টিএসসি ভবন ভাঙা নিয়ে বিতর্ক, তাহলে সিদ্ধান্ত কি?

টিএসসি ভবন ভাঙা নিয়ে বিতর্ক, তাহলে সিদ্ধান্ত কি?

অনলাইন ডেস্ক

বেশ কয়েকদিন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র - টিএসসি ভবন ভাঙা নিয়ে বিতর্ক চলছেই। টিএসসির উন্নয়নের একটি পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে সরকার। আর সেই থেকেই এই বিতর্কের শুরু। তবে টিএসসি ভবন ভেঙে সেখানে আবারও নতুন ভবন হবে কি না সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

টিএসসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সৈয়দ আলি আকবর বলেন, এরইমধ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তর টিএসসিতে কয়েক দিন ধরে সার্ভে পরিচালনা করেছে। এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতাও দিয়েছেন তারা।

এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের এক বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, টিএসসিকে নতুন করে গড়ে তুলতে চান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান বলেন, "এটি আরেকটু সামনে অগ্রসর হোক, তথ্যগুলো আরো ঘনীভূত হোক, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা যাদেরকে দিয়েছেন সেই তথ্যগুলো আসুক, তারপর বলা যাবে।

"

ঢাকার গণপূর্ত অধিদপ্তরের সার্কেল চার এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, টিএসসির উন্নয়নের যে প্রকল্প রয়েছে সেটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। এ বিষয়ে একটি টিম কাজ করছে। তাদের পরিকল্পনায় কী রয়েছে সে বিষয়ে চলতি মাসের ১০ তারিখে একটি উপস্থাপনা হওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেটি হয়নি।

টিএসসির বর্তমান স্থাপনা ভাঙা হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যেহেতু পরিকল্পনাটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তাই এ বিষয়ে আসলে সিদ্ধান্তও আসেনি।

তবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও এরইমধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

অনেকেই বলছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়ার সাথে সাথে এর উন্নয়ন দরকার। আবার অনেকেই মনে করছেন, উন্নয়ন হতে হলে ইতিহাস বা ঐতিহ্যকে সাথে নিয়েই হতে হবে। সেটাকে বাদ দিয়ে শুধু ভবন নির্মাণ উন্নয়নের অংশ হতে পারে না।

গ্রিক স্থপতি কনস্ট্যান্টিন ডক্সিয়াডেস ষাটের দশকের শুরুতে টিএসসির নকশা করেছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের আমলে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।

তবে শুধু টিএসসি নয়, গত নভেম্বরের শেষ দিকে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের লাইন সম্প্রসারণ এবং মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশন ভবনটির একাংশ ভাঙার প্রস্তাব দেয় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এই বিষয়টি নিয়েও প্রতিবাদ করেন অনেকে।

পরে কমলাপুর রেলস্টেশন ভবনটি ভেঙ্গে কাছাকাছি জায়গায় পুনর্নির্মাণ করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ একটি পরিকল্পনায় সম্মত হয়।

কমলাপুর রেলস্টেশন ভবন ভাঙার যারা প্রতিবাদ করেন তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং একজন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।

তিনি বলেন, প্রতিবাদ মানেই উন্নয়ন না চাওয়া নয়। বরং এর বিকল্পের দাবি তোলা। "প্রতিবাদ মানে হচ্ছে যে উন্নয়ন কাজগুলি হবে সেটাকে সুন্দরভাবে গ্রহণযোগ্য অলটারনেটিভ বা বিকল্প। "


আরও পড়ুন: চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত অমানবিক: চরমোনাই পীর


"তাহলে তো যেকোন দিন হতে পারে যে, লালবাগ ফোর্ট ভেঙ্গে সেখানে বিরাট অফিস বিল্ডিং বা কোয়ার্টার বানানো হোক। ওই খানে তো বিরাট জায়গা আছে। কিন্তু এইটা তো সঠিক সিদ্ধান্ত না," বলেও জানান মোবাশ্বের হোসেন।

টিএসসির বিষয়ে মোবাশ্বের হোসেন বলেন, টিএসসির ভবন ভেঙে নয় বরং এটিকে অক্ষত রেখে কিভাবে একে আধুনিকভাবে গড়ে তোলা যায়, এর আশেপাশের জায়গা ব্যবহার করে সেগুলো কতটা ভালভাবে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, উন্নয়ন বলতে বোঝায়, কোনো কিছুকে কি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে বা ব্যবহার করতে চাওয়া হচ্ছে যদি সেই উদ্দেশ্য পরিবর্তন না হয়, আর যদি সেটাকে যুগোপযোগী করতে চাওয়া হয়, তাহলে ওই অবস্থার মধ্যেই সেটাকে করতে হবে। আর এর জন্য সবচেয়ে বড় সহযোগিতা করবে প্রযুক্তি।

"ছোট ছোট জিনিস পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে সমস্ত জিনিস একই রেখে আসবাব কিংবা ল্যান্ডস্কেপিংয়ে পরিবর্তন এনে সেটা আধুনিক করা সম্ভব। এটা নতুন নয়। পৃথিবীর বহু স্থানেই এটা করা হয়েছে," বলছিলেন তিনি।

এ বিষয়ে তিনি পানামনগরীর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ওই স্থানটিকেও সংস্কার করা হয়েছে কিন্তু সব কিছুকে অক্ষত রেখে।  
সূত্র: বিবিসি বাংলা।

news24bd.tv আহমেদ

এই রকম আরও টপিক