সাংবাদিকতার নামে ভণ্ডামি ছাড়ুন

সাংবাদিকতার নামে ভণ্ডামি ছাড়ুন

শাহাজাদা এমরান

পক্ষকালের ব্যবধানে আমাদের কুমিল্লার দুইজন এমপি মহোদয় পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শুনেছি বাহার ভাইয়ের (হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার, সংসদ সদস্য, কুমিল্লা-৬) সংবাদ সম্মেলনে ২৪৮ জন আর সীমা আপার (আঞ্জুম সুলতানা সীমা, সংসদ সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা আসন) সংবাদ সম্মেলনে ১৫০ জনের মতো সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।  

আমাদের জানামতে, এর মধ্যে টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইনসহ সর্বোচ্চ প্রায় ২০টি মিডিয়ায় (কিছুটা কম বেশি হতে পারে) নিউজ এসেছে বা ওই সমপরিমাণ সাংবাদিক নিউজ লিখেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক (ফটোসাংবাদিক ব্যতীত) সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে চেয়ার দখল করে রাখে, যাদের দাপটে সিনিয়র সাংবাদিকরা চেয়ারও পায় না, তারা কারা? যারা নিউজ লিখতে পারে না কিংবা নিউজ ছাপানোর মতো মিডিয়া যাদের নেই তাদের আমন্ত্রণ দেয় কারা এবং তারাইবা কেন যায়?
 
আরেকটি গুরুতর অপরাধ করছে তথাকথিত কিছু সম্পাদক নামধারী ব্যক্তি।

আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যে সকল দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক নিয়মিত পত্রিকা বের না করে নিজকে ওই সকল পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেয় তারা নষ্ট, ভ্রষ্ট, শঠ ও প্রতারক। আবার কেউ কেউ পত্রিকা প্রকাশ না করে অনলাইন ভার্সন করে দৈনিক পত্রিকার নাম জাহির করে, এরাও একই অপরাধী।  

আবার বিভিন্ন সরকারি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, যাদের পত্রিকা মাসের ত্রিশ দিনের মধ্যে পনের দিনও বের হয় না, তাদের পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিল বেশি জমা হয়েছে। যারা বিজ্ঞাপন পেলে ছাপে কিংবা সপ্তাহে কয়েকদিন ছাপে।

দুঃখ লাগে তখন, যখন দেখি শত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে যারা খেয়ে না খেয়ে কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে নিয়মিত পত্রিকা বের করে তাদের সাথে ওই তথাকথিতদের একইভাবে মূল্যায়ন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আবার ওরা নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশের মুরদ না থাকলেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সামনে বসা কিংবা অপনেতৃত্ব দেয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়।  
 
আমাদের পরিস্কার কথা, আরে ভাই, তুমি সামনে না, সম্ভব হলে এমপি মহোদয়ের সাথে গিয়ে বস কোন আপত্তি নেই। কিন্তু তুমি যে পরিচয় দাও, আমি অমুক পত্রিকার সম্পাদক কিংবা সাংবাদিক, তোমার সেই কথিত পত্রিকাটি সপ্তাহে কিংবা মাসে কয়টা বের কর, এটা একবারের জন্য হলেও নিজের বিবেককে প্রশ্ন করে দেখেছ ? আর তুমি যদি পত্রিকা প্রকাশ না করে শুধু অনলাইন বের করতে চাও কর, কোন অসুবিধা নেই। সবাইকে বল, আমার পত্রিকা দৈনিক বের হয় না। আমি শুধু অনলাইন ভার্সন প্রকাশ করি। এতে তো লজ্জার কিছু নেই। বরং এই সত্য স্বীকারে রয়েছে গৌরব এবং অহংকার। কারণ এতে পাঠকের কাছে কিংবা সমাজের কাছে ভণ্ডামি প্রকাশ পায় না, পেশাগতভাবে নিজ বিবেকের কাছে পরিস্কার থাকা যায়।

