জাপানের সর্বযুগের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং আদরণীয় কবি মাৎসুও বাশোও, যার জীবনকাল ছিল মধ্যযুগে। ১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে জন্ম এবং ১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দে মৃ্ত্যু। জাপানের মধ্যযুগকে এদো যুগ বলা হয়ে থাকে যার সময়সীমা ছিল ১৬০৩ থেকে ১৮৬৮ খ্রি: পর্যন্ত। যাকে বলা হয়ে থাকে সামুরাই যোদ্ধাদের আমল।
তখন এদো তথা বর্তমান টোকিও ছিল এদো যুগের রাজধানী। ১৮৬৮ সালে এদো যুগের অবসান হয়ে মেইজি যুগের সূচনা হয়, আধুনিকতার দিকে ধ্রুত ধাবিত হতে থাকে নিপ্পন, নতুন নামকরণ হয় জাপান এবং এদো পরিবর্তিত হয়ে তোওকিয়োও তথা টোকিও নামধারণ করে।
বাশোও ছিলেন ভ্রমণবিলাসী কবি। জাপানের অনেক জায়গায় তিনি ভ্রমণ করেছেন।
বাশোও এদো যুগে রাজধানী এদো মহানগরও ভ্রমণ করেছেন, অবস্থান করেছেন, লেখালেখি করেছেন। বিভিন্ন স্থানে তাঁর স্মৃতিফলক রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে তাঁর হাইকু বা ওয়াকা কবিতার পাথরে খোদাইকৃত নিদর্শন।
টোকিও হয়ে বয়ে গেছে সাগরের দিকে অন্যতম প্রধান বিখ্যাত নদী সুমিদা গাওয়া। এই নদীর তীর ধরে তিনি ভ্রমণ করেছেন। হাইকু লিখেছেন। নদীভ্রমণও নিশ্চয়ই করে থাকবেন। বসন্তকালে সুমিদা নদী তীরের মনলোভা সাকুরা ফুলের হানামি উৎসব দেখেছেন, দেখেছেন সাকুরা ফুলের উদ্যানে ওইরান তথা গণিকাদের নদীভ্রমণ। আরও দেখেছেন নদীর বুক চিরে চলে যাওয়া নৌকো।
চরাচরব্যাপ্যী অমলধবল চাঁদের আলোর প্লাবন। কী রোমান্টিক ছিল মধ্যযুগের গ্রামীণ জাপান যা চিত্রশিল্পীদের উকিয়োএ কাঠখোদাই চিত্রে উদ্ভাসিত হয়ে আছে! আমাদের নদীবিধৌত বাংলা অঞ্চলেও কি এমন দৃশ্য ছিল না? মনে তো হয় ছিল। কিন্তু এরকম চিত্র কেউ আঁকেনি। চিত্রশিল্পীর অভাব ছিল আমাদের নাকি চিত্রকলার্চা ছিল না, ঠিক জানা নেই।
অথবা আমাদের কোনো নদীর তীরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ভাস্কর্য নেই। অন্ততপক্ষে তাঁর প্রিয় নদী পদ্মার তীরে একটি সুদৃশ্যমান ভাস্কর্য নির্মিত হতেই পারত। কিন্তু বাঙালির সেই ঐতিহ্য নেই। যেমনটি আছে এশিয়ার একটি দেশ জাপানে। কবি মাৎসুও বাশোওর একটি ভাস্কর্য স্থাপিত আছে আধুনিক টোকিওর সুমিদা নদীর একটি সেতুসংলগ্ন স্থানে।
অর্থনৈতিকভাবে এত সমৃদ্ধশালী এবং লাখ লাখ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যে দেশের বাস্তবতা সেই দেশের নাগরিকদের রুচিবোধ ও সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা জগতে জাপানিদেরকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত করেছে। ২৮ নভেম্বর ছিল কবি মাৎসুও বাশোরওর ৩২৬তম মৃত্যু বার্ষিকী।
news24bd.tv কামরুল