মাদারীপুরে জাল সনদে গ্রাম পুলিশ নিয়োগের অভিযোগ!

মাদারীপুরে জাল সনদে গ্রাম পুলিশ নিয়োগের অভিযোগ!

মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় ভূয়া বা জাল সনদ ব্যবহার করে গ্রাম পুলিশ (মহাল্লাাদার) নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সদর উপজেলায় ১২জন গ্রাম পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে এ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। জালিয়াতির বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জাল কাগজপত্রে তাদেরকে

নিয়োগ দেওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস গত ২১ জুন উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১২জন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ প্রদান করেন। যার স্মারক নং-  .৪১.৫৪৫৪.০০০.০৫.০৩ ৮.২০২০-২২২, তারিখ-২১ জুন ২০২০। তবে এরা ভূয়া বা জালসনদ ব্যবহারের মাধ্যমে আবেদন করে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে সরকারি সেবালয়ের সেবা বন্ধ দিনভর, বিকেলে স্বাভাবিক

বড়াইগ্রামে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ভলিবল টুর্নামেন্ট

ভোটার তালিকা অনুযায় এদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ভূয়া জন্ম তারিখ ব্যবহারের সত্যতা পাওয়া গেছে।

যাদের বিরুদ্ধে জাল সনদ ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে মস্তফাপুর ইউনিয়নের আবুল কাসেম মাতুব্বরের ছেলে মো. জুয়েল মাতুব্বর ওরফে মো. জুয়েল হোসেন মাতুব্বর, ছিলারচর ইউনিয়নের ফজলুল হক হাওলাদারের ছেলে মিলন হাওলাদার, দুধখালী ইউনিয়নের আ. মান্নান খানের ছেলে ফেরদাউস খান জন্মসনদসহ অন্যান্য সনদ জালিয়াতি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, মস্তফাপুর ইউনিয়নের জুয়েল মাতুব্বর বড় অংকের টাকার বিনিময়ে মস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এস এম আনিসুর রহমানের সহযোগিতায় ও যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে জাল/ভূয়া নাগরিক সনদ, জন্ম সনদ ও শিক্ষাগত সনদ ব্যবহার করে চাকরির জন্য আবেদনপত্র দাখিল করে এবং নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। ভোটার নিবন্ধন তালিকা অনুযায়ি তার নাম মো. জুয়েল হোসেনমাতুব্বর এবং জন্ম তারিখ ১৭ অক্টোবর ১৯৮৫, কিন্তু আবেদনের শেষ সময়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০। এই পদে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারিত ছিল ৩০বছর এবং আবেদনপত্রে তার নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে মো. জুয়েল মাতুব্বর।

আবেদন পত্রের সাথে সে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার সাটিফিকেট জমা দিলেও উক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র হিসেবে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হলে সে তার জন্ম তারিখ পরিবর্তনের জন্য ইউপি সচিব এস এম আনিসুর রহমানের যোগসাজশে নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয় বলেও অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েক জনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মো. জুয়েল হোসেন মাতুব্বর ছাড়াও আবেদনকালীন সময়ে ছিলারচর ইউনিয়নের ফজলুল হক হাওলাদারের ছেলে মিলন হাওলাদারের ৩৫ বছর ৫মাস। দুধখালী ইউনিয়নের আ. মান্নান খানের ছেলে ফেরদাউস খানের বয়স ৩৭ বছর। এছাড়া সদর উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতে নিয়োগকৃতদের ক্ষেত্রেও অনুরূপ জালিয়াতি হয়ে থাকতে পারে বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ঠ ইউপি’র চেয়ারম্যান ও সচিবের সহযোগিতায় বা যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে জাল/ভূয়া নাগরিক সনদ, জন্ম সনদ ও শিক্ষাগত সনদ ব্যবহার করে নিয়োগ লাভ করেছে।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৫ সালের পর থেকে নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রাম পুলিশ বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী মূল সনদের পরিবর্তে নিয়োগকৃতদের অনেকেই জাল বা ভূয়া সনদের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

ইউপি সচিব আনিসুর রহমান দাবি করেন নিয়োগ প্রদান করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। নিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের কোন হাত নেই। এখানে আমাদের ঘুষ গ্রহণ ও অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, অভিযোগটি পেয়ে বিষয়টি তদন্তের জন্য স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগটির তদন্ত চলছে।

অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক আজহারুল ইসলাম বলেন, নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে কয়েকজনের অনিয়মের বিষয়ে শুনেছি। সদর উপজেলার ইউএনও মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস কয়েকজনের বয়সের ক্ষেত্রে অনিয়ম পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে অভিযোগের ফাইলটি সাধারণ শাখা থেকে আমার দপ্তরে এখনও পৌঁছায়নি।

news24bd.tv তৌহিদ