানটান কথা বলেছেন শোতে। টক শো করেছি এমন অনেককে এই বছর হারিয়েছি।

তাদের প্রত্যেকের মৃত্যু বুকের ভেতরে হাহাকারের ঝড় তুলে গেছে। সে ঝড়ে মন কতোটা বিষাদ আক্রান্ত হয়েছে তা বলা কঠিন। সে ভাষা এখনো রপ্ত করতে পারিনি।
  
পরিচিত আরো অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন, এখনো হচ্ছেন। সরকারের দিক থেকে বলা হচ্ছে এটা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। বিশেষজ্ঞদের অনেকে অবশ্য প্রথম দ্বিতীয় বলছেন না, তারা বলছেন বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় সতর্ক থাকা। তাদের কারো কারো মতে শীতকাল ভয়ংকর হতে পারে। কারণ শীতকালে বাতসে পানি থাকে বেশি। সেই বাতাসে ভাইরাস ভেসে থাকতে পারে অনেক সময় ধরে, ফলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি একটু বেশি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।  

এবারের সংক্রমন বৃদ্ধির সঙ্গে সংক্রমনের শুরুর দিককার পরিস্থিতির বেশ পার্থক্য আছে। তখন সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিলো। সামাজিক দূরত্ব মানানোর জন্য ব্যাপক তৎপরতা ছিলো। আমাদের হাতে তেমন কোনো তথ্য ছিল না। আমাদের চিকিৎসকরা একজনের পর আরেকজন মারা যাচ্ছিলেন, ফলে মোটমুটি চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিলো। এখন আমাদের হাতে করোনা ভাইরাস ও এর সংক্রমন নিয়ে অনেক তথ্য আছে।  

আমাদের চিকিৎসকরা এখন হাসপাতালে বসছেন, টেলিমেডিসিনও পাকাপোক্ত একটা অবস্থায় আছে। তারপরো এখন আমার পরিচিতদের মাঝে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন, একজনের মৃত্যুর খবর দিয়েতো লেখা শুরুই করেছি। নিশ্চয়ই আপনাদেরও পরিচিতদের কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছে। তাই না?

আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা বোধ হয় ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারছি না। বাজারে এখন ভিড় হচেছ, বাজার চালাতে হবে। অফিসে ভিড় হচ্ছে, অফিসও চালাতে হবে। চালকের চাকা, শ্রমিকের হাত, কৃষকের লাঙ্গল বন্ধ রাখা যাবে না। তবে এসবই এখন দুটো সাবধানতা মেনে করলে নিরাপদ থাকা যায় বলে আমরা জেনে গেছি। এক হলো ব্যবধান রাখা অর্থাৎ অন্যের কাছ থেকে ৬ ফুট দূরে থাকা। যাতে আক্রা্ন্ত কেউ হাঁচি কাশি দিলেও আপনি তার নাগালের বাইরে থাকতে পারেন, তা নিশ্চিত করা। অপরটি হলো মাস্ক ব্যবহার করা।  

আমরা অনেককেই মুখের নিচে দাঁড়ি বানিয়ে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখতে দেখি। সেটা উপকারের চেয়ে অপকারই করে বেশি। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে জনসমক্ষে, সঠিক নিয়মে, মুখ ও নাক ঢেকে রেখে। ফলে আপনার ড্রপলেট বা মিহি জলকনা কথা বলার সময় বাতাসে ছড়িয়ে যাবে না। শ্বাস প্রশ্বাসের সময় নাক দিয়ে বের হওয়া এরোসল বা মিহি জলকনাও ছড়িয়ে পড়বে না পরিবেশে। তেমনিভাবে আক্রান্ত কারো জলকনা বাতাসে মিশবে না। ফলে, সবাই মাস্ক পড়ে নিজেদের পরিবেশ নিরপদ করে ফেলতে পারি। উপায় সহজ। কিন্তু সেটা আমরা মানছি না। মাস্ক পড়ানোর জন্য দেশে ভ্রাম্যমান আদালত নামাতে হচ্ছে, জরিমানা করতে হচ্ছে। অথচ শোভন ও সুন্দর বিষয় হতো সবাই নিজের দায়িত্বে মাস্ক পড়ে ভাইরাসের সংক্রমন কমানোর জন্য অবদান রাখলে।
 
যারা অশিক্ষিত তারা হয়তো বিষয়টা বুঝে না। কিন্তু শিক্ষিত মানুষরা যখন মাস্ক ব্যবহার না করে, ব্যবধান না রেখে চলাফেরা করে তখন মনে প্রশ্ন জাগে, এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে।  

ফেইসবুকে কিছু কথা জনপ্রিয় হয়েছে। এই যেমন, কক্সবাজারে হোটেলে সিট খালি নেই, ঢাকায় আইসিইউতে সিট খালি নেই। তারপরো মানুষ ঘুরছে।  

আরো কিছু জনপ্রিয় কথা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই, অসুস্থ্য হওয়ার চেয়ে মাস্ক ব্যবহার ভালো, আইসিইউতে অবস্থান করার চেয়ে নিজের ঘরে থাকা ভালো।  

আমাদেরকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে হবে। অসুখে মরার চেয়ে না খেয়ে মরা কম কষ্টের বিষয় না। ফলে, কাজের পরিবেশ ভাইরাস মুক্ত রাখা আমাদের দয়িত্ব্। মাস্ক পড়ে সে দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে।  

নিউজ টোয়েন্টিফোরের সাংবাদিক হাসান পারভেজ একটা হিসাব দিয়েছেন। তিনি বলছেন, শীত আসার আগেই ঢাকায় যেভাবে করোনা নির্ধারিত হাসপাতালে আইসিইউ বেড ভর্তি হতে শুরু করেছে তা বিপদজনক। প্রায় ২ কোটি মানুষের রাজধানীতে করোনা রোগীদের জন্য মাত্র ৩০৫টি আইসিইউ বেড আছে। ১ নভেম্বর আইসিইউ বেড খালি ছিল ১৪২টি। নভেম্বরের ২৩ তারিখে এসে আইসিইউ বেড খালি আছে মাত্র ৮৩টি। ঢাকায় ১৯টি করোনা হাসপাতালের মধ্যে ৭টি হাসপাতালে আইসিইউ বেড ফাঁকা নেই।     

ফলে, এখন সবাইকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ করা ছাড়া আর কিছু করতে পারছি না। আবার করোনা সংক্রমন বাড়ছে এই অজুহাতে মাস্কের যেনো দাম বেড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখাও অনুরোধ করছি।  

আনোয়ার সাদী, সিনিয়র নিউজ এডিটর, নিউজটোয়েন্টিফোর।

news24bd.tv কামরুল

এই রকম আরও টপিক