‘যতই উন্নত জাতি হোক কুসংস্কার বিদ্যমান’

‘যতই উন্নত জাতি হোক কুসংস্কার বিদ্যমান’

প্রবীর বিকাশ সরকার

একেক জাতির একেক রকম জাতিগত ভালোলাগা-মন্দলাগা রয়েছে। কুসংস্কারও বিদ্যমান যতই উন্নত জাতি হোক না কেন। জাপানে যখন এলাম ১৯৮৪ সালে ছাত্র হিসেবে গোঁফযুক্ত বদন নিয়েই এসেছিলাম। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে গোঁফ রাখব মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

যদিওবা বাবা-কাকা-জ্যাঠাসহ অধিকাংশ আত্মীয় পুরুষেরই গোঁফ ছিল না আমার। ছিল না বলেই হয়ত গোঁফওলা পুরুষ দেখলেই আমার তাকে স্মার্ট মনে হত।

সিদ্ধান্তমাফিক যখন কলেজে উঠলাম গোঁফ রাখলাম। ক্রমশ ঘন হয়ে উঠেছিল।

পাড়ার মেয়েরা, বান্ধবীরা গোঁফে আমাকে বেশ মানায় বলে প্রশংসা করত। শুনতে তো ভালোই লাগত। কিন্তু জাপানে আসার পর জানলাম যে এই দেশের নরনারী গোঁফ পছন্দই করেন না! তাজ্জ্বব কি বাত! জাপানি ভাষার ক্লাশে ম্যাডামও একদিন আমার প্রশ্নের জবাবে বললেন, সবাই নয়, তবে ৯৯ শতাংশ জাপানি গোঁফরাখা পছন্দ করেন না। কারণটা কী? পুরুষের গোঁফরাখা অ্যারোগেন্ট বা ঔদ্ধত্যের শামিল।

যে-কারণে জাপানে দেখতে পেতাম গোঁফহীন পুরুষ সর্বত্র। সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করেন জাপানিরা অফিস, আদালত ও ব্যবসা ক্ষেত্রে গোঁফরাখা। গোঁফওলা পুরুষ এত কম দেখা যেত যে, নিজেকে উদ্ধত বলে মনে হত। আমার শ্বশুরও পছন্দ করতেন না।   আমার স্ত্রী যখন বান্ধবী ছিল সেও না। এভাবে বছর তিনেক গোঁফযুক্ত অবস্থায় জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতির পড়ালেখা শেষ করলাম। প্রথম যে কোম্পানিতে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিলাম, সেইদিনই কোম্পানির প্রেসিডেন্ট তথা কর্ণধার বেশ বয়স্ক ভদ্রলোক বলে দিলেন, গোঁফ না থাকলেই তোমাকে সুন্দর দেখাবে। জাপানিরা কখনোই সরাসরি নেগেটিভ বা না-সূচক কথা বলেন না।

কী আর করা! বাধ্য হয়ে ছেঁটে ফেলে দিলাম। কিন্তু যখনই কোম্পানি বদল করেছি আবার কিছুদিনের জন্য রেখেছি। এভাবে বিগত ৩৬ বছরের প্রবাসজীবনে কতবার যে গোঁফ রেখেছি আবার ফেলে দিয়েছি তার হিসাব নেই।

ছবিটি ১৯৮৭ সালে শ্বশুরের বাসায় তোলা। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পূর্বক্ষণে।

লেখক: প্রবীর বিকাশ সরকার, ছড়াকার, উপন্যাসিক, গবেষক ও সম্পাদক।

news24bd.tv তৌহিদ