একটু উদার হই

একটু উদার হই

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

একটা লেখা হঠাৎ করে চোখে আটকে গেলো। লেখাটা এমন "একদল ডাকাত ব্যাংকে ঢুকলো ডাকাতির জন্য। উপস্থিত গ্রাহক আর কর্মচারীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করল। ডাকাতেরা বললো, "ভাইসব, টাকা গেলে সরকারের যাবে, আর প্রাণ গেলে যাবে আপনার।

আপনারাই বুঝুন কোনটা বাঁচাবেন" - এই কথা শুনে সবাই বসে গেল। ডাকাতরা নির্বিঘ্নে টাকা নিয়ে গেল। " 

ঘটনাটা নিশ্চই বিব্রতকর। তবে অমূলক নয়।

এখানে সবাই দেশের সম্পদের চেয়ে নিজের জীবনকে মহামূল্যবান মনে করেছে। হয়তো এটাই সবাই করতো। কারণ মানুষের কাছে নিজের স্বার্থের চেয়ে আর বড় কিছু নেই। টাকাটা কার গেলো। সরকারের না জনগণের? এখানে তর্ক বিতর্ক হতে পারে। সেখান থেকে নানামুখী থিওরির জন্মও হতে পারে। তবে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেই, অনেক কিছু বুঝে নিতে হয়। সেটা বিবেক দিয়ে, আবেগ দিয়ে নয়। তবে যে যাই বলুক, স্বার্থপরতা একটা ভয়ানক রোগ, যার কোনো চিকিৎসা নেই।   

আরও পড়ুন: 


বুলেট ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়া যাবে ৫৫ মিনিটেই!


একটা গল্প মনে পড়লো। নিছক গল্প হয়তো। অবশ্য এমনটা ঘটতেও পারে। একজন বৌ তার স্বামীকে বলছে, আমি যদি মিথ্যা বলি তবে আমি যেন বিধবা হই। আর তুমি যদি মিথ্যা বলো, তোমার যেন মরণ হয়। কিছু কি বোঝা গেলো। এই বুঝেও না বোঝাটা হলো স্বার্থপরতা। সব যুক্তিতেই যেখানে কলা গাছটা আমার। আর বাকি সব যুক্তিহীন আর কল্পনাপ্রসূত। আবুল বাশারের ‘শেষ রূপকথা’ উপন্যাসের কথা মনে পড়ে গেলো। সেখানে স্বার্থপরতা নিয়ে একটা নিখাদ সত্য কথা বলা হয়েছে এভাবে “স্বার্থ জিনিসটা বাধাগ্রস্ত হলে সাপের লেজের মতো হয়ে ওঠে, পা পড়লেই ফুঁসে উঠে ছোবলাতে চায় সাপটা। সে বন্ধুকে বোঝে না, বন্ধুকে ব্যবহার করে, ছোবলায়। স্বার্থ একটি অন্ধ সাপ, ত্বক দিয়েও সে শোনে কোথায় কী। ”

আমরা মাঝে মাঝে বলি পৃথিবীটা স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা এমন নয় পৃথিবী স্বার্থপর হয় না বরং মানুষরা তাদের আত্মকেন্দ্রিকতার বোঝাটা পৃথিবীর উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দায় এড়াতে চায়।   জোসে মার্টি বলেন, "স্বার্থপর মানুষ চোর। "  কথাটাতে একটা দর্শন আছে। চৌর্যবৃত্তি যাদের ভিতরে-বাহিরে, কথায়-কাজে, চিন্তা-মননে স্বার্থপরতা তাদের আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরেছে। তাহলে মনে হয় বলা যায়, সবধরণের চুরিবিদ্যায় পারদর্শী চোররাই স্বার্থপর, অথবা সব স্বার্থপররাই চোর।     স্বার্থপরতা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। কোনো হাই-পাওয়ারের চশমা লাগিয়েও সেখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া বোধ হয় সম্ভব নয়। তবে উদার হওয়াটাও অসম্ভব নয়।  

একটু উদার হই। নিজেকে বদলাই। আত্মত্যাগ নিয়ে ভাবি। নিজের ভাসমান ছায়াটাকেও মানুষের জন্য উৎসর্গ করি, তবেই হয়তো আবার পৃথিবী নতুন করে ঘুরবে। ঘুমন্ত মানুষ মৃত জনপদ থেকে ফিরে এসে জীবনবোধের খোঁজ পাবে।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

news24bd.tv কামরুল

এই রকম আরও টপিক