সে দিন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ যেন বজ্রাঘাত ছিলো

সে দিন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ যেন বজ্রাঘাত ছিলো

সৈয়দ ইকবাল

৩০শে নভেম্বর সন্ধ্যায় বেঙ্গল ক্লাসিক্যাল মিউজিক ফেস্টভ্যালের মঞ্চে কথা বলতে-বলতে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন দেশ বরণ্যে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। সেই বছর ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিন দীর্ঘ যাত্রার পর টরন্টো থেকে ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমেছি। মন খুশি বেঙ্গল মিউজিক ফেস্টিভাল আরো দুই দিন বাকি আছে, আজই যাবো।  

বন্ধু ডাক্তার প্রফেসার হানিফের ড্রাইভার বাইরে আমার অপেক্ষায়।

ফোনের চার্জ শেষ, ওকে বেরিয়ে ডাকবো কি ভাবে। লাগেজ বেল্টে মৌমাছির মত ভিড়ে দেখি তখনকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির প্রিয় উপস্থাপক খালিদ মহিউদ্দিন লাগেজ অপেক্ষায়। কাছে গিয়ে ফোন চাইতে সুন্দর হাসির সঙ্গে ফোনতো দিলেন সঙ্গে মাথায় বজ্রাঘাতের মত সংবাদটি দিলেন।  

গত সন্ধ্যায় বেঙ্গল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল মঞ্চে কথা বলা অবস্থায় শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী মারা গেছেন।

স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকলাম। আর মিউজিক ফেস্টভ্যালে সেবার আমি যাইনি। ২০১৩ সালে ঢাকার বেঙ্গল গ্যালারীতে আমার ১৫তম একক ছবির প্রদর্শনী হয়েছিলো। আমি নিজকেই নিজে কথা দিয়ে রেখেছি দেশে আমার প্রদর্শনীর হবে প্রধান অতিথি প্রতিবারই শিল্পী হাশেম খানই হবেন। সুবীরদা গ্যালারী ডিরেক্টর তিনি শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে চান। বিশেষ অতিথি তখনকার কানাডিয়ান হাই কমিশনার হিদার ক্রুডেন ঠিক আছেন।  

কাইয়ুম ভাই হাশেম ভাইয়ের সিনিয়র। সুবিরদা বললেন, কানাডিয়ান হাই কমিশনারই হোক চিফ গেস্ট। শিল্পী দু’জন স্পেশাল গেস্ট হোক। আমি বলি আমার মান্নত যত বার দেশে প্রদর্শনী করবো হাশেম খানই চিফ গেস্ট। সুবিরদা বল্লেন-তাহলে কাইয়ুম স্যার তুমি বলবে আসতে। আমি বল্লাম – ঠিক আছে। সুবীরদা বল্লেন- হয়তো আসবেন না। কাইয়ুম ভাইয়ের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক দীর্ঘযুগের। এমন কি সুবীরদা,আবুল মোমেন কাইয়ুম ভাই স্বস্ত্রীক টরন্টো এলেও আমি তাদের নিয়ে ঘুরে বেড়াই।  

এজিও গ্যালারী মিউজিয়ামে গোটা দিন কাটাই, টরন্টো বাংলা বইমেলায় প্রধাণ অতিথি হতে কাইয়ুম ভাইকে এক কথায় রাজি করাই। তাঁর মত বাংলাদেশের প্রধাণ শিল্পীর কাছে একজন সামান্য শিল্পীর প্রদর্শনীর চিফ গেস্ট বা স্পেশাল গেস্টে কি আসে যায়! তবে ইগো একটা ভয়াবহ জিনিস আছে না! তবে এটাও ঠিক বড় মাপের মানুষেরা প্রথমেই নিজের ইগোকে খুন করেন বলেই  আকাশ স্পর্শ করতে পারেন।


আরও পড়ুন: যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড: আপিল বিভাগ


কাইয়ুম ভাইকে ফোনে বলেছিলাম- আপনাকে আসতেই হবে। সময় মত তিনি আমার প্রদর্শনীতে আসলেন তাও ভাবী সহ। পরে শুনেছি যাদের চোখের সামনে বেঙ্গল মিউজিক ফেস্টিভ্যালের মঞ্চে তিনি কাটা বৃক্ষের মত দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেলেন সেই সম্পর্কে। তিনি তার কথা বলে শেষ করে মঞ্চে রাখা চেয়ারে ফিরে গিয়ে বসে পড়ে ছিলেন। ওনার পর আনিসুজ্জামান মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে কথা শুরু করে ছিলেন।  

কাইয়ুম চৌধুরী হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে আনিসুজ্জামানকে এসে বল্লন – আমার একটা কথা বলা বাকি রয়ে গেছে। আনিসুজ্জান সাদরে একটু সরে দাঁড়ালেন। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ডান হাতে মাইক্রোফোন স্পর্শ করে কিছু বলতে গিয়ে পড়ে গেলেন মঞ্চের ফ্লোরে। সেখাই মৃত্যু। আমার শুধু জানতে ইচ্ছে করে! যে তিনি কি বলতে চেয়ে ছিলেন।

news24bd.tv আহমেদ