জীবনের সুধাপাত্র আমি ওষ্ঠ পর্যন্ত নিয়েছি, পান করিনি

জীবনের সুধাপাত্র আমি ওষ্ঠ পর্যন্ত নিয়েছি, পান করিনি

ইশরাত জাহান ঊর্মি

জীবনের সবচে বড় ক্ষতিটা ইনফ্যাক্ট আমার হয়ে গেছে ২০১৯-এ। কোনও একটা সংখ্যা এতো মৃত্যুগন্ধী হয়ে উঠতে পারে তা আমার ধারণায় ছিল না। ২০১৯ আমার কাছে মৃত্যুগন্ধী একটা সংখ্যা। ওই বছরটিকে আমি মৃত্যু অব্দী মনে রাখবো।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি মৃত্যুর শোক ওভারকাম করতে পারিনি আসলে করতে চাইনি। আমার মা আক্ষেপ আর অপেক্ষার অতীত হয়ে গেছিলেন। আমি ওই বছর থেকে জগতের তাবৎ ছুটে চলা, তাবৎ হেসে ওঠা আর বেঁচে থাকার দিকে তাকিয়ে (কখনও তাতে অংশ নিয়েও) মুচকী হেসেছি। জীবনের সুধাপাত্র আমি ওষ্ঠ পর্যন্ত নিয়েছি, পান করিনি।
 

কিন্তু ২০২০ অনেক কিছুকে অতিক্রম করে গেছে। ফাকিং টুয়েন্টি টুয়েন্টি।   চারিদিকে চাহি দ্যাখো হৃদয়ও প্রসারি, ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি...এতো এতো অকারন অনির্বচনীয় মৃত্যু এর আগে কে কবে দেখেছে! লকডাউনের প্রত্যেকটা দিন পায়ে পায়ে অদৃশ্য ঘাতক নিয়ে কাজ করতাম, একেকটা সপ্তাহ শেষ হতো আর মনে হতো, বেঁচে গেলাম আরো একটা সপ্তাহ...ঘাড়ের কাছে অদৃশ্য ভোজালি হাতে দাঁড়িয়ে ছিল যমদূত।

২০১৬ সালে এসে হঠাৎ আমার মনে হয়েছিল, অনেক বেঁচেছি অন্যের জন্য এবার থেকে নিজের জন্য বাঁচবো। দুর্দান্ত বেঁচেছি তিনটা বছর। সব উড়িয়ে ঘুরিয়ে ঝড়ের বেগে। "আমি নইতো চন্দ্র নইতো সূর্য্য আমার তাই বলে কি কম আনন্দ? আমি আপন জীবন পূর্ণ করে আপন আলো জ্বেলেছি..."

কিন্তু ২০১৯ এর ৯ই মার্চের পর থেকে নিজের জন্য বাঁচার এই প্রক্রিয়াটিও কেমন সংকোচের লেগেছে। মনে হয়েছে এইটা স্বার্থপরতা। মৃত্যু এক অপার বিস্ময় নিয়ে হাজির হয়েছিল আমার সামনে। এবছরও তাই। মৃত্যু এক অপার বিস্ময়! 
তবে এবছরের শেষে এসে আবার আমি হঠাৎ খুব প্রশান্তি অনুভব করছি। কেন যেন খুব ভালো আছি। এতো ভালো যে রীতিমতো ভয় করছে যে কেউ এই সুখে নজর দ্যায় কি না! যাদের যাদের প্রতি  আমার দাবী ছিল বলে মনে করতাম তার সমস্ত থেকে, তাদের সমস্ত থেকে  উইথড্র করেছি। আমিও সকলের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করেছি। কারুর কোনও প্রত্যাশার চাপ আর আমি নেবো না। না সংসারের অথবা সংসারের বাইরের। পরিস্কার জানিয়েছি সকলকে। হইতে পারে যে এটাই আমার মৃত্যুর দিকে হাঁটার প্রস্তুতির শুরু। নিজের পেশাগত কাজটুকু নিয়ে দারুন বাঁচতেছি।  

ফেসবুকে "আপু আপনাকে দেখে শক্তি পাই" টাইপ আশা যারা আমার প্রতি রাখতেন  তাদের প্রতি স্যরি টু সে যে একধরনের প্রচ্ছন্ন বিরক্তি ছিল। কিন্তু এইটা এখন বুঝতে পারি যে কিছু শক্তিমত্তা আছে আমার যা অন্যের কাজে লাগে। আই লাভ অল অব ইউ গার্লস। দিক হারিয়েছি বলেই চারদিক আমার। আমি আপনাদের প্রত্যাশার চাপ নিচ্ছি না কিন্তু ভালোবাসাটুকু নিচ্ছি।
চার্লস বুকোস্কির একটা কবিতা আছে, একটু মোটিভেশন টাইপেরই কিন্তু কিছু লাইন খুব পছন্দের, 
" There is a way out. 
There is a light somewhere. It may not be much light, But it beats the darkness,
Be on watch, the God will offer you chances. 
Know them, take them. 
You cant beat death. 
But you can beat death in life sometimes 
And more often you learn to do it, 
The more light there will be, 
Your life is your life, live it while you have it ..."
আমিও বাঁচতেছি। মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে দারুন বেঁচে আছি।                                            
হ্যাপি নিউ ইয়ার। আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর মানসিক স্বাস্থ্য কামনা করছি। চিয়ার্স!

ইশরাত জাহান উর্মি, সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক।

(মত ভিন্ন মত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv তৌহিদ