--এই কোভিডের সময় চারদিকে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। কেন? মানুষের ভিড় হবে, করোনা ছড়াবে। এত ঝুঁকি নিতে হচ্ছে! ভ্যাক্সিন আসার পর, ভয়াবহ ভাইরাসের সংক্রমণ কমার পর বিয়েশাদি করলে চলে না?
--না চলে না।
--কেন চলে না?
--বিয়ে তো সব ঋতুতে হয় না, কিছু নির্দিষ্ট ঋতুতেই হয়।
--কেন নির্দিষ্ট ঋতুতেই হবে হবে? যে কোনও সময় বিয়ে করলে অসুবিধেটা কী?
-- অসুবিধে আছে। বিয়ে যেন অমঙ্গল বয়ে আনতে না পারে, তা তো দেখতে হবে।
--এ আবার কেমন কুসংস্কার?
আরও পড়ুন:
করোনায় ঢাবির আরেক সাবেক অধ্যাপকের মৃত্যু
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শোকের দিন হওয়ার কথা আজ
--শ্রাবণে বিবাহে মৃতবৎসা, ভাদ্রে বিবাহে বেশ্যাযোগ, আশ্বিনে বিবাহে মৃত্যুযোগ, কার্তিকে বিবাহে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশংকা, পৌষে বিবাহে আচার ভ্রষ্টা তথা স্বামী বিয়োগিনী হওয়ার সম্ভাবনা, চৈত্র মাসে বিয়ে হলে কন্যার মদনোন্মত হয় অর্থাৎ কামভাবে জর্জরিত হয় , যেটা কারও শরীরের পক্ষে আদৌ মঙ্গলজনক নয়। তাই এ ঋতুগুলো বিবাহের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন আমাদের সমাজপতি শাস্ত্রজ্ঞ আদিপুরুষেরা।
তারমধ্যে জ্যৈষ্ঠ মাসে আবার জ্যেষ্ঠ সন্তান সে পুত্র বা কন্যা যাই হোক বিবাহ শুভ নয়। প্রাচীনকালের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী নিজের জন্মমাসে বিয়ে করাও সামাজিক রীতি ছিল না। জন্মমাসে বিবাহ করলে পাত্র-পাত্রী মহাদুঃখে পতিত হতে পারেন, এই রীতিকে মান্যতা দিয়ে।
আবার বঙ্গদেশে বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত চলে প্রবল ঝড়-বাদল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সুতরাং, বিবাহের জন্য উপযুক্ত ঋতু অবশিষ্ট থাকল অগ্রহায়ণ, মাঘ ও ফাল্গুন। আবার এই তিন ঋতুই যথারীতি শীতকাল।
--শিক্ষিত লোকেরাও মানে এসব?
--আলবৎ মানে।
--যারা প্রগতিশীল,যারা ধর্ম মানে না, তারাও মানে?
--তারাও মানে।
লেখক: তসলিমা নাসরিন