আজ ২০২০ এর শেষ দিন। এর মধ্যে একজন বলছিলেন, তোমার জীবন নিয়ে একটা নাটক লিখো, উত্তর দিয়েছি ২৪ পর্বের ধারাবাহিক হবে তাহলে বা মেগা সিরিয়াল। হঠাৎ মনে হলো ৮ মাস ধরে ভোর ৬ টায় ঘুমাতে যাওয়া আমি আজ সময় মতো ঘুমিয়ে উঠে কি করব, বরং সকালটা সেলিব্রেট করি কিছু লিখে। বছরখানা তো এবার সবার জন্যেই খুব ভালো ছিল না।
২০২০ এর শুধু মার্চ মাসেই আমার শো ছিল ১৮টার উপর, আগে পরের কথা নাই বলি। সব ক্যানসেল হয়েছে।
শুধু অসুখের জার্নি নিয়ে আরেকদিন লিখব। তবে শারীরিক না, ভীষণ শক্ত এই আমি ভেঙেছি মানসিক ভাবেও। এত বেশি হাসপাতালে যেতাম বলে পরিবারের মানুষের সেফটির কথা ভেবে আমি করোনা না হয়েও নিজেকে এক ঘরে করে ফেলেছিলাম। দূরে সরিয়ে ফেলেছিলাম সবাইকেই। ক্ষমা চেয়েছি অনেকের কাছেই, মৃত্যু ভয় আমাকে খাবলে খাচ্ছিল। এখনও প্রতিদিনই ভালো থাকার যুদ্ধ। তবে আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি আগের চেয়ে, কাজ তখনও করেছি, এখনও করছি।
আমার অসুস্থতার যুদ্ধের সময়টা আমি হারিয়েছি অনেক, যা বুঝেছি চিনেছি, উপলব্ধি করেছি তার চেয়েও বেশি। আমার পারিবারিক পরিচয়টা বিশাল, রাজকীয় বললেও ভুল হবে না। শো অফ নেই, কিন্তু এটাই সত্যি। আমার নিজস্ব প্রাপ্তিকে নিন্দুকও ছোট করে দেখার অবকাশ সৃষ্টিকর্তা রাখেননি। কিন্তু আমি কি শুধুই আমার পরিবারের ভারি টাইটেলগুলোর উত্তরসূরী মাত্র? আমি শুধু জনগণের? আমি কি শুধুই একজন মা? আমার জীবন কি শুধুই জবাবদিহি , দায়িত্ব আর স্ট্যাটাসের আবর্তে ঘূর্ণায়মান? এত কিছুর ভিড়ে 'আমি' কোথায়? অনেক ভেবে বুঝেছি, আমাকে আমি অনেক আগেই হারিয়েছি। অপ্রয়োজনীয় বিসর্জন দিয়েছি অনেক, কোন দরকারই ছিলো না সেগুলোর।
পরিবার কি বলবে, সমাজ কি বলবে, কলিগরা হাসবে, বাচ্চারা কি করবে, মিডিয়া কি লিখবে, এইসব প্রশ্নের তারকাঁটার বেড়াজালে আমরা বেশিরভাগ মেয়ে বা মেয়ে শিল্পীরা পাগলপ্রায় হয়ে থাকি। সব ব্যালেন্সের খেলায় একসময় নিজেরাই মানসিক ব্যালেন্স হারাই। সুখে থাকার অভিনয়ের প্রতিযোগিতায় মেতে থাকি। আসলে কতজন সুখে আছেন? কতজন ঘুমানোর আগে একটা দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে চোখটা বন্ধ করেন না? কতজন আসলে ঘুমান ?
নানান পুরস্কার এ আমার ঘর ভরে আছে। সব, সব পেয়েছি। বিশেষ করে ২০১৯, ২০১৮, ২০১৭ ছিলো পুরস্কারের বছর। আজীবনের শো বা কনসার্ট এর সংখ্যা বলতে চাই না। তবে না বলা সংখ্যাও কিন্ত একটা রেকর্ড। মেয়ে দুটো মাশাআল্লাহ অনেক বুদ্ধিমতী, যথেষ্ট বাস্তববাদী। ওদের কাছে আমি বা আমার বংশ পরিচয় কোন ম্যাটার করে না। ওরা আমাদের নিয়ে গর্ব করে, তবে এটা ওদের কাছে কিছুই না। ওরা জীবনকে অন্য ভাবে চিনেছে। ওরা ওদের জন্য বাঁচবে, ওদের মতো চলবে। কিছু আরোপ করে দেয়া অসম্ভব, তাই বলে ওরা বেয়াদব না। আমি সেভাবেই ওদের বাঁচতে শিখিয়েছি। জীবন তো একটাই। দোষ হোক ভুল হোক ভালো হোক যাই হোক, মেয়েদের আমি একা মানুষ করেছি, তাই ওদের সবটাই আমার। এখানে জবাবদিহির কোন অবকাশই নাই।
স্বামীর 'গোপন অঙ্গ' কেটে বিচ্ছিন্ন করল স্ত্রী!
টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে নববধূ উধাও
২০২০ এ আমি হারিয়েছি অনেক কিছু। যা হারিয়েছি তা ফিরে পাবার নয়। হারিয়েছি মানুষ, হারিয়েছি বিশ্বাস, হারিয়েছি অনেক আনন্দ। যা বুঝেছি, শিখেছি বা দেখেছি তা না হলেও হতো। আমার উপলব্ধি এমনিতেও গভীর, তা আরও গভীর হয়েছে। আমি বুঝেছি মানুষ চেনার কোন শেষ নাই আর শেখার কোন বিকল্প নাই।
আমি বুঝেছি যারা প্রবল অনুভূতিপ্রবণ, তারা একা। যারা স্বার্থপর, লোভী, অনুভূতিহীন, তারা সুখী, যদিও সেই সুখটাও ধার করা। আমি বুঝেছি আমি আমার জন্য বাঁচতে চাই, আমার মতো করে। হয়তো পারব বা পারবো না। কিন্তু এটাই এই বয়সে এই কঠিন বছরের শেষে এসে আমার চাওয়া।
২০২০ এ আমি সংযমী হয়েছি অনেকটাই। হালকাভাবে বললে মনে হচ্ছে সামনের বছরগুলোতে বেঁচে থাকলে বড়লোক হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
২০২১ থেকে আমি করোনা মুক্ত পৃথিবী চাই। সবার ভালোটাই চাই সব সময়ের মতো। আমি আমার মতই থাকতে চাই, একটু দূরে, একটু একা। বরাবরের মত কাজ করে যেতে চাই, মানুষের পাশে থাকতে চাই। আমি মিথ্যা ঘৃণা করি, তাই মিথ্যা বলতেও চাই না, শুনতেও চাই না। সত্যের একটা শক্তি আছে যা আমরা ভুলে যাই।
কারো মনে হতে পারে, ২০২০ শুধু খারাপই ছিলো! না, বললাম তো, এটা ছিলো শেখার বছর, উপলব্ধির বছর। বন্ধু পেয়েছি, বন্ধু চিনেছি। এভাবে লিখতে পারাটাও আমার জন্যে এক রকম মুক্তি। এই মুক্তি আমার ভীষণ প্রয়োজন ...
সবার নতুন বছর ভালো হোক। পরিবার পরিজন ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকুক সবার। জীবন আসে জানান দিয়ে, বেশিরভাগ মৃত্যু অকস্মাৎ হয়। পরিবারের কাছে আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। আপনাদের কাছেও ক্ষমা চাই। একজন মুসলিম হিসেবে এটা আমাদের করণীয়। ক্ষমা চাই আল্লাহর কাছে। সব সমাধান তাঁর কাছে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমিও দোয়া করি সকলের জন্য, বিশ্ববাসীর জন্য। আমার যে শত্রু, সেও ভালো থাক, তাদের যেন হেদায়েত হয়।
এবার না হয় নতুন বছরে আমরা নতুন করে মানুষ হতে চেষ্টা করবো। ভালো থাকা হোক, শুধুই ভালোবাসা হোক, বছর শুরু হোক সত্যের হাত ধরে ....
Happy new year!
ps: ছবিটা জুন জুলাই এর। তানভীর খান ভাই এর প্রজেক্ট ছিল কোনো। হাত লুকিয়ে শুটিং করেছি ১০৩ জ্বর নিয়ে । প্রতিদিন দুই বেলা ইন্টারভেনাস ইনজেকশন চলছিল। সবাইকে সেই সময়টাতে ইচ্ছা করেই নানান অজুহাতে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম, জানি না কেন!
দয়া করে কেউ ডাক্তারি কমেন্ট করবেন না। এটা না হয় আরেকদিন হবে। আজ হোক happy new year
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
news24bd.tv / কামরুল