স্বাস্থ্যকর্মী রোগী রেখে পালিয়ে যেতে পারে না: শওগাত আলী সাগর

স্বাস্থ্যকর্মী রোগী রেখে পালিয়ে যেতে পারে না: শওগাত আলী সাগর

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘মাই লর্ড’- প্রথম যখন খবরটা শুনেন-নিজের অজান্তেই ইশ্বরকে ডেকেছিলেন মিশেল। আনন্দ আর দু:শ্চিন্তার অদ্ভুদ এক অনুভূতি যেনো তাকে অক্টোপাসের মতো চেপে ধরে। প্রথম সন্তানের আগমনের সংবাদ তাকে উদ্বেলিত করছে, একই সঙ্গে একটা ভীতি যেনো তাকে চেপে ধরছে।

মিসিসাওগার ট্রিলিয়াম হেলথ পার্টনার্স হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ডিউটি নার্স মিশেল।

স্বামী মাইকেলের দায়িত্ব ইমার্জেন্সী এটেনডেন্টস হিসেবে। একটি হাসপাতালের জরুরী কক্ষে দায়িত্ব পালন চারটিখানি কথা না। মিশেল- মাইকেল দম্পতি সেটি করে যাচ্ছিলেন আনন্দের সাথেই। কানাডায় যখন কোভিড ছড়িয়ে পরে, তখনো তারা ইমার্জেন্সীতেই রোগীর সেবায় মগ্ন।
কোভিডের সংক্রমণ যতো বাড়তে থাকে, হাসপাতালের ইর্মাজেন্সিতেও ততোই চাপ বাড়তে থাকে। মিশেল- মাইকেল দুজনেই ঝাঁপিয়ে পড়েন ইমার্জেন্সি রুমে কোভিড রোগীদের যতোটা সম্ভব সেবা দেয়ায়।

কিন্তু মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরই মিশেল নিজ শরীরের পরিবর্তনটা টের পেতে শুরু করেন। চিকিৎসক কনফার্ম করেন- ফ্রন্টলাইনার এই পরিবারে নতুন অতিথি আসছে। ‘নো, দিস ইজ নট অ্যা গুড টাইম’… নিজেকেই নিজে বলে উঠেন মিশেল। খানিকটা দুশ্চিন্তায় পরে যান তিনি। মাইকেলও।  

প্রথম সন্তান আসছে, প্রথম মা হচ্ছেন মিশেল… সেই ভাবনা চাপা পরে যায়। তিনি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুম ডিউটি নার্স, ইমার্জেন্সিতে কোভিড রোগীর ভীড়। হাসপাতালগুলো, চিকিৎসকরা রোগী সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন। এই অবস্থায় কি করবেন মিশেল!
সন্তানসম্ভবা কেউ কোনো কোভিড রোগীর কতোটা কাছে যেতে পারবে -  সে ব্যাপারে পাবলিক হেলথের গাইডলাইন সুষ্পষ্ট না।


আরও পড়ুন: মানুষের কমন সেন্স ফিরে আসুক


বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, কানাডার পাবলিক হেলথের গাইডলাইনও প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। সন্তানসম্ভাবনা স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই সরাসরি কোভিড রোগীর সংস্পর্শ থেকে দুরে অন্য ধরনের সেবায় নিয়োজিত হচ্ছেন। মিশেলের সামনেও একই ধরনের প্রস্তাব আছে। কিন্তু মিশেল সিদ্ধান্ত নিলেন নিজের মতো করে। তিনি বললেন, ইমাজেন্সী রুমের একজন নার্স কোনো কিছুতেই রুম থেকে হেটে বেরিয়ে যেতে পারেন না। হাসপাতাল উপচে পড়া রোগী, এই অবস্থায়তো আরো না।  

তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি ডিউটিতেই থাকবেন, এবং ইমার্জেন্সি রুমেই, যেখানে কোভিড রোগীর বন্যা বয়ে যাচ্ছে। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়ায়ের পুরোটা সময়ই মিশেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুমে কোভিড রোগীর পাশেই থাকলেন। মাইকেল খানিকটা  আতংকিত ছিলেন, মিশেলের সুস্থতা নিয়ে, সন্তানের সুস্থতা নিয়ে। কিন্তু মিশেলের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেননি তিনি। প্রথম সন্তানকে পেটে নিয়েই কোভিড রোগীদের সেবা দিয়ে গেলেন মিশেল।

ফ্রন্টলাইনার মিশেল - মাইকেলের পরিবারে নতুন সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছেন শেরিল হেলেন। শেরিলের মুখের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসেন মিশেল, ফিসফিস করে বলতে থাকেন, একজন স্বাস্থ্যকর্মী রোগী রেখে পালিয়ে যেতে পারে না।

news24bd.tv আহমেদ