সবাইকে চায়ের কাপে শুভ সকাল

সবাইকে চায়ের কাপে শুভ সকাল

শরিফুল হাসান

বাংলাদেশের মানুষ প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি কাপ চা খায়। অবশ্য,খাবেই বা না কেন? চা উৎপাদনে যে বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর শীর্ষ ১০ দেশের একটি। গত বছর সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার কেনাবেচা হয়েছে চা–শিল্পে। সুখবরই বটে।

  

চা নিয়ে প্রথম আলোর মিলাদ ভাইয়ের লেখাগুলো আমি পড়ি। গত কয়েক বছরের নানা লেখা থেকে জানতে পেরেছি, পরিস্থিতি কিন্তু একযুগ আগেও এমন অনুকূল ছিল না। ‌ বরং উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বাড়ায় আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছিল চা–শিল্প। চাহিদা মেটাতে ২০১০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে আমদানিও শুরু হয়।

চা আমদানিনির্ভর হয়ে যাবে কি না, এমন শঙ্কাও ছিল।  

তবে সব শঙ্কা দূর করে  চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেড়েছে। শুধু তা–ই নয়, এই অঞ্চলে ১৬৬ বছরের চা চাষের ইতিহাসে গত বছর উৎপাদনেও রেকর্ড হয়েছে। অবশ্য করোনার কারণে এবার উৎপাদন কিছুটা কমেছে। ‌ 

আমি সবসময়ই বলি, কার্যকর নীতি একটা শিল্পের চেহারা পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। ‌ এর বড় প্রমাণ বাংলাদেশের চা শিল্প। চা বোর্ড ও বাগানমালিকরা বলছেন, উৎপাদনে রেকর্ড সাফল্যের নেপথ্য কারণ, গত এক দশকে সরকার ও বাগানমালিকদের নেওয়া নানামুখী পদক্ষেপ।  

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন,২০০৯ সালে চা–শিল্পের উন্নয়নের জন্য নেওয়া কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চা চাষের আওতা বাড়ানো হয়। চা চাষের নতুন এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠে উত্তরাঞ্চলে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর। পাশাপাশি পার্বত্য জেলা বান্দরবানে চা চাষ শুরু হয়। পরিত্যক্ত অনেক বাগান চা চাষের আওতায় আসে। কয়েক বছর ভালো দাম পাওয়ায় বাগানমালিকেরাও নতুন নতুন বিনিয়োগ শুরু করেন। বাগানে প্রযুক্তিগত ব্যবহারও বেড়েছে।  
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ঘনিষ্ঠ এক বড় ভাই তাকে নানা কারণে যাকে আমি পছন্দ করি। পঞ্চগড়ে আমি ছিলাম কয়েকদিন। তিনি আমাকে বলেছেন একটা চা বদলে দিয়েছে পঞ্চগড়ের পুরো অর্থনীতি। পঞ্চগড়ের লোকজন নিজের বাড়ির সামান্য খালি জায়গাতে এখন চা চাষ করে। রাস্তার দু'ধারে চা বাগান। চা এখানকার মানুষের স্বপ্ন বদলে দিয়েছে। শুধু পঞ্চগড় নয় পুরো বাংলাদেশে এখন চা উৎপাদনে দারুণ করছে। তবে সেই তুলনায় চা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, তাদের সন্তানদের লেখাপড়া এসব বিষয়ে যথেষ্ঠ উন্নতির সুযোগ আছে বলে মনে করি।
আমাদের চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া চা-বাগানের মাধ্যমে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে চা বোর্ডের নিবন্ধিত ১৬৬টি চা–বাগান রয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯১টি, হবিগঞ্জে ২৫টি, সিলেটে ১৯টি, চট্টগ্রামে ২২ টি, পঞ্চগড়ে ৭টি, রাঙামাটিতে ২টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১টি চা–বাগান রয়েছে। এসব বাগানে মোট জমির পরিমাণ ২ লাখ ৭৯ হাজার ৪৩৯ একর।  

বাংলাদেশের যে কোনো অর্জনের কথা বলতে আমার সবসময় ভালো লাগে। আজকের সকালটা হোক চায়ের। দেড়শ বছরের পুরনো এক চা বাগানে দাঁড়িয়ে চা খেতে খেতে সবাইকে চায়ের কাপে শুভ সকাল। শুভ সকাল বাংলাদেশ।

শরিফুল হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী

news24bd.tv তৌহিদ