প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের 
অধিকার
দুই দেশের দুই ঘটনা

প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের অধিকার

মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু

চমৎকার কাকতালীয় বটে একই সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের দুটি খবরের মিল-অমিল। ২৭শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের মিডিয়ায় খবর হয় যে, রংপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সুপার তাঁর কার্যালয়ে বিশেষ সংবাদ সম্মেলন ডেকে শিশুসন্তানসহ একজন নারী ডাক্তার ও তাঁর স্বামীকে হাজির করিয়ে জানান যে, স্বামীটি একজন নাপিত। সমাজ এমন বিয়ে মেনে নিতে পারে না (!)।

শিশুটি ডাক্তারের প্রথম স্বামীর ঔরসজাত।

৩৪ বছর বয়স্ক ডাক্তারের বাবা তাঁর কন্যা অপহৃত হয়েছে বলে মামলা করেছিলেন। পুলিশ ২১ মাস পরে তাদের উদ্ধার তথা আটক করেছে। ডাক্তারের প্রথম স্বামী কোনো মামলা করেননি।  


বিকাশ প্রতারণার টাকা উদ্ধার করাই তার নেশা!

বাসে ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার কথা স্বীকার করল হেলপার


খবরেই বলা হয়, আদালতে ডাক্তার বলেছেন, তিনি স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে ঘর করছেন, অপহৃত হননি।

আদালত তাঁকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেন। কিন্তু নরসুন্দর স্বামীটি অপহরণ মামলায় জেলহাজতে আছেন।
 
খবরটিতে অবশ্য পরিস্কার করা হয়নি যে ডাক্তার প্রথম স্বামীকে আইনিভাবে তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন কি-না। তবে প্রশ্ন উঠেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে যে, তিনি স্বেচ্ছায় চলে গেলে অপহরণ মামলা হয় কি-না। উক্ত পুলিশ সুপার নারী-শিশুসহ তিনজনকে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির করিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন কি-না এবং আদালতের নির্দেশনাও অমান্য করেছেন কি-না।

যা হতে পারতো একটি পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা বা পারিবারিক মামলা তা ফৌজদারি মামলায় ফেলে সুপার অতিতৎপরতা কেন, কিভাবে করলেন? এই প্রক্রিয়া কি আইনসম্মত হয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাব মেলেনি। এ-ধরনের অনেক প্রশ্নের জবাব ইদানীং মিলছে না।

২৮শে ডিসেম্বর ভারতীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়, এলাহাবাদ হাইকোর্ট একটি রায়ে বলেছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি স্বামীর সঙ্গে থাকতে চান, নিজের ইচ্ছায় জীবন কাটাতে চান, তবে সেই স্বাধীনতা তাঁর রয়েছে। রায়টি এসেছে এক মুসলিম তরুণের বিরুদ্ধে হিন্দু তরুণীকে অপহরণের অভিযোগে মামলা থেকে। সালমন বিয়ে করেন শিখাকে। শিখার পরিবার অপহরণের মামলা করে।

ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শিখাকে শিশু কল্যাণ কমিটির জিম্মায় দেন। সেখান থেকে বাবা-মা তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। সালমন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেখানে শিখা শিক্ষাগত সার্টিফিকেট দাখিল করে নিজের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার প্রমাণ দেন এবং বলেন যে তিনি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন এবং তাঁকে জোর করে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকেও তিরস্কার করেন।

এমন ভিন্ন ধর্মের তরুণ-তরুণীর প্রেমের গল্প অনেক আছে। হয়তো পরিবার কষ্ট পায়। তবে জীবন বেছে নেওয়ার প্রাপ্তবয়স্কদের অধিকার আইনে স্বীকৃত ও তা মেনে নিতে হয়। সম্প্রতি ভারতে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে বিয়ের নামে ধর্মান্তরকরণ প্রতিরোধী আইন তৈরির হিড়িক পড়েছে।

উত্তরপ্রদেশে সে আইন হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, কর্নাটকে তোরজোড় চলছে। আরএসএস-হিন্দুত্ববাদীরা হিন্দু মেয়ের সঙ্গে মুসলিম ছেলের প্রেম-বিয়ে দেখলেই তাকে "লভ জিহাদ" নাম দিয়ে তা ঠেকানোর জন্যে হামলে পড়ছে। এমন সময়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়টি আলোচিত হচ্ছে।

ভারতীয় মিডিয়ার আজকের (২৯শে ডিসেম্বর) খবর অনুসারে নোবেলবিজয়ী অমর্ত্য সেন ওই আইনের বিরোধিতা করে বলেছেন, এটা মানুষের স্বাধীনতার বিরোধী ও ভারতের সংবিধান-বিরোধী। যে-কোনো ধর্ম বেছে নেওয়া ও যে-কোনো ধর্মের মানুষকে বিয়ে করার অধিকার মানুষের আছে।

তিনি বলেন, ভারতে সম্রাট আকবরের সময়ই এই নিয়ম চালু হয়েছে। অমর্ত্য সেন রসিকতা করে বলেন, 'লভ' বা প্রেমের মধ্যে 'জিহাদ' থাকতে পারে না।

নিউজ টোয়েন্টিফোর / কামরুল