প্রসঙ্গ: বাকী জীবন কারাবাসের সাজা

প্রসঙ্গ: বাকী জীবন কারাবাসের সাজা

মিল্লাত হোসেন

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে মৃত্যু পর্যন্ত কারাবাস- দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের পর আশা করি ফাঁসির রায় (মৃত্যুদণ্ড) চাওয়ার ও দেয়ার চল কমবে।

 সমস্ত সাজাই কঠিন। হিউম্যানিটির খণ্ডিত খণ্ডিত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, সব শাস্তিকেই কোন না কোন ভাবে "অমানবিক" মনে হবে। তাই বলে কাউকেই পুরোপুরি শাস্তির বিধান উঠিয়ে দেয়া সমর্থন করতে দেখা যায় না।

 

আরও পড়ুন: 


করোনায় ঢাবির আরেক সাবেক অধ্যাপকের মৃত্যু

একটু উদার হই

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শোকের দিন হওয়ার কথা আজ


শুধু শাস্তিকে একটুখানি মানবিক বা পরিশীলিত কিংবা দৃষ্টিসুখকর করে দেখতে চান। যুগে যুগে এহেন মানবিক মানুষজনের দাবির মুখেই মৃত্যুদণ্ড, প্রকাশ্যে শিরোচ্ছেদ, শূলে চড়ানো, ক্রুশবিদ্ধ করা, কামানের গোলার সাথে বেঁধে উড়িয়ে দেয়া, বেত্রাঘাত, অঙ্গচ্ছেদ ইত্যাদি ধরনের "সভ্যতার সাথে যায় না" এমন দৈহিক শাস্তির বিধান বাতিল হলেও- শাস্তির বিধান কিন্তু রয়েই গেছে।  

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানেই আমৃত্যু কারাবাস- এটা আগে থেকেই ফৌজদারি আইনে ছিলো। শাস্তির প্রকারভেদ সংক্রান্ত দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৫৩ ধারামতে মৃত্যুদণ্ডের পরবর্তী উচ্চ সাজা হলো- Imprisonment for life; এর মানেই হলো- আমৃত্যু কারাদণ্ড।

আইনের একটা সম্পূরক ধারার ব্যতিক্রমী বিধানকেই আইনের মূল বিধান গণ্য করার যে অদ্ভুত ও অহেতুক ব্যাপারটি চলে আসছিলো এতোদিন ধরে, আপাতত তার একটা হিল্লে হলো আপিল বিভাগের রিভিউ আদেশের মাধ্যমে। আপাতত এজন্যই বলা যে, এর আগেও আপিল বিভাগ রায় দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস বলে পুনর্ব্যক্ত করলেও তা অনেকেরই মনোপুত হয়নি।

তাই এই রিভিউ আবেদনের সূত্রপাত। আশা করি সংশ্লিষ্ট অনেকেরই এই রিভিউ আদেশও মনোমত হবে না। ইতোমধ্যে "২য় রিভিউ (!)" করার ইচ্ছাপোষণ করতে দেখা গেছে নিযুক্ত আইনজীবীকে। এখন রাষ্ট্র যদি ইচ্ছাপোষণ করে যে, যাবজ্জীবন মানে ২০ বছর, তাহলে আইন সংশোধন করে Imprisonment for life উঠিয়ে দিয়ে ২য় সর্বোচ্চ সাজা ২০ বছরের কারাদণ্ড করে দিলেই হয়। অন্ততপক্ষে এতে বাংলা ও ইংরেজির ব্যাকরণগত দোষটিতো অপনোদিত হবে।

মিল্লাত হোসেন : বিচারক

news24bd.tv কামরুল