তিনি মন খারাপ করবে তবুও আমি তর্ক করে যাব

তিনি মন খারাপ করবে তবুও আমি তর্ক করে যাব

অনলাইন ডেস্ক

আমার জীবনের গত ১৭ বছরে জড়িয়ে আছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। প্রথম আলো, বিডিনিউজ আর ব্র্যাক। এই তিন প্রতিষ্ঠানে আমার আমার তিন সুপারভাইজারের নাম মতিউর রহমান, জাহিদ নেওয়াজ খান এবং আসিফ সালেহ। তিনজনের মধ্যে একটা দারুণ মিল আছে।

সেই মিল বলতেই লিখেছিলাম এই লেখা। আজ আবার বলছি।

শুরু করি প্রথম আলো দিয়ে। সেখানেই আমি জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় ছিলাম।

টানা ১২ বছর। ২০০৫ সালে যখন প্রথম আলোয় যোগ দেই আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বয়সে তখন প্রথম আলোর সবচেয়ে তরুণ কর্মীদের একজন আমি।  

প্রথম আলোয় আমাদের সম্পাদক মতি ভাই যিনি তার সার জীবনে আমার মতো হাজার হাজার তরুণকে দেখেছেন। কিন্তু খুবই অবাক করার বিষয়, মতি ভাই তখন থেকে যে পরিমান তর্কের সুযোগ আমাকে দিয়েছেন সেটা অসাধারণ। মিটিংয়ে ঢোকার আগে আমার চীফ রিপোর্টাররা মেসেজ দিতেন মতি ভাইকে আজকে রাগাইয়েন না। আমি তবুও ভিন্নমত জানাতাম। মতি ভাই শুনতেন। যেভাবে মতি ভাই আমাকে আদর করেছেন, কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন সেটা আমার জীবনটাকে আনন্দময় করে তুলেছিল।

আজ বলতে দ্বিধা নেই নেই, দিন নেই, রাত নাই, আমি প্রথম আলোতে কাজ করেছি। দিনের ১৮ থেকে ২০ ঘন্টাও। অসাধারণ সব মানুষজন। আমাদের সবার নেতা মতি ভাই। মানুষটার সবকিছু শতভাগ ভালো সেটা আমি বলবো না, কিন্তু কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আপনার দেখা সেরা ব্যবস্থাপককে কী যিনি এক হাতে সব সামলাতে পারেন আমি চোখ বন্ধ করে বলবো মতি ভাই।  

মতি ভাইয়ের যে সিদ্ধান্ত আমাকে সবচেয়ে বেশি আহত করেছে সেটা হল এ বছর কোভিডের সময় প্রথম আলোর অনেকের চাকরি যাওয়া। এ নিয়ে লিখেছি। আমি শুনছি মতি ভাই তাতে বেশ মন খারাপ করেছে। তবে মতি ভাইয়ের সাথে দেখা হলেও এই নিয়ে আমি তর্ক করব। তিনি মন খারাপ করবে তবুও আমি তর্ক করে যাব। কারণ আমার ধারণা সম্ভবত এই বাংলাদেশেরও সেরা সম্পাদক তিনি। তরুণদের তিনি স্বপ্ন দেখাতে পারেন, উৎসাহ দিতে পারেন, দিতে পারেন উদ্দীপনা। এখন বিশ্বাস করি তিনি তরুণদের সাথে তর্কও করতে পারেন।

এতটা ঘটনা বলি। একদিন সারাদিন কাজ করে রাত ২ টায় বাসায় যাবো। মতি ভাই পিঠে আলতো চাপড় মেরে বলবেন, এই নিউজটা করে যাও। আমি ভোর পর্যন্ত কাজ করে শেষ করে তারপর সেদিন বাসায় গিয়েছিলাম। মতি ভাইয়ের সাথে কথা বলে আপনি নতুন করে শক্তি পাবেন। আমি জানি না একটু অভিজ্ঞ বা বয়সী মানুষকে তিনি কতোটা স্বপ্ন দেখাতে পারেন, কিন্তু তরুণদের তিনি দারুণ স্বপ্ন দেখাতে পারেন।  