আর একটি বিষয়ে কুমিল্লার মূলধারার সাংবাদিকগণ আগেও কথা বলেছেন, এখনো বলছেন। সেটি হলো, কুমিল্লার কতিপয় পত্রিকা আছে , এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকার বিনিময়ে সাংবাদিকতার কার্ড বিক্রি করে। এটা অবশ্য সারা দেশেই হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে কার্ডে লিখে দেয় ‘বিশেষ প্রতিনিধি’। ওই পত্রিকার কর্তৃপক্ষকে যদি আপনি প্রশ্ন করেন, স্টাফ রিপোর্টার আর বিশেষ প্রতিনিধির মধ্যে পার্থক্য কি? আমরা নিশ্চিত যে উত্তর দিতে গিয়ে তাদের দাঁত ভেঙে যাবে, তারপরও বলতে পারবে না।  

প্রতিনিয়ত এই সমস্ত পত্রিকাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাই। আরে ভাই! কে বলেছে, আপনাকে সাংবাদিকতায় আসতে,পত্রিকা চালাতে। আপনার যদি পত্রিকা চালানোর সক্ষমতা না থাকে তাহলে কেন এসেছেন এই পেশায়। অন্য পেশায় যান। শুধু শুধু কেন সাংবাদিকতার মতো মহান পেশাটিকে কলঙ্কিত করছেন। আপনাদের জন্য আমরা কেন মানুষের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়ব। মনে রাখবেন, আপনি যখন যে পেশায় কাজ করবেন তার প্রতি শতভাগ সৎ থাকার চেষ্টা করবেন।  

নিয়মিত পত্রিকা ছাপাবেন না, সরকারি বিজ্ঞাপনে রাজত্ব করবেন, মন চাইলে কালেভাদ্রে ছাপাবেন, দৈনিক পত্রিকার পরিচয় দিয়ে বেড়াবেন,পত্রিকার নামে কার্ড বিক্রি করবেন, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে যেখানে সেখানে হুমকি দিবেন এগুলো ভণ্ডামি। দয়া করে এগুলো ছাড়ুন। নিয়মিত মিডিয়া না থাকলে নিয়মিত মাতাব্বরিও কইরেন না। আমাদের পবিত্র এই সাংবাদিকতার পেশাটিকে কলঙ্কিত কইরেন না। অনেক হয়েছে, এবার একটু থামুন। আমাদের সম্মান নিয়ে বাঁচতে দিন। দয়া করে দাওয়াত না দিলে কোন অনুষ্ঠানে যাইয়েন না, আবার কেন দাওয়াত দিল না এটা বলেও আয়োজকদের হুমকি দিয়েন না।  

আর রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিকহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তাদের বিনীত অনুরোধ করব, আপনারা প্রকৃত সাংবাদিকদের মূল্যায়ন করুন, সম্মান দিন। কেউ যদি কোন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক কিংবা সাংবাদিক বলে আপনাদের কাছে পরিচয় দেয়, দয়া করে জানতে চান ভাই, আপনার পত্রিকাটা আজ ছাপা হয়েছে কি না বা আপনি জাতীয় যে পত্রিকায় কাজ করেন সেটা কুমিল্লার স্টলগুলোতে পাওয়া যায় কিনা।  

এভাবে কথা বললে যারা সম্পাদক কিংবা সাংবাদিকতার নামে ভণ্ডামি করে বেড়ায় তারা বিব্রত হবে। তখন হয় তারা সঠিক পথে ফিরিয়ে আসবে নতুবা অন্য পথে চলে যাবে। এতে আপনারা, আমরা কুমিল্লা তথা গোটা দেশ ও জাতি উপকৃত হবো। বিকশিত হবে আমাদের রাষ্ট্রের এই চতুর্থ স্তম্ভটুকুও।

আমাদের,আপনাদের সবার বিবেক জাতির সেবায় নিয়োজিত হোক। এবারের মহান বিজয় দিবসে এটাই হোক আজকে আমাদের অঙ্গীকার।

লেখক: কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি- দৈনিক মানবকণ্ঠ, দি বাংলাদেশ টুডে ও ডেইলি বাংলাদেশ।  
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : দৈনিক আমাদের কুমিল্লা, সম্পাদক : কুমিল্লার জমিন।
সাধারণ সম্পাদক :বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, কুমিল্লা জেলা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক।   

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)