এটা একটা নিরীহ গল্প

জসিম মল্লিক

এটা একটা নিরীহ গল্প

জসিম মল্লিক

১. ছবি দেখে ঘাবরানোর কিছু নাই। ঘটনা খুলে বলি। আমি দীর্ঘদিন ব্যাকপেইনে ভুগছি এটা পুরনো খবর। প্রায় তেত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে এই ব্যাথা আমার সঙ্গী।

আউট অফ টেন যদি ধরি তাহলে এই ব্যাথা কখনো কখনো টেনে টেন, কখনো পাঁচ থেকে আট মাত্রা পর্যন্ত। ব্যথা নিরাময়ের জন্য কি না করি আমি! কি না করেছি! সে সব লিখলে একটা উপন্যাস হবে।  

১৯৯১ সালে পিজি হাসপাতালে প্রফেসর রশীদউদ্দিন আমার সার্জারী করেছিলেন। এর আগে প্রায় দুই বছর অসহ্য ব্যথায় ভুগেছি এবং বেশ কয়েকজন নাম করা অর্থোপেডিক দেখিয়েছি।

তারা বিভিন্ন ব্যাথানাশক ওষুধ দিতেন। সে সব খেয়ে কোনো কজ হতো না।  

তারপর ডা. রশীদউদ্দিনের কাছে গেলাম। তিনি মাইলোগ্রাম করতে বললেন, তখন সম্ভবত এমআরআই ছিলনা। তখনই ধরা পড়লো যে আমার লাম্বার টু এবং থ্রি এর মধ্যে সমস্যা আছে। সব মানুষের পাঁচটি লাম্বার থাকে। ডাক্তার বললেন সার্জারি লাগবে। সার্জারি করলে আমি ভাল হবো। আমি তৎক্ষণাৎ রাজি হলাম।

২. তখন আমি তরুণ বলা যায়। ছোটবেলায় অনেক দৌড়ঝাপ করেছি। হাই জাম্প, লং জাম্প খেলেছি। শরীরের প্রতি খেয়াল করিনি। কেউ বলেও দেয়নি। শরীরের কোনো যত্ন ছিল না। ব্যাথা পেলে ওষুধ খেতাম না, ডাক্তার দেখাতাম না। শরীর সব সয়ে নিত। ওসব দেখারও কেউ ছিল না। দৌড়ঝাপ আর খেলাধুলার কারণেও কোনো কিছু ঘটে থাকতে পারে এমন মনে করতাম আমি। সার্জারি করে আমি ভাল হলাম।  

প্রফেসর রশীদউদ্দিন আমাকে নতুন জীবন দিলেন। মনে আছে সার্জারি করার একমাস যেতে না যেতেই চাকরির সুবাদে দীর্ঘ গাড়ি ভ্রমন করতে হয়েছিল আমাকে। গ্রামে গঞ্জে ঘুরেছি জীপে চড়ে (জীপ অবশ্য একটা গাড়ির নাম। তখন আমরা যে কোনো এসইউভিকে জীপ বলতাম)। রাস্তাঘাট এখনকার মতো এতো সুন্দর ছিল না। গ্রাম গঞ্জের রাস্তা ছিল খানা খন্দে ভরা, ভাঙ্গাচোরা।

৩. তারপর লম্বা সময় পার হয়েছে। ভালভাবেই দিন যাচ্ছিল। মাঝে মাঝে এক আধটু ব্যথা হতো। তখন যেতাম ডাক্তারের কাছে। ওষুধ খেতাম, এক্সারসাইজ করতাম। প্রফেসর আফজালের কাছে যেতাম। তিনি রশীদউদ্দিনের এসট্যিান্ট ছিলেন একসময়। ২০০৩ সালে কানাডা আসলাম। কানাডা আসার পরও কিছুদিন ঠিক ঠাক মতো চলছিল। কোল্ড ক্লাইমেটের কারণে আবার ব্যথা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে লাগল।  

বছর কয়েক আগে একবার লসএঞ্জেলেসে ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে একটা রাইডে উঠেছিলাম। রাইডটা ছিল মারাত্বক আমার জন্য। আগেই সতর্ক করা ছিল, যাদের এই ধরণের সমস্যা আছে তারা যেনো এইসব রাইডে না ওঠে। কিন্তু আমি বিষয়টা খেয়াল করিনি। ওটা ছিল জুরাসিক ওয়ার্ল্ড। প্রায় তিরিশ ফুট উপর থেকে রাইড ধাপস করে নিচে পানিতে পড়ল। ছলকে উঠল পানি। আমার মাথার হ্যাট উড়ে গেলো কোথাও। আমি আসন থেকে এক ফুট উপর উঠলাম, তাপর নিচে ধপাস করে পড়লাম। তখন কিছুই টের পাইনি। টরন্টো ফিরে এসে রীতিমত শয্যাসায়ী। সেবার এক মাস ভুগেছিলাম ব্যথায়।


আরও পড়ুন: 

অসাধারণ মানুষটা তার শেকড়টা চিনুক

ফের মামলার মুখোমুখি ফেসবুক

বড়দিনে মাস্ক পরার আহ্বান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার


৪. ব্যাথা নিরাময়ের জন্য নানা ধরণের ওষুধ খাই, ডিভাইস ইউজ করি, বেল্ট পড়ি, গাড়িতে ব্যাক সাপোর্ট লাগানো, স্যালোনপাস লাগাই ,ভলটারেন, রাব ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের জেল ব্যবহার করি। নানা পদের অয়েল ম্যাসেজ করি, হট ওয়াটার ব্যাগ ইউজ করি, ইমো সল্ট দিয়ে হট বাথ নেই। যে যখন যেটা বলে তাই করি, যেখানে যা পাওয়া যায় কিনে আনি। ফিজিও থেরাপি, আকু পাংচার কিছুই বাদ যায় না।  

এ বছর ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছি বাই-বীটের তৈরী নতুন ধরণের এক ডিভাইস। এটাকে বলে পালস ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড। এটাতে কিছু কাজ হয়। আলট্রা সাউন্ড এবং এক্সরে করেছি।  

সর্বশেষ এ বছরের শুরুর দিকে এমআরআই দিল ডাক্তার। ডাক্তার রোসেফ টরন্টোর একজন নামকরা নিউরোলোজিষ্ট। তিনি রেফার করলেন ডা. গ্রান্টির কাছে।  

গ্রান্টি জানালেন Intravenous Lidocaine And Ketamine Infusion লাগবে। আমার কোনো কিছুতে আপত্তি নাই। ১৯৯১ সালেও আমি হাসিমুখে সার্জারি টেবিলে গিয়ে শুয়েছিলাম। ইন্ট্রাভেনাস এমন কিছু কষ্টের না। ঘন্টাখানেকের মামলা। পুরো একটা স্যালাইনের মতো লিকুইড জিনিস ইনফিউশন করা হয়। কানাডার পেইন ম্যানেজমেন্টের ক্লিনিকে শুয়ে আজকে এই ছবি নিজেই তুলেছি।

news24bd.tv নাজিম