মতি ভাইয়ের কার্যকর ফেসবুক নেই বলে তাকে ট্যাগ করা গেল না। তাকে নিয়ে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা বলতে পারবো। আজ আর না বলি। বরং শুনুন M Zahid Newaz Khan ভাইয়ের কথা। আমাদের কাছে তিনি পরিচিত জুয়েল ভাই নামে।

২০০২ সালে অবজারভার দিয়ে আমার সাংবাদিকতার শুরু। ২০০৪ সালে ছিলাম বাংলাবাজারে। নতুন আর বড় ধরনের গণমাধ্যমে আমার কাজ শুরু বিডিনিউজ দিয়ে। সেখানে পেয়েছিলাম জুয়েল ভাইকে। তিনি তখন আমাদের চীফ রিপোর্টার।

জুয়েল ভাই আগে ইউএনবিতে ছিলেন। বিডিনিউজ ছেড়ে একটি রেডিওতে যোগ দেন। কাজ করেছেন ভোরের কাগজে। পরে চ্যানেল আইতে যোগ দেন বার্তা সম্পাদক হিসেবে। সেখান থেকে জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক হয়ে তিনি এখন চ্যানেল আই অনলাইনের সম্পাদক। জুয়েল ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুণ তিনি দারুণ পেশাদার সাংবাদিক। তাঁর পেশাদারিত্বের একটা উদাহরণ দেই।

যেহেতু তিনি বিডিনিউজে আমার চীফ রিপোর্টার ছিলেন আমার সিভিতে বিডিনিউজের সুপারভাইজর হিসেবে তার নাম দেওয়া। ব্র্যাক নতুন কর্মীকে যোগদাণের আগে তাঁর বিদায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর রেফারেন্স চেক করে। যেহেতু সিভিতে তার নাম ছিল কাজেই ব্র্যাকের মানবসম্পদ বিভাগ থেকে তাঁর সাথে যোগােযাগ করে।

প্রথম আলো ছেড়ে ব্র্যাকে যেদিন যোগ দেব জুয়েল ভাইকে জানালাম তিনি বললেন হুমম আমি জানি। ওরা আমাকে রেফারেন্স চেক করার জন্য ফোন দিয়েছিল। পরে ব্র্যাকে এসে জেনেছি আমি সাংবাদিকতা ছেড়ে ব্র্যাকে যোগ দেবো শুনে জুয়েল ভাই বলেছিলেন, ব্র্যাক খুব সৌভাগ্যবান তারা শরিফুল হাসানকে পাচ্ছে। আর বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জন্য খুব বেদনার যে ওর মতো একটা ছেলেকে আমরা সাংবাদিকতায় রাখতে পারলাম না।

সাবেক একজন বস যখন তার সহকর্মীকে নিয়ে এমন মূল্যায়ন করেন সেটা যে কতো বড় পাওনা সেটা বলে বোঝানো যাবে না। যে মানুষটা এমন রেফারেন্স দিয়েেছেন তিনি আমাকে একবারও জানাননি যে ব্র্যাক থেকে তার সাথে যোগাযাগ করেছে। এই তার পেশাদারিত্ব।

আমার দেখা গুটিকয়েক সাংবাদিকের একজন জুয়েল ভাই যিনি একইসাথে ইংরেজি এবং বাংলা দুটোতেই পারদর্শী। দুই ভাষাতেই কাজ করেছেন। আমার চেনা একমাত্র সাংবাদিক তিনি যিনি পত্রিকা, অনলাইন, বার্তা সংস্থা, রেডিও, টেলিভশন সব মাধ্যমে সাংবাদিকতা করেছেন। রিপোর্টিং ও সম্পাদনা দুটোতেই যিনি দক্ষ। সবকিছু ছাড়িয়ে তিনি একজন দারুণ ভালো মানুষ। এই ঢাকা শহরে যে কয়কজন মানুষকে আমার আপান মনে হয় জুয়েল ভাই তার একজন। মনে হয় আপন বড় ভাই। মতি ভাই, মাহফুজ আনামদের পরে এই বাংলাদেশে ভবিষ্যতের যে দুজন মানুষকে আমি যোগ্য সম্পাদক হিসেবে কল্পনা করি জুয়েল ভাই তার একজন।

এবার আসি আমার বর্তমান কর্মস্থলে। আমি পড়েছি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কাজ করেছি বিডিনিউজে যেটি সেই সময় বাংলাদেশের সেরা অনলাইন ছিল। এরপর প্রথম আলো যেটি এই দেশের সেরা পত্রিকা।  

