‌‘এবারও বেঁচে যাব’

‌‘এবারও বেঁচে যাব’

সাদিয়া নাসরিন

গত পাঁচবছর ধরে অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর মাস আসলেই আমার জীবনীশক্তির পরীক্ষা চলে, সহ্য শক্তি আর মাল্টিটাস্কিং  ক্যাপাসিটির মহড়া চলে।

এই সময় আমার সব প্রজেক্ট অডিট হয়, ফাইনাল রিপোর্টিং এর কাজ চলে, নতুন বছরের প্ল্যানিং চলে। নতুন প্রজেক্ট শুরু করার গ্রাউন্ড ওয়ার্কগুলো শুরু হয় এই সময়ই। ডোনার ভিজিট হয়।

সরকারি প্রজেক্টগুলোর “মূল্যায়ন” টীমের কক্সবাজার প্রজেক্ট ভিজিটের চাপ বাড়ে গ্রাউন্ড মাসে।

দুটো প্রজেক্ট রিনিউ হয় প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। তার জন্য এ্যকশন প্ল্যান ডেভেলপ করতে হয়, বাজেট দিতে হয়। তারপর সিরিজ অব মেইল চালাচালির পর রিনিওয়াল কন্ট্রাক্ট আসবে কি আসবেনা সেই মানসিক চাপ নিয়ে ঘুমের মধ্যে দু:স্বপ্ন দেখি।

আমার নিজের পারফর্মেন্স এপ্রাইজাল হয়।

এই সময়েই অর্গানাইজেশনের ভ্যাট, ট্যাক্স এর রিটার্নের কাজ চলে, পার্সোনাল ট্যাক্স রিটার্ন দিতে হয়। ব্যাংকে ছুটাছুটি বাড়ে।  
আমার টু ডু লিস্ট বাড়তে বাড়তে ঢাকা কক্সবাজার লোকাল বাস হয়ে যায়। মা দুর্গার মতো দশহাতে টু ডু লিস্ট শেষ করতে করতে সব হচপচ লেগে যায়।

এই সময়টাতেই অবধারিতভাবে অফিসের কারো না কারো শরীর খারাপ থাকবে এবং সেটা অবশ্যই রবিবার বা বৃহস্পতিবার।  
এবং অবধারিতভাবে বাচ্চাদের বাপ তার স্বামীত্ব প্রমাণ করার জন্য, তার অপরিহার্যতা বোঝাতে বিরাটাকারে হাজির হয়, সাইলেন্ট দড়ি টানাটানি চলে।

বাচ্চাদের মিডটার্ম এক্সাম চলে এই সময়। মারসাদের তো এবার ও-লেভেলের মব শুরু হলো। রাত সাড়ে তিনটা বাজে সে মশারীর ভেতরে বসে এডভান্স ম্যাথ করে। আমিও ঝিমাতে ঝিমাতে ল্যাপটপের সাথে সুপার গ্লু হয়ে যাই।

পুরো বাসায় মেডিকেল হোস্টেল সেটাপ। এবং এই বছরই মেরুদন্ডকে একঘন্টা পরপর বিশ্রাম দেওয়ার ডাক্তারী বাধ্যবাদকতা শুরু হয়েছে আমার।

আরও পড়ুন: তুমি মরে গেলেই মানুষ বাঁচতে শেখে

এবং ঠিক এই সময়টাতেই নিয়ম করে বুয়ার মা মরে যায়, নয়তো স্বামীর হার্ট এ্যাটাক হয়, নয়তো বাচ্চার চোখে গুতা খেয়ে মনি বের হয়ে যায়, নয়তো মেয়ের বিয়ে বা বাচ্চা হয়, নয়তো জামাইর সাথে মারামারি করে উনি গ্রামে চলে যান এবং অনির্দিষ্ট কালের জন্য আসে না, ওনার ফোন বন্ধ থাকে।

মোস্ট ইম্পরট্যান্ট থিং ইস, এই তিনমাস আমার স্যালারি হয় না। আমি তিনমাসের খাবার একসাথে জানুয়ারির মাঝামাঝি খাই। এবং অতি অবশ্যই এই সময়েই কোন না কোন উটকো ঝামেলা আসবে যার সমাধান টাকা ছাড়া হবে না।

তবুও আমার জীবনে ঠিকই একসময় জানুয়ারি মাস আসবে বলে আমি বেঁচে থাকি। এবারও বেঁচে যাব ঠিক।  (ফেসবুক থেকে নেওয়া)

সাদিয়া নাসরিন, উন্নয়ন কর্মী

news24bd.tv তৌহিদ