প্রথম আলো ছেড়ে এখন যেখানে কাজ করছি সেই ব্র্যাক পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থা। আমার দেখা বাংলাদেশে সবচেয়ে সুন্দর প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন গত চার বছরে ব্র্যাকের কোন জিনিসটি আপনার ভাল লেগেছে আমি বলব এই প্রাতিষ্ঠানিকরণ। বাংলাদেশের ব্যক্তিকেন্দ্রিক বহুকিছু আছে কিন্তু প্রতিষ্ঠান বললে আমি বলবো ব্র্যাক। এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কোন না কোন সময় কিছুদিনের জন্য হলেও ব্রাকে কাজ করা উচিত। সেই ব্র্যাকের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক Asif Saleh ভাই।

২০১৭ সালে ব্র্যাকে আমি যখন কাজ শুরু করি তখন আসিফ ভাই ছিলেন ব্র্যাকের সিনিয়র ডিরেক্টর ছিলেন।   কাজের পরিধি অনেক বড় বলে কখনো কখনো কোন কোন মাসে হয়তো মাসের কোন একদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য তাকে পেতাম। কিন্তু সেই সময়টুকু হয়ে উঠতো ভীষণ উদ্দীপনার আনন্দের।  
দীর্ঘ দেড় যুগ সাংবাদিকতায় ডুবে থাকা এই আমি আসিফ ভাইয়ের সাথে কাজ না করলে হয়তো কখনো হয়তো জানতে চেষ্টা করতাম না, যে সাংবাদিকতার বাইরেও কাজ করার আরেকটা পৃথিবী আছে। জানতে পারতাম না একজন বস কতোটা উদার হ‌তে পা‌রেন! কর্মীকে কতোটা স্বাধীনতা দিতে পারেন।

একজন মানুষ কতোটা ছুটতে পা‌রে তার প্রমাণ আসিফ ভাই। সকালে দেখবেন ঢাকার অফিসে, বিকেলে কক্সবাজারের মিটিংয়ে, পরদিন দেখবেন জাতিসংঘে ভাষণ দিচ্ছেন। নেতা হওয়ার সবচেয়ে বড় যে গুণ স্বপ্ন ও নেতৃত্ব সেটা তার মধ্যে বেশ প্রকট। ‌আমার দেখা অসাধারণ এক নেতা। আমি বিশ্বাস করি আবেদ ভাইয়ের পর তার হাত ধরে ব্র্যাক ও এই বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। তার সম্পর্কেও ঘন্টার পর ঘন্টা বলতে পারবো।
এবার আসি মূল পয়েন্টে। কেন এই তিনজন মানুষ সস্পর্কে আজকে এতো কথা বললাম? লিখেছি, 

কারণ, আমার গত ১৭ বছরের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে এই তিনজন মানুষ। তাদের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখছি। তাদের সাথে কাজ করছি।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এক জীবনে বস সুপারভাইজার হিসেবে পাওয়া এই তিনজন মানুষেরই জন্মদিন আজকে। না কাগজে-কলমে জন্মদিন নয় সত্যিকারের জন্মদিন। তার মানে আমার যারাই দীর্ঘদিনের বস ছিলেন তাদের সবার জন্মদিন ২ জানুয়ারি।  

আমি জানিনা কি করে এটা হলো। যাই হোক শুভ জন্মদিন আমার তিন বস মতি ভাই, জুয়েল ভাই আর আসিফ ভাই। আমি বলবো ভালো বস পাওয়া আসলেই সৌভাগ্যের, যিনি স্বপ্ন দেখাতে পারেন, যার সাথে কাজ করাটা আনন্দের। আমি সেই সৌভাগ্যের ভাগিদার এবং সেটা আপনাদের কারণে। আপনাদের জন্য তাই অনেক অনেক শুভ কামনা। আপনাদের হাত ধরে এগিয়ে যাক এই বাংলাদেশ। আপনাদের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। শুভ জন্মদিন।

শরিফুল হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী


নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করতে প্রেমিককে সাহায্য করল মা!

ফোন করলেই মিলবে ছাত্রলীগের ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স

মহাখালীতে ছুরিকাঘাতে কিশোর খুন, আহত ২

news24bd.tv / কামরুল